বিশ্বজুড়ে ভারতীয় বংশোদ্ভূত সিইওরাই রক্ষাকর্তা, কেন জানেন

অভিবাসী ভারতীয় সিইওদের সাফল্য অবিশ্বাস্য ও গর্বের
সাফল্যের কারণ ভারতীয়দের চরিত্রে ও মননে
আমেরিকাও জাতি বর্ণের ঊর্ধ্বে  কদর করেছে গুণের

একের পর এক বিশ্বের তাবড় কোম্পানির সিইও-এর পদে আসীন হচ্ছেন ভারতীয়রা। এ যেমন বিস্ময়কর তেমনই গৌরবের। গত সপ্তাহে আইবিএম -এর সিইও হলেন অরবিন্দ কৃষ্ণা আর এই সপ্তাহে উইওয়ার্ক জানিয়ে দিল যে সন্দীপ মাথরানি তাদের নতুন চিফ এক্সিকিউটিভ। 
সারা বিশ্বের নামিদামি কোম্পানিগুলোর শীর্ষে পৌঁছনোর জন্য এমন কি গুণ থাকা দরকার যা এই ভারতীয় ব্যক্তিদের ব্যাক্তিত্বে আছে তা জানা প্রয়োজন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের।

১)পরিবর্তন কিংবা অনিশ্চিয়তাকে গ্রহণ করতে পারার মনোভাব-
প্রত্যেক কোম্পানিতেই ওঠা-পড়া থাকে, ব্যর্থতা থাকে।  আর ভারতীয়রা ব্যর্থতার সঙ্গে বোঝাপড়া করতে করতে বড়ো হয়। অনিশ্চিয়তা নিয়ে বসত করতে শিখে যায় ওরা ছোটো থেকেই।   ঠিক সময়ে  স্টেশনে ট্রেন আসবে কি না, দরকারের সময়ে কলে জল পড়বে কি না, এই সব নিয়ে আশা নিরাশার দোলাচলে চলতে হয় এই দেশে। তাই, স্বভাবতই ধৈর্য, সংযম বেশি আমাদের।  কর্পোরেট আমলাতন্ত্রে নতুন চিন্তাধারা আর ধৈর্য নির্মাণ করে সাফল্যের চাবিকাঠি।

Latest Videos

২) দূরদৃষ্টি- অনেক দূর অবধি যিনি দেখতে পান তিনিই হতে পারেন সফল নেতা। পরিকল্পনা 'ক' বাতিল হলে 'খ' নিয়ে কীভাবে লড়তে হবে এ সম্বন্ধে ভারতীয়দের থেকে বেশি আর কে জানবে? সব তথ্য, সব খবর নখদর্পণে রাখার দক্ষতা নিয়েই আমরা বড়ো হই আর খবরের সঙ্গে বাজারের তথ্য মিলিয়ে সঠিক নীতি রূপায়ণে ভারতীয়রা চিরকালই দঢ়।

৩) ভারতীয়রা অঙ্কে দক্ষ এ কথা পুরনো কারণ একথা সমগ্র বিশ্ব জানে কিন্তু যা সকলে জানেনা তা হল, এই ১০০ কোটির দেশে আমাদের অঙ্ক কাজে লাগাতে হয় রোজকার জীবনে- স্কুলের অ্যাডমিশনে, র‍্যাঙ্কিং-এ, ক্রিকেট খেলায়, লাইনে, পরীক্ষায়, সবেতেই সংখ্যাতত্ত্ব কম বেশি জড়িয়ে থাকে আমাদের জীবনে, যাকে এখন কায়দা করে বলে "ডেটা ইন্টেলেন্সি" তা ভারতীয়দের নখদর্পণে। 

৪) শিক্ষা- আমেরিকায় ভারতীয় অভিবাসীদের বেশিরভাগই উচ্চশিক্ষিত। ২০১৬ সালের সমীক্ষা অনুযায়ী ৭৭.৫ শতাংশের আছে স্নাতক ডিগ্রি যেখানে মার্কিনিদের মাত্র ৩১.৬ শতাংশ এই ডিগ্রিধারী। গত কয়েক দশক ধরেই  মার্কিনিদের তুলনায় আমেরিকায় যারা প্রবাসী তারাই পড়েছেন কম্পিউটার সায়েন্স এবং টেকনোলজি অধিক মাত্রায়। 

৫) কাজের জায়গাকে আপন করে নেওয়া, সহকর্মীদের পরিবার হিসেবে গণ্য করা -  ইন্দ্রা নুয়ি যখন পেপসিকো-এর সিইও হলেন তখন তাঁর শুভানুধ্যায়ীরা গিয়েছিলেন তাঁর মায়ের কাছে অভিনন্দন জানাতে। তাঁর মাথায় নতুন আইডিয়া খেলে গিয়েছিল তখনই এবং তিনি তা প্রয়োগ করেছিলেন। নুয়ি পেপসির স্টার পার্ফর্মারদের বাবা-মাদের 'থ্যাঙ্ক ইউ' কার্ড পাঠিয়েছিলেন।  ভারতীয় ঐতিহ্য মেনে চা খাইয়ে আপ্যায়ন, বিবাহ বা অন্যান্য শুভকাজে পরিবার হিসেবে কোম্পানির যোগদান, একে অন্যের পাশে দাঁড়ানোর মনোভাব বাড়ি আর অফিসের ভাগাভাগি ভেঙে দেয় সহজেই। 

৬)বৈচিত্র-  কাজের জায়গায় বৈচিত্র থাকার অর্থই হল স্বীকৃতি। আমেরিকায়  বিভেদমূলক মনোভাব যত কমেছে এশীয়দের সাফল্য এসেছে ততই। মার্কিনিরা বিশ্বাস করেছেন সুযোগ দানে, বেতনে সাম্য প্রদানে এবং  এশীয় সহকর্মীর সঙ্গে শ্রদ্ধাসহ সহাবস্থানে। ইমিগ্রেশন ও ন্যাশনালিটি অ্যাক্ট ১৯৬৫ লাগু হওয়ার পরই কিন্তু ভারতীয়দের উত্থান ঘটেছে ওই দেশে। সংরক্ষণ উঠে গেছে, বর্ণ বিদ্বেষ কমেছে আগের থেকে আর সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা বেড়ে গেছে অনেকখানি। তাই এশীয়দের এই সাফল্য।

৭) অকৃত্রিমতা ও অভি্যোজন-  মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা ভারতীয়দের অনেক বেশি। ভারতীয়রা মূল্যবোধ ও চরিত্রের ওপর বেশি গুরুত্ব দেয়।  নিজের দেশের সংস্কৃতির সঙ্গে ওখানকার সংস্কৃতিকে গুরুত্ব দেওয়ার মধ্যেই সহকর্মীদের মধ্যে গড়ে ওঠে একতা। 

৮ )  সময় মূল্যবান, সময় অনির্দিষ্ট-  মার্কিনিরা জীবন আর কাজকে ভাগ করে বাইনারি তত্ত্বে। কিন্তু ভারতীয়রা এই দুইকে মিলিয়ে দিতে পেরেছেন সময়ে, অসময়ে। মাইক্রোসফটের সিইও সত্য নাদেল্লা এক সাক্ষাতকারে বলেছিলেন, "আমি চেয়েছি কাজে আর জীবনে সংহতি নিয়ে আসতে, আমার কাজের সঙ্গে আমার ভালোলাগা জড়িয়ে ছিল। মাইক্রোসফটের মাধ্যমেই তো আমি আমার প্যাশন পূরণ করতে পারব, এই ছিল আমার চিন্তাধারা। আর এর ফলেই আমার মন ও প্রাণ উদ্বেগ্মুক্ত থাকত"। 

৯) গুণতন্ত্রে বিশ্বাস- একজন অভিবাসীর সিইও হয়ে ওঠার কাহিনি বিরল আর এক্ষেত্রে একজন অভিবাসী নন একাধিক। তাই এই তথ্য কেবল বিরল নয় স্মরণীয়। আমেরিকায় কাজের ধারা এমন। হয়তো অতিসরলীকরণ হয়ে যাবে তবুও একথা বলতেই হয় আমেরিকার পুঁজিবাদে বিশ্বাস রেখে একজন সিইওকে কিন্তু জানতে হয় কীভাবে একত্রীকরণ  করবেন  বাজার,বিনিয়োগকারীদের, এবং সমস্ত কর্মী্দের।   

ভারতীয়রা বাঁচতে ও বাঁচাতে পারেন, তাই হয়তো শেষটা রূপকথার মতো হয়। 

পরিশেষে ভারতীয় বংশদ্ভূত সিইওদের নাম-

শান্তনু নারায়ন- অ্যাডোব
সুন্দর পিচাই- অ্যালফাবেট
সত্য নারায়ণ নাদেল্লা- মাইক্রোসফট
রাজীব সুরি- নোকিয়া
পুনিত রাজেন- ডেলোয়েট
বসন্ত ব্যাস নরসিমহান- নোভার্টিস
অজয়পাল সিং বঙ্গা- মাস্টারকার্ড
ইভান ম্যানুয়েল মেঞ্জেস- দিয়াজিও
নিরাজ এস শাহ- ওয়েফেয়ার
স্নজয় মেহরোত্রা- মাইক্রোন
জর্জ কুরিয়ান-- নেটঅ্যাপ
নিকেশ আরোরা- পালো আলতো নেটোয়ার্কস
দীনেশ সি পালিওয়াল- হরমন ইন্টারন্যাশনাল ইন্ড্রাস্ট্রিজ


 

Share this article
click me!

Latest Videos

'একত্রিত হতে হবেই, ওরা ৫০ পেরলেই শরিয়া আইন চালু করবে' গর্জে উঠলেন শুভেন্দু | Suvendu Adhikari | News
'Mamata Banerjee-র জন্যই অভয়ার এই অবস্থা' বলতে গিয়ে এ কী বললেন Suvendu Adhikari, দেখুন
শুভেন্দুর বিরাট ঘোষণা! সোনাচূড়ার আড়াই বিঘা জমিতে হবে বিশাল Ram Mandir | Suvendu Adhikari
'সনাতনী সম্মেলন'-এ Suvendu Adhikari-র বিশেষ বার্তা, দেখুন সরাসরি
‘RG Kar-র তথ্য প্রমাণ Mamata Banerjee-র নির্দেশে লোপাট হয়েছে’ বিস্ফোরক Adhir Ranjan Chowdhury