ভারতের তিন তরুণ পরিবেশ যোদ্ধা, যারা পরিবেশ রক্ষা করতে এই বয়সেই লড়াইয়ে নেমেছে

  • জাতিসংঘের অর্থনীতি ও সামাজিক পরিষদের কাছে একটি চিঠি পাঠায় সুইডেন সরকার
  • বিষয়বস্তু ছিল প্রকৃতি ও পরিবেশ দূষণ সম্পর্কে তাদের গভীর উদ্বেগ
  • সেই থেকে পরিবেশ রক্ষার বিষয়টি অধিবেশনের আলোচ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়
  • সম্মেলনের প্রথম দিন ৫ জুন 'বিশ্ব পরিবেশ দিবস' হিসেবে ঘোষণা করা হয়

deblina dey | Published : Jun 5, 2020 5:31 AM IST

১৯৬৮ সালের ২০ মে জাতিসংঘের অর্থনীতি ও সামাজিক পরিষদের কাছে একটি চিঠি পাঠায় সুইডেন সরকার। চিঠির বিষয়বস্তু ছিল প্রকৃতি ও পরিবেশ দূষণ সম্পর্কে তাদের গভীর উদ্বেগের কথা। সে বছরই জাতিসংঘের পক্ষ থেকে পরিবেশ রক্ষার বিষয়টি সাধারণ অধিবেশনের আলোচ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। পরের বছর জাতিসংঘের পক্ষ থেকে পরিবেশ রক্ষার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা এবং সমাধানের উপায় খুঁজতে সদস্যরাষ্ট্রগুলোর সম্মতিতে সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে ১৯৭২ সালের ৫ থেকে ১৬ জুন জাতিসংঘ মানব পরিবেশ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনটি ইতিহাসের প্রথম পরিবেশ-বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের স্বীকৃতি পায়। ১৯৭৩ সালে সম্মেলনের প্রথম দিন ৫ জুনকে জাতিসংঘ 'বিশ্ব পরিবেশ দিবস' হিসেবে ঘোষণা দেয়। ১৯৭৪ সাল থেকে প্রতিবছর দিবসটি বিশ্বব্যাপী পালিত হয়ে আসছে।

প্রতি বছর ৫ জুন বিশ্ব ব্যাপী রাজনৈতিক কর্মোদ্যোগ আর জনসচেতনতার মাধ্যমে পরিবেশ সচেতনতার লক্ষ্যে পালিত দিবস। এই দিনটিতেই জাতিসংঘের মানবিক পরিবেশ কনফারেন্স শুরু হয়েছিল। এই কনফারেন্স হয়েছিল ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের ৫ থেকে ১৬ জুন অবধি। এই কনফারেন্স ওই বছরই চালু করেছিল জাতিসংঘের সাধারণ সভা। তখন থেকেই প্রতি বৎসর এই দিবস পালিত হয়ে আসছে। দিবসটি প্রথম পালিত হয় ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দে। প্রতি বছরই দিবসটি আলাদা আলাদা শহরে, আলাদা আলাদা প্রতিপাদ্য বিষয় নিয়ে পালিত হয়। ২০১৮ সালে প্লাস্টিক-দূষণ বন্ধের আহ্বানে 'বিট প্লাস্টিক পলিউশন' প্রতিপাদ্য নিয়ে বিশ্বজুড়ে  বিশ্ব পরিবেশ দিবসটি পালিত হয়। বিশ্বকে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন এমন তিন তরুণ ভারতীয় যোদ্ধার এখানে এক নজরে-

লিসিপ্রিয়া কঙ্গুজাম

মণিপুরের ৮ বছরের জলবায়ু কর্মী লিসিপ্রিয়া কঙ্গুজাম ২০১০ সাল থেকে ভারতে জলবায়ু পরিবর্তন রোধ মোকাবেলায় পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। ফেব্রুয়ারী ২০১৯ সালে, লিসিপ্রিয়া সাত বছর বয়সে স্কুল ছাড়ে, নয়াদিল্লির সংসদ ভবনের সামনে প্রতিবাদ করে সে। ভারতের জলবায়ু আইন পাসের জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য । ২০১৮ সালের একটি ইভেন্টে লিসিপ্রিয়া বলেছে,  “যখন আমি দেখি যে ছোটরা তাদের বাবা-মা কে হারিয়েছে এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে। আমার এমন লোকদের জন্য খুব দুঃখ হয়। যারা দুর্যোগের সময় নিজেকে সাহায্য করতে পারে না। আর এর মূল কারণ হ'ল জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব।

 

২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে স্পেনের মাদ্রিদে সিওপি২৫ জলবায়ু সম্মেলনে বক্তৃতা দেওয়ার সময় এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে ইতিমধ্যে ২১ টি দেশে কথা বলেছে বলে ঋদিমা জলবায়ু পরিবর্তন কর্মী হিসাবে বিশ্বব্যাপী খ্যাতি পেয়েছে। ভারতে বায়ু দূষণ এর সমস্যাটির সমাধানের জন্য নতুন আইন প্রচারণার জন্য লিকিপ্রিয়াও প্রায়শই এক প্রচারণা চালিয়েছিলেন। তিনি আরও চান যে স্কুলে জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত পাঠ্য বাধ্যতামূলকভাবে শেখানো উচিত। শিশু আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা, তিনি ইতিমধ্যে ডাঃ এপিজে আবদুল কালাম চিলড্রেন অ্যাওয়ার্ড, একটি ওয়ার্ল্ড চিলড্রেন পিস পুরস্কার এবং ভারত শান্তি পুরষ্কারের মতো সম্মানজনক প্রশংসাও পেয়েছে ছোট্ট লিসিপ্রিয়া।

ঋদিমা পান্ডে

জলবায়ু সমস্যা নিয়ে সরকারী পদক্ষেপের অভাবের প্রতিবাদে জাতিসংঘে অভিযোগ দায়ের করা ১৬ জন তরুণ কর্মীর মধ্যে হরিদ্বারের ১২ বছর বয়সী ঋদিমা পান্ডেও ছিল। ২০১৩ সালে জলবায়ুর সমস্যা প্রতিকার নিয়ে তার আগ্রহ শুরু হয়েছিল যখন উত্তরাখণ্ড বিশাল বন্যায় বিধ্বস্ত হয়েছিল। ২০১৭ সালে তিনি যখন জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হওয়ায় সরকারের বিরুদ্ধে জাতীয় সবুজ ট্রাইব্যুনালে একটি আবেদন করেছিলেন তখন তিনি শিরোনাম হয়েছেন।

তার হতাশার জন্য এনজিটি বলেছে যে জলবায়ু পরিবর্তন ইতি মধ্যেই পরিবেশ চুক্তি মূল্যায়নের আওতায় ছিল এবং তার আবেদনের নিষ্পত্তি হয়েছিল। ঋদিমা তার আবেদনে বলেছিল “জলবায়ু পরিবর্তনে আক্রান্তের ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলির তালিকায় ভারত অন্যতম ” তাই শিল্প প্রকল্পগুলির মূল্যায়ন ও জলবায়ু পুনরুদ্ধারের পরিকল্পনা তৈরি করার জন্য সরকারকে তাত্ক্ষণিক পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।

ঋদিমা আরও বলেছিল আমরা গঙ্গাকে আমাদের ‘মা ’হিসাবে মেনে চলি তবুও আমরা যাবতীয় নোংড়া এতে ফেলি। সরকার এই বিষয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দাবি তুললেও নদীর অবস্থার পরিবর্তন খুব কম হয়েছে। গঙ্গা এখনও দূষিত। সরকারকে অবশ্যই এই বিষয়ে সক্রিয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ”। এর পাশাপাশি প্লাস্টিকের ব্যবহারের উপরেও সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানিয়েছে সে।

আদিত্য মুখোপাধ্যায়

আদিত্য মুখোপাধ্যায় ক্যাফে এবং রেস্তোঁরা ঘুরে প্লাস্টিকের স্ট্র ব্যবহার বন্ধ করার জন্য প্রচার শুরু করেছে এবং পরিবেশ বান্ধব বিকল্প দ্রব্য ব্যবহার করতে তাদের রাজি করানোর দায়িত্ব নিয়েছেন। দু'জন পশুচিকিত্সকের একটি কচ্ছপের নাক থেকে প্লাস্টিকের বের করার একটি ভিডিও দেখে আদিত্য গভীরভাবে প্রভাবিত হয়। পরে তিনি এই প্রচার শুরু করেছিল। প্লাস্টিক বর্জনের চেষ্টায়, এনজিও চিন্তনের স্বেচ্ছাসেবক আদিত্য ইকোসিস্টেম থেকে প্রায় ২৫ মিলিয়ন প্লাস্টিকের স্ট্র এবং অন্যান্য একক-ব্যবহারের প্লাস্টিকগুলি সরিয়ে ফেলেছিল।

আদিত্য বলেছিল, "লোকেরা শিশুদের পরিবেশের উদ্বেগ নিয়ে বেশি কথা শোনেন।" প্লাস্টিকের ব্যবহার, বন সংরক্ষণ, এবং জলবায়ু ধর্মঘটের বিরুদ্ধে তার প্রচারের কারণে, তাকে ১৯৯৯ সালে জাতিসংঘের যুব জলবায়ু অ্যাকশন সামিটের অংশ হিসাবে আমন্ত্রিত করা হয়েছিল এবং পরে গ্রেটা থানবার্গ আয়োজিত জলবায়ু পরিবর্তনেও অংশ নিয়েছিল আদিত্য।

Share this article
click me!