গোটা বিশ্বেই এখন বেশিরভাগ যুগলের মধ্যে অফিসের কাজের সঙ্গে তাল মিলিয়ে লং ডিসট্যান্স রিলেশনশিপ রাখা তাদের পক্ষে যেন বড়ই কঠিন হয়ে পড়েছে। যদিও এটা আমাদের নিজেদের মনের একটা বিষয়। আসলে লং ডিসট্যান্স রিলেশনশিপ কোনও সমস্যাই নয়।
রিয়া আর প্রবালের সম্পর্ক সেই কলেজ থেকে। এক কথায় বলা চলে 'লাভ অ্যাট ফার্স্ট সাইট'। একে অপরকে ছাড়া তারা কিছুই ভাবতে পারে না। কলেজ পাশ করার পর তারা দু'জনেই চাকরি জুটিয়ে নিয়েছিল। তাদের দু'জনের অফিসের দূরত্ব খুব বেশি নয়। তাই অফিস শেষে দুটিতে ঠিক দেখা হয়ে যেত। সব কিছু ভালোই চলছিল। বাধ সাধল করোনা। আর তার জেরে দেশজুড়ে লকডাউন। সেই অফিস বাড়ি থেকে শুরু হল তা আর শেষ হওয়ার নামই নিচ্ছে না। এমনকী, অফিসে যেখানে নির্দিষ্ট সময় কাজ শেষ হয়ে যেত তা এখন কোনওভাবেই সম্ভব হচ্ছে না। যত তাড়াতাড়িই করুক না কেন কাজ যেন কিছুতেই কমছে না। ফলে এখন তারা একে অপরকে বিশেষ একটা সময়ও দিতে পারে না। কাজ শেষ হওয়ার পর আর ফোন কথা বলার ইচ্ছেটাই চলে যাচ্ছে। ফলে বাড়ছে দূরত্ব। দেখা দিচ্ছে সম্পর্কে জটিলতা। ছোটোখাটো বিষয় নিয়েও এখন তারা ঝগড়া করে। মাঝে মধ্যেই বন্ধ থাকে কথা।
আরও পড়ুন- মেয়েদের পছন্দের পুরুষ হয়ে উঠতে চান, তা বলে অজান্তে এই ভুলগুলো করবেন না
তবে এটা শুধু রিয়া আর প্রবাল নয়। গোটা বিশ্বেই এখন বেশিরভাগ যুগলের মধ্যেই এই সমস্যা দেখা দিয়েছে। অফিসের কাজের সঙ্গে তাল মিলিয়ে লং ডিস্ট্যান্স রিলেশনশিপ রাখা তাদের পক্ষে যেন বড়ই কঠিন হয়ে পড়েছে। যদিও এটা আমাদের নিজেদের মনের একটা বিষয়। আসলে লং ডিস্ট্যান্স রিলেশনশিপ কোনও সমস্যাই নয়। কারণ কথায় বলে, 'কোনও সমস্যায়ই দীর্ঘস্থায়ী নয়'। তাই এই সময়টা যদি আমরা একে অপরকে একটু বুঝে কাটিয়ে দিতে পারি তাহলে হয়তো এর মাধ্যমেই আলাদা একটা পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে সম্পর্ক। ফলে মান অভিমানের পালা সরিয়ে শুধু কয়েকটা নিয়ম মেনে করোনা পরিস্থিতিতে বজায় রাখুন লং ডিস্ট্যান্স রিলেশনশিপ।
যোগাযোগ
মানছি অফিসের চাপে প্রেমিক বা প্রেমিকার সঙ্গে ঠিক করে ফোনে কথা বলে উঠতে পারছেন না। তবে কি জানেন তো একটা মেসেজ করতে শুধু কয়েক সেকেন্ড প্রয়োজন। ধরুন জল খাওয়ার সময়টাতেই একটা মেসেজ করে দিলেন। আর ঘুম থেকে গুড মর্নিং মেসেজ একেবারে মাস্ট। এই মেসেজ অনেক কিছুই বুঝিয়ে দেবে। সময় পেলেই যদি মেসেজ করেন তাহলেই অপরদিকে যিনি রয়েছেন তাঁর মনে হবে আপনি দূরে নয় ঠিক তাঁর পাশেই রয়েছেন। তবে পরিস্থিতি সব সময় এক হয় না। কোনও দিন যদি মেসেজ করতে না পারেন তাহলে প্রেমিকা বা প্রেমিককে বলুন খুব ব্যস্ত রয়েছেন। আর অপরদিকের মানুষটিরও নিজের সঙ্গীর সমস্যার কথা বুঝতে হবে। এভাবে বোঝাপড়া গড়ে তুলুন। দেখবেন সম্পর্ক দৌড়াবে।
সময় দিন
সারাদিনে ব্যস্ততা থাকবেই। আর অফিস মানেই চাপ। ছাপ ছাড়া কিছুই হয় না। তাই এগুলো নিয়ে বেশি না ভেবে সঙ্গীকে অবশ্য়ই সময় দেবেন। যেটুকু সময় পান সেটা ৫ মিনিটের জন্য হলেও ফোন করুন বা সুযোগ থাকলে ভিডিও কল করতে পারেন। তাহলে আপনারা যে দূরে রয়েছেন সেটা আর মনে হবে না।
ছুটির দিনে কোনও কাজ একসঙ্গে করুন
ধরুন আপনার ও আপনার সঙ্গীর ছুটির দিন একই। সেদিন সকাল থেকে রাতে ঘুমাতে যাওয়া পর্যন্ত সব কাজ একসঙ্গে করুন। কীভাবে? ধরুণ একয় ঘুম থেকে উঠলেন। এরপর ঠিক করুন কী ব্রেকফাস্ট করবেন। যে যার নিজের বাড়িতে একই ব্রেকফাস্ট করুন। লাঞ্চও করুন এই পদ দিয়ে। কিংবা প্রেমিক বা প্রেমিকাকে সারপ্রাইজ দিতে উপহার অথবা আপনি যে খাবার খাচ্ছেন তাই সঙ্গীর বাড়িতেও অর্ডার দিয়ে দিন। দেখবেন এভাবে দূরে থাকলেও তা বোঝা যাবে না।
ঝগড়া করুন
দেখুন ঝগড়া একশো বার করুন। ঝগড়া না করলে সম্পর্ক টেকে না। তাই ঝগড়া অবশ্যই করবেন। যদি আপনি ভুল নাও থাকেল তাহলেও ঝগড়া করুন। তবে বেশিক্ষণ বিষয়টিকে টেনে নিয়ে যাবেন না। সঙ্গী যদি আপনার কাছে ক্ষমা চেয়ে নেন তাহলে তাঁকে ক্ষমা করে দিন। দেখবেন এভাবে সম্পর্ক ভালোই থাকবে। আর এভাবেই একে অপরকে নতুন করে পাবেন আপনারা।
প্রত্যাশা
যে কোনও সম্পর্কে প্রত্যাশা থাকবেই। কিন্তু, এই কঠিন পরিস্থিতিতে অবুঝ হবেন না। কারণ আপনার সঙ্গী হয়তো রোজ একটা সময় আপনাকে ফোন করেন। যদি একদিন করতে না পারেন তাহলে সেটা কেন পারেননি তা জানুন। তারপর তাঁর উপর রাগ করুন। কারণ ওয়ার্ক ফ্রম হোমের চাপে হয়তো আপনার সঙ্গী সকালে ঘুম থেকে উঠে সময়ই পাননি। তাই অযথা রাগ করবেন না। বিষয়টি বোঝার চেষ্টা করুন।