
ভারতে দশেরা ২০২৫ উৎসব খুব ধুমধাম করে পালিত হচ্ছে। অসত্যের উপর সত্যের জয় হিসাবে রাবণ দহনের প্রস্তুতিও শুরু হয়ে গিয়েছে। দেশের বেশিরভাগ অংশে বিজয়া দশমীর দিনে রাবণের কুশপুত্তলিকা পোড়ানো হয়, কিন্তু আপনি কি জানেন যে ভারতে এমন মন্দিরও রয়েছে যেখানে এই দিনে রাবণ পুজিত হন, চলুন জেনে নেওয়া যাক সেই অবাক করা জায়গাগুলো সম্পর্কে।
কানপুরের রাবণ মন্দির
লঙ্কার রাজা রাবণের মন্দির উত্তরপ্রদেশের কানপুরে অবস্থিত। এটি দশানন মন্দির নামে পরিচিত। এটি শিবালয় এলাকায় অবস্থিত। বিশেষ ব্যাপার হলো, এই মন্দিরটি শুধুমাত্র দশেরার দিন খোলে এবং বাকি দিন বন্ধ থাকে। এখানে দশ মাথাওয়ালা রাবণের ১০ ফুট উঁচু একটি মূর্তি রয়েছে, যার পূজা করা হয়।
গ্রেটার নয়ডায় রাবণের মন্দির
রাবণের এই মন্দিরটিও উত্তরপ্রদেশের গ্রেটার নয়ডার বিসরাখ গ্রামে অবস্থিত। রাজধানী দিল্লি থেকে এর দূরত্ব প্রায় ৫০ কিলোমিটার। মনে করা হয়, রাবণের জন্ম এখানেই হয়েছিল। এখানে দশেরা পালনের পরিবর্তে রাবণের স্মরণে যজ্ঞের আয়োজন করা হয়।
মধ্যপ্রদেশের রাবণগ্রাম মন্দির
মধ্যপ্রদেশের বিদিশা জেলায় রাবণগ্রাম মন্দির অবস্থিত। মনে করা হয় যে রাবণের স্ত্রী মন্দোদরী বিদিশার বাসিন্দা ছিলেন। এই কারণে এখানকার মানুষ রাবণকে তাদের জামাই মনে করে। এই গ্রামে রাবণের ১০ ফুট উঁচু একটি মূর্তি রয়েছে। দশেরা ছাড়াও বিয়ে এবং অন্যান্য শুভ অনুষ্ঠানে মানুষ এখানে দর্শন করতে আসেন।
মধ্যপ্রদেশে রাবণের পুজো
বিদিশা ছাড়াও মধ্যপ্রদেশের মন্দসৌরেও রাবণের পুজো করা হয়। বিশ্বাস করা হয় যে এখানেই রাবণ এবং মন্দোদরীর বিয়ে হয়েছিল। এই মন্দিরটি মালওয়া অঞ্চলে অবস্থিত, যা ইন্দোর বিমানবন্দর থেকে ১৪০ কিলোমিটার দূরে। এছাড়া আপনি NH-52 হয়েও এখানে আসতে পারেন।
রাজস্থানে রাবণের মন্দির
উত্তরপ্রদেশ-মধ্যপ্রদেশ ছাড়াও রাজপুতদের ভূমি রাজস্থানের যোধপুর জেলাতেও রাবণের মন্দির রয়েছে। এটি মন্ডোর রাবণ মন্দির নামে পরিচিত। এটি যোধপুর শহর থেকে মাত্র ৯ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এই জায়গাটিকে মন্দোদরীর বাপের বাড়ি বলে মনে করা হয়। যোধপুর বিমানবন্দর থেকে এই মন্দিরের দূরত্ব ১৫ কিলোমিটার এবং যোধপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে ৯ কিলোমিটার। বিশেষ ব্যাপার হলো, এখানে দশেরার দিন রাবণ দহন না করে তাঁর পিণ্ডদান করা হয়।
হিমাচল প্রদেশে রাবণের মন্দির
পাহাড়ের কোলে অবস্থিত হিমাচল প্রদেশের কাংড়াতে দশেরা পালিত হয় না। এখানে বিখ্যাত বৈদ্যনাথ মন্দির অবস্থিত। এটি ১২০৫ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। বিশ্বাস করা হয় যে এখানেই রাবণ ভগবান শিবকে সন্তুষ্ট করার জন্য তপস্যা করেছিলেন এবং একটি শিবলিঙ্গ স্থাপন করেছিলেন। এখানে বিমান, রেল এবং সড়কপথে পৌঁছানো যায়।
অন্ধ্রপ্রদেশে রাবণ মন্দির
অন্ধ্রপ্রদেশের কাকিনাড়া জেলায় বিখ্যাত রাবণ মন্দির অবস্থিত। বিশ্বাস করা হয় যে এখানে রাবণ নিজেই একটি বিশাল শিবলিঙ্গের ছবি এঁকেছিলেন যা আজও বিদ্যমান। এখানে রাবণের একটি বড় মূর্তিও রয়েছে। এটি রাজমুন্দ্রি বিমানবন্দর থেকে ৬৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
শ্রী রাবলেশ্বর মন্দির, কর্ণাটক
কর্ণাটকের মান্ড্য জেলার নিদাগাট্টা গ্রামেও রাবণের পুজো করা হয়। এখানে ভগবান শিবের পূজা করার ভঙ্গিতে রাবণের একটি মূর্তি রয়েছে। মনে করা হয় এখানে ৫০০-৭০০ বছরের পুরনো শিলালিপিও রয়েছে।
কর্ণাটকের রামলিঙ্গেশ্বর মন্দির
কর্ণাটকের কোলার জেলার রামলিঙ্গেশ্বর মন্দিরে মূলত ভগবান শিবের পূজা করা হয়। এখানে চারটি ভিন্ন শিবলিঙ্গ রয়েছে। মনে করা হয় যে রাবণ নিজে কৈলাস থেকে এগুলি নিয়ে এসেছিলেন। বেঙ্গালুরু বিমানবন্দর থেকে এই মন্দিরের দূরত্ব ৭০ কিলোমিটার। আপনি NH-75 ধরে সরাসরি এখানে পৌঁছাতে পারেন।
কৈলাসপুর মহালিঙ্গেশ্বর মন্দির
কর্ণাটকের মান্ড্য জেলার কৈলাসপুর মহালিঙ্গেশ্বর মন্দির মহাদেবকে উৎসর্গীকৃত, তবে এখানে রাবণেরও পুজো করা হয়। বিশ্বাস করা হয় যে এখানে এমন একটি শিবলিঙ্গ রয়েছে যা রাবণ দেবতাদের কাছ থেকে পেয়েছিলেন।