পাকিস্তান, বাংলাদেশ, আফগানিস্তানের মতো ইসলাম প্রধান রাষ্ট্রে সংখ্যালঘু হিন্দু, শিখ- সহ অন্যান্য ধর্মের মানুষ বার বার আক্রান্ত হচ্ছে বলে দাবি মোদী সরকারের। এই ধরনের অত্যাচারিত সংখ্যালঘু শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দিতেই সংশোধিত আইন পাশ হয়েছে। এই নিয়ে দেশজোড়া বিতর্কের মধ্যে পাকিস্তানের বিখ্যাত নানকানা সাহিব-এ আক্রান্ত হল গুরুদ্বার। গুরু নানকের জন্মস্থানে গুরুদ্বার ভেঙে মসজিদ তৈরির করার হুমকি দিল হাজার হাজার বিক্ষোভকারী। গুরুদ্বারের ভিতরে আটকে পড়েন বহু শিখ ভক্ত। তাঁদেরকে উদ্ধারের জন্য পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিং। ঘটনায় কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছে ভারত।
ঘটনার সূত্রপাত এক শিখ তরুণীকে জোর করে ধর্মান্তকরণ এবং তার পরে তাকে বিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ঘিরে। অভিযোগ, ওই গুরুদ্বারের 'গ্রন্থি'-র দায়িত্বপালনকারী ব্যক্তির মেয়ে জগজিৎ কউরকেই জোর করে ধর্মান্তকরণ করে বিয়ে করে নেয় মহম্মদ হাসান নামে এক তরুণ। হাসানের দাদার নেতৃত্বেই বিক্ষোভ শুরু হয়। একটি ভিডিও-তে তাকেই গুরুদ্বার ভেঙে দিয়ে সেখানে মসজিদ গড়ার হুমকি দিতে শোনা যায়। সে আরও বলে, ওই শহরে আর একজন শিখকেও থাকতে দেওয়া হবে না বলে রীতিমতো হুঁশিারি দেয় হাসানের ভাই। নানকানা সাহিবের নাম বদলে গুলামান-এ- মুস্তাফা করারও দাবি জানায় সে।
আরও পড়ুন- মমতার হাত ধরতেও আপত্তি নেই, সিপিএম মুখ্যমন্ত্রী দিলেন জোট গঠনের ডাক
বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, তরুণীকে ধর্মান্তকরণ এবং বিয়ের জন্য কোনও অভিযুক্ত হাসানকে গ্রেফতার করে বেধড়ক মেরেছে স্থানীয় পুলিশ। পাকিস্তানের সংখ্যালঘু মন্ত্রীর চাপেই এমনটা করা হয়ে বলে অভিযোগ বিক্ষোভকারীদের।
এই ঘটনার কথা প্রকাশ্যে আসতেই পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী। গুরুদ্বারে আটকে থাকা শিখদের উদ্ধারের জন্য ইমরানকে হস্তক্ষেপ করার অনুরোধ করেন তিনি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীরও সাহায্য প্রার্থনা করেন পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী। একইভাবে সাহায্য় চান শিরোমনি অকালি দলের প্রধান সুখবীর সিং বাদল।
নানকানা শাহিব গুরু নানকের জন্মস্থান। পাকিস্তানে অবস্থিত হলেও প্রতিবছর ভারত থেকে বহু ভক্ত ভারত থেকে সেখানে যান। ঐতিহাসিক এমন ধর্মীয়স্থান লক্ষ্য করে এ দিন পাথর ছুড়তে থাকে বিক্ষোভকারীরা।
এ দিনই এই ঘটনায় কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে ভারতের বিদেশ মন্ত্রক। টুইট বার্তায় বলা হয়, 'পাকিস্তানের নানকানা সাহিব গুরুদ্বারে যে হামলা এবং তাণ্ডবের ঘটনা ঘটেছে তাতে ভারত অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। গুরু নানকের জন্মস্থানে শিখ সম্প্রদায়ের মানুষ হিংসায় আক্রান্ত হচ্ছেন।' আরও বলা হয়, 'পবিত্র স্থানে যেমন খুশি ভাঙচুর এবং তাণ্ডবের এই ঘটনায় কড়া পদক্ষেপ করার জন্য পাক সরকারের কাছে আমরা দাবি জানাচ্ছি।'
বিক্ষোভকারীদের দাবি ছিল, ওই তরুণী স্বেচ্ছায় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন এবং এখন তিনি আর পুরনো ধর্মে ফিরতে চাননা। যদিও তরুণী এবং স্থানীয় শিখদের দাবি. তরুণীকে মুখ খোলার কোনও সুযোগই দেওয়া হচ্ছে না।
শেষ পর্যন্ত বিক্ষোভ সামাল দিতে তৎপর হয় পুলিশ। অভিযুক্ত হাসানকে ছে়ড়ে দেওয়ার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।