
প্রকৃতির বিস্ময় আমাদের প্রতিনিয়ত চমকে দেয়। কখনও আগ্নেয়গিরি, কখনও ভূমিকম্প, আবার কখনও নিঃসঙ্গ সমুদ্রের বুকে হঠাৎ উদ্ভূত এক দ্বীপ! এমনই এক বিস্ময়কর ঘটনা ঘটে গেল ক্যাস্পিয়ান সাগরে—একটি 'ভূতের দ্বীপ' উদ্ভব হলো এবং আবার হারিয়েও গেল খুব অল্প সময়ে।
এই দ্বীপটি কোনো স্থায়ী ভূমি নয়, বরং এক কাদাভর্তি আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণের ফল। কয়েকদিনের মধ্যে দ্বীপটি তৈরি হয়েছিল, আবার ধীরে ধীরে সাগরের বুকে মিশে গিয়েছিল। এর রহস্যময় অস্তিত্ব এবং ক্ষণস্থায়ী প্রকৃতি বিজ্ঞানীদের যেমন আকৃষ্ট করেছে, তেমনই সাধারণ মানুষের মনেও তৈরি করেছে বিস্ময় ও কৌতূহল।
‘ভূতের দ্বীপ’-এর ইতিহাস
২০২৩ সালের জানুয়ারির শেষদিকে, আজারবাইজানের পূর্ব উপকূল থেকে প্রায় ১৫ মাইল দূরে, কুমানি তীর অঞ্চলে ক্যাস্পিয়ান সাগরের জলে এই দ্বীপের আবির্ভাব ঘটে। এটি একটি কাদার আগ্নেয়গিরির চূড়া, যা বিস্ফোরণের মাধ্যমে সাময়িকভাবে জলের ওপরে ভেসে ওঠে। দ্বীপের আয়তন ছিল প্রস্থ প্রায় ১,৩০০ ফুট (৪০০ মিটার)। স্থায়ী ছিল মাত্র কয়েক মাস, ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে প্রায় সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে যায়।
১৮৬১ সালে প্রথম আবিষ্কৃত হওয়ার পো থেকে পর পর আটবার অগ্ন্যুৎপাত হয়েছে। এই দ্বীপের প্রাকৃতিক গঠন লাভা নয়, বরং কাদা ও উত্তপ্ত স্লারির সমন্বয়ে তৈরি। আবার ১৯৫০ সালে রেকর্ড করা সবচেয়ে শক্তিশালী অগ্ন্যুৎপাতের ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২০ ফুট (৬ মিটার) উঁচুতে ২,৩০০ ফুট প্রশস্ত (৭০০ মিটার) ভূমির সৃষ্টি হয়েছিল।
আজারবাইজানে প্রায় ৩০০-রও বেশি কাদাভর্তি আগ্নেয়গিরির উপস্থিতি, এবং এই দেশের অবস্থান দুটি টেকটোনিক প্লেটের সংঘর্ষস্থলে হওয়ায় এ ধরনের জিওথার্মাল ক্রিয়াকলাপ খুবই স্বাভাবিক।
এই ধরনের আগ্নেয়গিরিগুলি সাধারণ আগ্নেয়গিরির মতো ধ্বংসাত্মক নয়, তবে এতে উচ্চমাত্রার প্রাকৃতিক গ্যাস সঞ্চিত থাকে। পাথরের সংঘর্ষ বা স্পার্ক থেকেই সৃষ্ট আগুন প্রচণ্ড বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে।
২০২১ সালে ক্যাস্পিয়ান সাগরের উপরে কয়েকশো ফুট উঁচু একটি বিশাল অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত করেছিল বলে মনে করা হয়। তাতে জাহাজ চলাচল ও সামুদ্রিক জীবনের উপর প্রভাব পড়েছিল বেশ।
আরও নজির
অনুরূপভাবে ২০১৫ সালে টোঙ্গার ‘হুঙ্গা টোঙ্গা-হুঙ্গা হা’পাই’ আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণে তৈরি হয়েছিল একটি দ্বীপ, যেটি ২০২২ সালে আবার ধ্বংস হয়ে যায়। গবেষকরা মনে করেন, সেই দ্বীপে থাকা কিছু অণুজীবও বিলুপ্ত হয়েছিল, যাদের আগে কখনও দেখা যায়নি।