
কুকুর, বিড়াল এসব পুষতে গেলে কিছুটা ঝক্কি সাথে জায়গাও একটু বেশি লাগে, অগত্যা অনেকেই পাখি পোষার কথা ভাবেন। খাঁচায় রেখে জল খাবার দিলেই বুঝি হয়। কিন্তু জানেন কি, খাঁচার পাখিরা আকাশে উড়ে বেড়ানো পাখিদের থেকেও সংবেদনশীল হয়। তাই বাড়িতে খাঁচাবন্দী পাখির বাড়তি যত্নেরও প্রয়োজন পড়ে। পাখির শারীরিক যত্নের পাশাপাশি মানসিক যত্নেরও প্রয়োজন, না হলে মন ও স্বাস্থ্যের দ্রুত অবনতি হতে পারে পাখির।
টিয়া, ময়না, তোতা, ম্যাকাও, লাভ বার্ডস - এসব রঙিন, মিষ্টি ডাকওয়ালা পাখি পোষার শখ অনেকেরই। "শখের দাম তো লাখ টাকা", তাই যত্ন সেরকমভাবেই নিতে হবে। আপনি প্রথম পাখি পুষলে আপনার আগে থেকে জেনে রাখা দরকার যে, কীভাবে খেয়াল রাখতে হবে তাদের।
কীভাবে রাখবেন পাখিকে?
পাখিকে খাঁচায় রাখার কথা ভাবলে, পাখি আকার আচরণ, প্রজাতি ও বয়স অনুযায়ী খাঁচার আকার নির্ধারণ করে কিনতে হবে। ছোট জায়গায় বন্দি হয়ে পাখা মেলতে না পারলে, পাখির মানসিক চাপ বাড়বে।
অন্ধকার, স্যাঁতসেঁতে কোনো জায়গায় পাখির খাঁচা রাখবেন না। মানুষের মতো পাখিরও মনে প্রভাব পড়ে এতে। তাই যেখানে ভালো বায়ু চলাচল করে, ভালো আলো পৌঁছয় সেখানে রাখুন। আবার দেখবেন, অতিরিক্ত রোদ, বৃষ্টি বা ঝড়ের ঠান্ডা হাওয়া এসে পাখির যেন অসুবিধে না করতে পারে।
সপ্তাহে অন্তত একবার পাখির সম্পূর্ণ খাঁচা ধুয়ে পরিষ্কার করে দিতে হবে। জল ও খাবারের পাত্র নিয়মিত পরিষ্কার করে জল খাবার ভরে দিন।
অন্যান্য প্রাণীদের মতো পাখিরাও স্নান করতে ভালোবাসে। স্নানের জন্য জল আলাদা রাখুন, তুলনামূলক বড় পাত্রে রাখুন। বদলে দিতে হবে নিয়ম করে।
পাখির ডায়েটে কী রাখবেন, কী নয়?
* যা খাওয়ানো যেতে পারে
যেকোনো পাখিই হোক না কেন, বাজারে পাওয়া যায় এমন বিভিন্ন ধরনের বীজ মিশিয়ে খাওয়াতে পারেন। এছাড়াও রঙিন টাটকা ফল, সবজি, যেমন- পাকা পেঁপে, আপেল, গাজর, শসা, বিট, কুমড়ো, পালং শাক, পাকা পেয়ারা, ইত্যাদি ছোট ছোট করে কেটে দিলেও পাখিরা খায়। এছাড়া সেদ্ধ ভুট্টা, ভেজানো ছোলা, অল্প পরিমাণে সেদ্ধ ভাতও দিতে পারেন, পাখিরা খাবে। আবার গরমে আমাদের মতো তাদেরও শরীর খারাপ হয়, ডাবের জল দিতে পারেন তখন।
* যা একেবারে খাওয়াবেন না
আপনার সন্তানের মত পোষ্য পাখিটিকেও আপনার পছন্দের চকলেট খাওয়াতে যাবেন না। চকলেটে এক ধরনের যৌগ পাওয়া যায়, নাম থিয়োব্রোমাইন। এই যৌগটি সরাসরি পাখির স্নায়ুতন্ত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
এছাড়া শীতকাল বলে পাখিকে চা বা কফি খাওয়াই, শরীর ভালো থাকবে, এমনটাও করতে যাবেন না। সামান্য পরিমাণ ক্যাফিনও তাদের শরীরে ও হৃদযন্ত্রের উপর প্রভাব ফেলতে পারে
কাঁচা পেঁয়াজ-রসুন বা পেঁয়াজ-রসুন দেওয়া খাবার পাখিদের জন্য নয়। এতে খাদ্যনালীতে সংক্রমণ হতে পারে। আবার, খাঁটি প্রাকৃতিক উপাদান হলেও দুধ, মধু, মাশরুম এগুলো একেবারেই আপনার পোষ্য পাখিটির জন্য নয়। এসব খেলে পাখির ডায়ারিয়া ও লিভারের সমস্যা হতে পারে।
পাখির মন ভালো রাখতে কী করনীয়?
খাঁচায় বন্দি পাখিকে শুধু খাবার আর জল দিলেই হবে না। ফাঁকা বন্ধ ঘরে আপনার যেমন মন খারাপ হয়, পাখির ক্ষেত্রেও তাই। বরং খাঁচায় একটা ছোট্ট দোলনা লাগিয়ে দিন, স্নানের জন্য জল রাখুন যাতে সেখানেই কিছুটা সময় কাটাতে পারে। ছোট্ট খেলনা মই রাখুন, সারাদিন বেয়ে বেয়ে উঠতে-নামতে পারবে।
পাখিরা রঙিন জিনিস পছন্দ করে। তাই আপনার পোষ্যের জন্য একটা রঙিন পুতুল এনে দিন। যেখানে আছেন তার আশেপাশে খোলা আকাশ বা ফুলের গাছপালা থাকলে আরো ভালো। ঘরের ভেতরে থাকলে খাঁচার আশেপাশের দেয়াল রঙিন পেপারে মুড়ে দিতে পারেন।
টিয়া, ময়না বা ম্যাকাও জাতীয় পাখিরা আওয়াজের প্রতি আকৃষ্ট হয়। দিনের যেকোনো একটি সময় তাদের জন্য টিভি বা রেডিও চালিয়ে দিতে পারেন। অথবা আপনিও তাদের সাথে কিছুটা সময় কাটিয়ে তাদের কোনো কথা বা আওয়াজ শেখাতে পারেন।
সারাংশ বাড়িতে পোষ্য পাখি কিনে আনছেন? খাঁচায় রেখে শুধু জলখাবার দিলেই হবে না, তাদের যত্ন নিতে জানতে হবে আগে এই বিষয়গুলি…