সংক্ষিপ্ত
পাকিস্তানের (Pakistan) শিয়ালকোটের (Sialkot) এক শ্রীলঙ্কান নাগরিককে অকথ্য অত্যাচার করে হত্যা করল উন্মত্ত জনতা। (Sri Lanka) নাগরিক। চরমপন্থী তেহরিক-ই-লাব্বাইক পাকিস্তান (Tehreek-e-Labbaik Pakistan) দলের একটি পোস্টার ছিঁড়ে ফেলার জন্যই এই অবস্থা করা হল তাঁর।
থ্যাতলানো মুখটা রক্তাক্ত। পরণে শুধু রয়েছে অন্তর্বাস। নড়াচড়া করার মতো শক্তি নেই। তারপরও উন্মত্ত জনতা বাঁশ, রড, বাটাম দিয়ে সেই নিথর দেহটাতেই একের পর এক আঘাত করে চলেছে। কেউ কেউ এগিয়ে এসে মারছে লাথি। একটু পরে, সে আর বেঁচে নেই বুঝে প্রকাশ্য রাস্তাতেই জ্বালিয়ে দেওয়া হল তার দেহ। সেই সঙ্গে, চতুর্দিকে উঠল সোল্লাস স্লোগান, 'লাব্বাইক, লাব্বাইক'! পাকিস্তানের (Pakistan) শিয়ালকোটের (Sialkot) ঘটনা। ভয়ঙ্কর নির্যাতনে মৃত ব্যক্তিটি শ্রীলঙ্কার (Sri Lanka) নাগরিক। এই মধ্যযুগীয় বর্বর ঘটনার বেশ কিছু ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়তেই তীব্র নিন্দার মুখে পড়েছে পাক সরকার।
পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম ডন ডটকম জানিয়েছে, ঘটনাটি ঘটে শুক্রবার সকালে, শিয়ালকোটের ওয়াজিরাবাদ রোড এলাকায়। সেখানে এক স্পোর্টস ফ্যাক্টরিতে এক্সপোর্ট ম্যানেজার হিসাবে কাজ করতেন শ্রীলঙ্কান নাগরিক প্রিয়ন্ত কুমারা (Priyantha Kumara), ৪০-এর গোড়ায় বয়স। আর তাঁকে হত্যা করেছে, তাঁরই অধীনে কাজ করা কারখানার শ্রমিকরা। কেন তাঁকে এরকম বর্বরের মতো হত্যা করল উন্মত্ত জনতা? শিয়ালকোট জেলার এক পুলিশ অফিসার, উমর সঈদ মালিক জানিয়েছেন, এর পিছনে পাকিস্তানের কট্টরপন্থী সংগঠন তেহরিক-ই-লাব্বাইক পাকিস্তান বা টিএলপি (Tehreek-e-Labbaik Pakistan) দলের অনুগামীরা রয়েছে। তাদের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলার জন্যই অকথ্য নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে তাঁকে এবং তারপর দেহটুকুও অবশিষ্ট না রেখে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন - Pakistan: বিরোধী মহিলা বিধায়কের অশ্লীল ভিডিও ভাইরাল, পিছনে কি ইমরানের হাত
আরও পড়ুন - Pakistan: পাক মন্ত্রীদের ডানা ছাঁটলেন ইমরান, বিদেশ সফর নিষিদ্ধ - কী ঘটল গ্লাসগোয়
জানা গিয়েছে, প্রিয়ন্ত কুমারার অফিস সংলগ্ন দেওয়ালেই সাঁটানো হয়েছিল, কট্টরপন্থী তেহরিক-ই-লাব্বাইক পাকিস্তান দলের ওই পোস্টারটি। সেখানে আবার উর্দুতে কোরানের কিছু সুরা লেখা ছিল। এদিন অফিসে আসার পর, প্রিয়ন্ত সেই পোস্টারটি ছিঁড়ে ডাস্টবিনে ফেলে দিয়েছিলেন। কারখানার কয়েকজন কর্মীর তা চোখে পড়ে যায়। তারাই কারখানার বাকি কর্মীদের মধ্যে সেই কথা ছড়িয়ে দিয়েছিল। এরপরই, উন্মত্ত জনতা দল বেঁধে এসে তাঁকে মারতে মারতে অফিস থেকে বার করে রাস্তায় নিয়ে গিয়ে ফেলে। তারপর পেটাতে পেটাতে একেবারে প্রাণে মেরে ফেলে এবং দেহয় আগুন ধরিয়ে দেয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া ভিডিওগুলি এতটাই বীভৎস, অধিকাংশই এশিয়ানেট নিউজ বাংলার পক্ষ থেকে এখানে প্রকাশ করা গেল না। তবে, দেখা গিয়েছে, এই মারণলীলায় অংশ নিয়েছিল শয়ে শয়ে লোক।
এই ভয়ঙ্কর ঘটনার দুটি ভিডিও -
দীর্ঘক্ষণ ধরে এই নারকীয় কাণ্ড চললেও, ধারেকাছে কোথাও পুলিশের দেখা পাওয়া যায়নি। পাক সংবাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, অনেক পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এলাকায় বড় পুলিশ বাহিনী পাঠানো হয়। পাক পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী উসমান বুজদার (Usman Buzdar) ঘটনাটি 'খুবই দুঃখজনক' বলেছেন, এবং পুলিশের কাছ থেকে এই ঘটনার বিষয়ে একটি প্রতিবেদন তলব করেছেন। বিষয়টি নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের তদন্তেরও নির্দেশ দিয়েছেন। শিয়ালকোট পুলিশের পক্ষ থেকে এই ঘটনার তদন্ত করা হচ্ছে। তবে, তদন্তে কতদূর কী হবে তা নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন রয়েছে। ঘটনার পর, সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরার সামনে বহু ব্যক্তিকে এই হত্যার দায় নিতে দেখা গিয়েছে। প্রসঙ্গত কয়েক বছর আগে পাকিস্তানে এই চরমপন্থী সংগঠনকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। কিন্তু, ইমরান খান (Imran Khan) ক্ষমতায় আসার পর, তেহরিক-ই-লাব্বাইক পাকিস্তান-এর উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেন। তাঁর আমলে পাকিস্তানে ক্রমেই শক্তিশালী হচ্ছে চরমপন্থা।
এর আগে ২০১০ সালেও, এই শিয়ালকোটেই একটি গণপিটুনিতে হত্যার ঘটনা ঘটেছিল। পুলিশের উপস্থিতিতেই উন্মত্ত জনতা দুই জন অল্পবয়সী তরুণকে, ডাকাত বলে ঘোষণা করে পিটিয়ে হত্যা করেছিল।