পাকিস্তানের (Pakistan) শিয়ালকোটে (Sialkot) শ্রীলঙ্কার (Sri Lanka) নাগরিককে ভয়ঙ্কর নির্যাতন করে হত্যার ঘটনাকে নায্যতা দিলেন পাক প্রতিরক্ষা মন্ত্রী পারভেজ খট্টক (Pervez Khattak)। কী বললেন ইমরান খান (Imran Khan) মন্ত্রিসভার সদস্য?
'ছেলেরা আবেগে এমন কাজ করে।' গত শুক্রবার পাকিস্তানের (Pakistan) শিয়ালকোটে (Sialkot) এক শ্রীলঙ্কার (Sri Lanka) নাগরিককে ভয়ঙ্কর নির্যাতন করে হত্যা, এবং তারপর প্রকাশ্য রাস্তায় তাঁর মৃতদেহ জ্বালিয়ে দেওয়ার ঘটনাকে কার্যত ন্যায্যতা দিলেন পাক প্রতিরক্ষা মন্ত্রী পারভেজ খট্টক (Pervez Khattak)। সোমবার তিনি বলেন, শিয়ালকোটের ঘটনা 'ধর্মীয় আবেগে ভেসে যাওয়া ক্ষুব্ধ যুবকদের' কাজ। তিনি আরও বলেছেন, 'ধর্মীয় কারণে উত্তেজিত' হয়ে এমনকী তিনি নিজেও এরকম ভুল করতে পারতেন। এই বিষয়ে সরকারকে দোষারোপ করাটাও ভুল বলেই দাবি করেছেন তিনি। বরং গণমাধ্যমের উচিত জনগণকে বোঝানো, এমনটাই বলেছেন খট্টক।
এর আগে, রবিবার, শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপতি গোতাবায়া রাজাপক্ষকে (Gotabaya Rajapaksa), পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান (Imran Khan), 'অপরাধীদের শাস্তি হবে' বলে, আশ্বস্ত করেছিলেন। ইমরান জানিয়েছিলেন ওই নৃশংস হত্যা পাকিস্তানিদের ক্রুদ্ধ করেছে এবং লজ্জিত করেছে। 'ন্যায়বিচার করা হবে', বলেন পাক প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু, এদিন তাঁর মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ সদস্য, যেভাবে বিষয়টিকে লঘু করেছেন, তাতে করে ন্যাচবিচারের বিষয়ে কেউই ভরসা রাখছেন না। পাকিস্তানি বুদ্ধিজীবী ও রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, প্রতিরক্ষামন্ত্রীর মন্তব্যে তারা হতাশ। তারা অবিলম্বে পারভেজ খট্টককে মন্ত্রিসভা থেকে অপসারণ করার দাবি তুলেছেন। তাঁদের মতে, নাহলে ধরে নিতে হবে প্রধানমন্ত্রী মিথ্যা কথা বলে চলেছেন।
আরও পড়ুন - Sri Lankan national in Pakistan: নির্মমভাবে খুন শ্রীলঙ্কান নাগরিককে,প্রকাশ্যে রিপোর্ট
আরও পড়ুন - Pakistan Baby: 'সীমান্ত সন্তান', দেশহীন এক সদ্যোজাতর জন্মের গল্প
পাক মন্ত্রীর এই অসংবেদনশীল মন্তব্যের পর সেই দেশে ভাইরাল হয়েছে পাকিস্তানের শীর্ষস্থানীয় চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নিয়াজ ব্রোহির এক মন্তব্য। পাক সংবাদমাধ্যম সামা নিউজকে তিনি জানিয়েছেন, শ্রীলঙ্কা থেকে যে চক্ষুদান করা হয়, গোটা বিশ্বের মধ্যে পাকিস্তানই তার বৃহত্তম প্রাপক। ১৯৬৭ সাল থেকে অন্তত ৩৫,০০০ কর্নিয়া শ্রীলঙ্কার কাছ থেকে পেয়েছে পাকিস্তান। ডাক্তার নিয়াজ ব্রোহি বলেছেন, 'শ্রীলঙ্কানরা আমাদের ৩৫,০০০ চোখ দান করেছে, কিন্তু আমরা তাও দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেছি।' তাঁর এই মন্তব্যই এখন পাকিস্তানের শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষদের মুখের কথা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
শুক্রবার, পাক কট্টরপন্থী ইসলামি দল তেহরিক-ই-লাব্বাইক পাকিস্তানের (Tehreek-e-Labbaik Pakistan) সমর্থকরা শিয়ালকোটের এক পোশাক কারখানার জেনারেল ম্যানেজার, শ্রীলঙ্কার নাগরিক প্রিয়ন্ত কুমারাকে (Priyantha Kumara) পিটিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে। তারপর তাঁর নিথর দেহে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। সেই মধ্যযুগীয় বর্বরতার ছবি ও ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছিল। অনেকে টিভি ক্যামেরার সামনে তাকে পিটিয়ে হত্যা করার কথা স্বীকারও করেছে।
প্রিয়ন্ত কুমারার দেহের ময়নাতদন্তে দেখা গিয়েছে একটি পা বাদ দিয়ে তাঁর শরীরের প্রায় সব হাড়ই মারের চোটে ভেঙে গিয়েছিল। এমনকী নিতম্বের হাড় পর্যন্ত গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে গিয়েছিল। পুড়ে গিয়েছিল শরীরের ৯৯ শতংশ। তাও, তাঁর দেহাবশেষকে শেষ বিদায় জানাতে শ্রীলঙ্কায় অপেক্ষায় রয়েছে তাঁর পরিবার। সোমবারই তাঁর দেহাবশেষ পাকিস্তান থেকে শ্রীলঙ্কায় পাঠানো হয়েছে।