
শিশুর বিকাশে সব থেকে বেশি জরুরি খাওয়ার থেকে পুষ্টি গ্রহণ। অথচ সন্তানকে নিয়ে খেতে বসানোটাই রোজকার যুদ্ধ মা বাবার কাছে। স্কুলে যাওয়ার আগে হোক বা রাতে খাবার টেবিলে, চিৎকার জুড়ে দেয় বাচ্চা। স্কুলের টিফিন হামেশাই ফেরত আসে। এইরকম খাওয়ার প্রতি অনীহা থাকলে পুষ্টি পাবে কোথা থেকে?
অনেক মা বাবাই আছেন যারা খেতে বসে এই ঝক্কি এড়াতে বকাঝকা দিয়ে জোর করে খাওয়ানোর চেষ্টা করে। এই উপায় মাঝে মাঝে কাজে দিলেও এতে বাচ্চা আরও চিল চিৎকার জুড়ে দেয়। শরীর খারাপ করে, বমি করে এক সা। তাই জোর করে নয়, শিশুর পছন্দ-অপছন্দ বুঝে ধৈর্য ধরে তাকে খাওয়াতে হবে। কিছু কৌশল জানা থাকলে সমস্যার সমাধান হবে সহজেই।
শিশুরোগ চিকিৎসক প্রিয়ঙ্কর পাল বলছেন, শিশুকে কখনো জোর করে খাওয়াতে যাবেন না, এতে শিশুর খাওয়ার প্রতি আরও বেশি অনীহা তৈরি হয়। আসলে প্রত্যেকফি শিশুর হজমশক্তি ও খাওয়ার অভ্যাস একই নয়, বড়োদের মতো কয়েক ঘন্টা অন্তর অন্তর খাওয়ার অভ্যাসও নেই তাদের। মা বাবাকে এগুলি বুঝতে হবে। শিশুকে খাওয়াতে হবে পরিমিত ও সময় বুঝে। এই পরিমাণ ঠিক করতে হবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন।
শিশুর খাবারের কিছুটা বৈচিত্র আনা দরকার। একই স্বাদ ও গন্ধের খাবার রোজ খেতে চাইবে না শিশুরা, বদলে বদলে খেতে দিন। ভাত, ডাল, তরকারি রোজ খেতে না চাইলে চিকেন স্টু আর রুটি দিতে পারেন। রঙিন মরশুমি ফলের চাট, চিকেন ও সবজি দিয়ে স্যান্ডউইচ বা বার্গার বানিয়ে দিন। সবজি দিয়ে ডালিয়ার খিচুড়িও দিতে পারেন। আলাদা আলাদা খাবার দেখলে আগ্রহ বাড়বে বাচ্চার খাবার প্রতি।
অতিথিদের যেভাবে খাবার সাজিয়ে দেন আপনার শিশুকেও সেভাবে খাবার সাজিয়ে পরিবেশন করুন। অল্প পদ, অল্প খাবার তাই সাজিয়ে দিন থালায়। সব খাবার একসঙ্গে মেখে খাওয়াতে আসলে শিশুর খাবার দেখতেই ভালো লাগবে না, খেতে চাওয়া তো দূরের কথা। ফল বিভিন্ন আকারে ছোট ছোট টুকরো করে কেটে দিন। ভাত, ডাল, মাছ, সবজি থালায় সুন্দর করে সাজিয়ে দিন। রুটির ওপর সস বা টুকরো করে কেটে সবজি দিয়ে চোখ মুখ বানিয়ে দিন। বাচ্চার আগ্রহ বাড়বে খাওয়ার প্রতি।
আপনি নির্দিষ্ট কোন একটি ধরনের খাবার খেতে পছন্দ করেন মানেই আপনার সন্তানও সেটি খেতে পছন্দ করবে, এমনটা নয়। বরং শিশু কী খেতে ভালোবাসে সেটি দেখুন। প্রোটিন ও পুষ্টি বজায় রেখে খাবার খেলেই হবে। যেমন সন্তান ডিম খেতে না চাইলে তার পরিবর্তে কি ধরনের মাছ বা মাংস খেতে পছন্দ করবে, আপেলের বদলে অন্য কোন ফল সে খাবে, এসব জিজ্ঞেস করুন।
সন্তান খেতে ঝামেলা করে বলে অনেক মা বাবারাই আগে শিশুকে খাইয়ে নিয়ে পরে নিজেরা খান। এতে খাওয়ার চেয়ে টিভি বা ফোন দেখা, বা দুষ্টুমি করতেই আগ্রহ বেশি থাকবে শিশুর। বরং পরিবারের সাথে নিয়ে খাওয়াতে বসুন বাচ্চাকে। সবাইকে খেতে দেখলে সেও খেতে চাইবে এবং শিখবে। খেতে বসে টিভি বা ফোন দেখার অভ্যাস দূর হবে।
শিশু খেতে ঝামেলা করে, অনেকটা সময় নেয় বলে অভিভাবকরাই একসঙ্গে অনেকটা খাবার নিয়ে বসেন একেবারে খাওয়াবেন বলে। অথচ খাবার বেশিক্ষণ মেখে রাখলে তা থেকে জল কেটে স্বাদ নষ্ট হতে পারে। শিশু সেই খাবার খেতে চাইবে না। তাই অল্প অল্প পরিমাণে নানা রকমের খাওয়ার নিন থালা সাজিয়ে। অল্প ভাত, একটা রুটি, অল্প স্যালাড, সব্জি, মাছ বা মাংসের পদ ও দই - এইভাবে আলাদা আলাদা দিলে শিশু খাবার স্বাদও পাবে, ইচ্ছাও জাগবে।