
রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর তারকা ব্যাটার বিরাট কোহলি ২০১৬ সালের আইপিএল-এ তাঁর সেরা পারফরম্যান্স দেখান। সেবার তিনি আইপিএলের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রান এবং সর্বোচ্চ ব্যাটিং গড়-সহ বেশ কয়েকটি রেকর্ড গড়েন। ২০১৬ সালের আইপিএল-এ বিরাট ১৬ ম্যাচে ৮১.০৮ গড়ে ৪টি শতরান এবং ৭টি অর্ধশতরান-সহ ৯৭৩ রান করেছিলেন। বিরাট এই ঐতিহাসিক কীর্তি অর্জনের পর ৯ বছর কেটে গিয়েছে। কোনও ব্যাটারই আইপিএল-এ কোনও এক মরসুমে বিরাটের সর্বাধিক রানের রেকর্ডের কাছাকাছিও আসতে পারেননি। তবে আইপিএল ২০২৫-এ বিরাটের রেকর্ড ভেঙে যেতে পারে। নতুন প্রজন্মের খেলোয়াড়রা প্রাক্তন আরসিবি অধিনায়কের রেকর্ডকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারেন।
গুজরাট টাইটানসের অধিনায়ক শুবমান গিল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট এবং আইপিএল-এ দ্রুত উন্নতি করছেন। তাঁকে বিরাট কোহলির উত্তরসূরি হিসেবে গণ্য করা হয়। আইপিএল ২০২৩-এ বিরাট কোহলির ৯৭৩ রানের রেকর্ড প্রায় ভেঙেই দিয়েছিলেন শুমান। তিনি ৩টি শতরান এবং ৪টি অর্ধশতরান-সহ ৫৯.৩৩ গড়ে ১৭ ম্যাচে ৮৯০ রান করেছিলেন। গত মরসুমে ২৫ বছর বয়সি এই ব্যাটার ১২ ম্যাচে একটি শতরান এবং ২টি অর্ধশতরান-সহ ৩৮.৭৩ গড়ে ৪২৬ রান করেছিলেন। শুবমান গত পাঁচটি আইপিএল মরসুমে ধারাবাহিকভাবে ভালো ব্যাটিং করেছেন। প্রতি মরসুমে ৪০০-এর বেশি রান করেছেন। ধারাবাহিকতা এবং বড় রান করার ক্ষমতা তাঁকে আসন্ন আইপিএল মরসুমে বিরাটের রেকর্ড ভাঙার অন্যতম দাবিদার করে তুলেছে।
বিরাট কোহলির ৯৭৩ রানের সর্বকালের রেকর্ড ভাঙার অপর এক দাবিদার হলেন সানরাইজার্স হায়দরাবাদের পাওয়ার-হিটার অভিষেক শর্মা। গত বছরের আইপিএল-এ অভিষেক দুর্দান্ত ব্যাটিং করেন। তিনি ৩টি অর্ধশতরান-সহ ৩২.২৬ গড়ে এবং ২০৪.২১-এর দুর্দান্ত স্ট্রাইক রেটে ৪৮৪ রান করেন। অভিষেক ও ট্রেভিস হেড পাওয়ার-হিটিং দিয়ে প্রতিপক্ষের বোলারদের ওপর তাণ্ডব চালিয়েছেন। তাঁরা আইপিএল-এর গত মরসুমের সেরা ওপেনিং জুটি ছিলেন। ২৪ বছর বয়সি ব্যাটার অভিষেক গত মাসে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সিরিজের তৃতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ৫৪ বলে ১৩৫ রানের অসাধারণ ইনিংস খেলে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছেন। প্রথম বল থেকেই বোলারদের ওপর চড়াও হওয়ার ক্ষমতা তাঁকে বিরাটের রেকর্ড ভাঙার অন্যতম দাবিদার করে তুলেছে।
চেন্নাই সুপার কিংসের অধিনায়ক রুতুরাজ গায়কোওয়াড় গত কয়েক মরসুম ধরেই আইপিএল-এর অন্যতম ধারাবাহিক পারফর্মার। তিনি ২০২১ সালের আইপিএল-এ ৬৩৫ রান করে অরেঞ্জ ক্যাপের অধিকারী হয়েছিলেন। পরের আইপিএল-এও তাঁর দুর্দান্ত ফর্ম অব্যাহত থাকে। গত বছর সিএসকে অধিনায়ক হিসেবে নিজের প্রথম আইপিএল মরসুমে রুতুরাড ১৪ ম্যাচে একটি শতরান এবং চারটি অর্ধশতরান-সহ ৫৩ গড়ে ৫৮৩ রান করেছেন। ২৮ বছর বয়সি এই ক্রিকেটার গত বছর বিজয় হাজারে ট্রফিতে ৫ ম্যাচে মাত্র ১২৩ রান করলেও আইপিএল-এ তাঁর ট্র্যাক রেকর্ড বলছে, তিনি দ্রুত ফিরে আসার ক্ষমতা রাখেন। গত কয়েক বছর ধরে পুরো আইপিএল মরসুমে নিজের ফর্ম ধরে রাখার ধারাবাহিকতা তাঁকে বিরাট কোহলির রেকর্ড ভাঙার অন্যতম শক্তিশালী দাবিদার করে তুলেছে।
রাজস্থান রয়্যালসের ওপেনার যশস্বী জয়সোয়াল ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে অন্যতম আক্রমণাত্মক ওপেনার হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেছেন। বাঁহাতি এই ব্যাটার পাওয়ার প্লে-তে বোলারদের ওপর চড়াও হয়ে সব ধরনের শট খেলেন। যশস্বী ২০২৩ সালের আইপিএল-এ তাঁর সেরা পারফরম্যান্স দেখান। সেবার তিনি ১৪ ম্যাচে একটি শতরান এবং পাঁচটি অর্ধশতরান-সহ ৪৮.০৮ গড়ে ৬২৫ রান করেছেন। গত মরসুমে তিনি ১৫ ম্যাচে একটি শতরান এবং একটি অর্ধশতরান-সহ ৩১.০৭ গড়ে ৪৩৫ রান করেছেন। গত কয়েক মরসুম ধরেই ২৩ বছর বয়সি এই ব্যাটার ধারাবাহিকতা দেখাচ্ছেন। যশস্বী বর্তমানে বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম প্রতিভাবান ব্যাটার। তিনি যদি ধারাবাহিকতা ধরে রাখেন এবং আইপিএল ২০২৫-এ আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে ব্যাটিং করেন, তাহলে তিনি বিরাট কোহলির রেকর্ড ভেঙে দিতে পারেন।
আইপিএল-এ বিরাট কোহলির রেকর্ড ভাঙার ক্ষেত্রে ট্রেভিস হেডকেও আলোচনার বাইরে রাখা যায় না। তাঁর বিস্ফোরক ব্যাটিং শৈলী এবং সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সের কারণে তিনি এই তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন। হেড গত বছর তার সেরা আইপিএল মরসুম কাটিয়েছেন। তিনি একটি শতরান এবং চারটি অর্ধশতরান-সহ ৪০.৫০ গড়ে এবং ১৯১.৫৫ স্ট্রাইক রেটে ৫৬৭ রান করেছেন। হেডের পাওয়ার-হিটিং পুরো মরসুমে অভিষেক শর্মার সঙ্গে একটি শক্তিশালী জুটি তৈরি করে প্রতিপক্ষের বোলারদের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে। স্পিন এবং পেস উভয় বোলিং আক্রমণের বিরুদ্ধে তাঁর আক্রমণাত্মক ব্যাটিং তাঁকে বিরাটের ৯৭৩ রানের রেকর্ড ভাঙার অন্যতম দাবিদার করে তুলেছে। অস্ট্রেলিয়ার এই মারকুটে ব্যাটার যদি তাঁর বিস্ফোরক ফর্ম ধরে রাখেন এবং পুরো মরসুম খেলেন, তাহলে তিনি আইপিএল-এ বিরাটের ৯ বছরের পুরনো রেকর্ড ভেঙে দিতে পারেন।