
২০০৮ সালে প্রথম আইপিএল থেকে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর একজন অন্যতম স্তম্ভ বিরাট কোহলি। তিনি শুধু এই ফ্র্যাঞ্চাইজির সাফল্যে নয়, এর পরিচয় গঠনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। বছরের পর বছর ধরে তাঁর অবিচল নিষ্ঠা, অসাধারণ নেতৃত্ব এবং ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের মাধ্যমে আরসিবি-র মুখ হয়ে উঠেছেন। বিরাট এখন আরসিবি-র হয়ে তাঁর ১৮-তম আইপিএল মরসুমে খেলছেন। এবারের আইপিএল-এ তিনি ৯ ম্যাচে ৬৫.৩৩ গড় এবং ১৪৪.১১ স্ট্রাইক রেটে পাঁচটি অর্ধশতরান-সহ ৩৯২ রান করে দলের শীর্ষ রান সংগ্রাহক। বিরাট একটি আইপিএল দলের হয়ে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন। তিনি ২৬১ ম্যাচে ৩৯.৪২ গড়ে আটটি শতরান এবং ৬০টি অর্ধশতরান-সহ ৮,৩৭৬ রান করেছেন। তবে ২০০৮ সালের আইপিএল-এ নিলামে আরসিবি-র প্রাথমিক পছন্দ ছিলেন না বিরাট। তবে তিনি এই ফ্র্যাঞ্চাইজিতে জায়গা পেয়ে যান।
বিরাট কোহলি প্রথমবার খ্যাতি অর্জন করেন ২০০৮ সালে। সেবার দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে ভারতীয় দল অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জেতে। সেই দলের অধিনায়ক ছিলেন বিরাট। ভারতীয় দলের ভবিষ্যতের অধিনায়ক হিসেবে তাঁর মর্যাদা জাতীয় শিরোনামে আলোচিত হতে শুরু করে। চাপের মুখে তাঁর আক্রমণাত্মক নেতৃত্ব এবং দুরন্ত পারফরম্যান্সের জন্য প্রশংসা অর্জন করেন। সেই বিশ্বকাপে তন্ময় শ্রীবাস্তবের পর ভারতের দ্বিতীয় এবং সামগ্রিকভাবে তৃতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন বিরাট। ৬ ম্যাচে ৪৭ গড়ে একটি শতরান-সহ ২৩৫ রান করেছিলেন বিরাট। তিনি নেতৃত্ব এবং নির্ভীক মনোভাবের সঙ্গে দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যা ভারতের পক্ষে যায়।
২০০৮ সালের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে ভারতীয় দলের অধিনায়কত্ব করার পরেও রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর (তখন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর) প্রথম পছন্দ ছিলেন না বিরাট কোহলি। তাঁর পরিবর্তে ফ্র্যাঞ্চাইজির প্রাথমিক আগ্রহ ছিল মণীশ পাণ্ডেকে নিয়ে। যিনি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে বিরাটের সতীর্থ ছিলেন। সব ফ্র্যাঞ্চাইজি উদীয়মান খেলোয়াড়দের চিহ্নিত করতে তাদের স্কাউটিং দল দক্ষিণ আফ্রিকায় পাঠিয়েছিল। আরসিবি মণীশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল, যিনি দলে যোগদানের বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। তবে স্বাক্ষরের দিন মণীশের সঙ্গে আরও কয়েকটি ফ্র্যাঞ্চাইজি বেশি সুযোগ-সুবিধা নিয়ে যোগাযোগ করেছিল। যা তিনি আরসিবি-কে জানিয়েছিলেন। এই পরিস্থিতির ফলে বিসিসিআই ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলির মধ্যে খেলোয়াড়দের ন্যায্য এবং স্বচ্ছ বরাদ্দ নিশ্চিত করার জন্য অনূর্ধ্ব-১৯ ড্রাফট সিস্টেম নিয়ে আসে।
বিরাট কোহলি মূল নিলামের অংশ ছিলেন না। কারণ বিসিসিআই অনূর্ধ্ব-১৯ খেলোয়াড়দের জন্য একটি পৃথক ড্রাফট সিস্টেম বরাদ্দ করেছিল। মূল নিলামের পর ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলিকে একটি পূর্বনির্ধারিত ক্রমে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ বিজয়ী দল থেকে খেলোয়াড় বেছে নিতে বলা হয়েছিল। মণীশ পাণ্ডেকে বেছে নিয়েছিল মুম্বই ইন্ডিয়ানস। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু ১২ লক্ষ টাকায় বিরাটকে দলে নেয়।
আইপিএল ২০০৮ নিলামে আরসিবি অনূর্ধ্ব-১৯ ড্রাফট থেকে বিরাট কোহলিকে বেছে নেওয়ার পর এই ফ্র্যাঞ্চাইজির তৎকালীন কর্ণধার বিজয় মালিয়া সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে লিখেছিলেন, 'যখন আমি আরসিবি ফ্র্যাঞ্চাইজির জন্য বিড করেছিলাম এবং আমি বিরাটের জন্য বিড করেছিলাম, তখন আমার ভিতরের প্রবৃত্তি আমাকে বলেছিল যে আমি এর চেয়ে ভালো পছন্দ করতে পারতাম না। আমার ভিতরের প্রবৃত্তি আমাকে বলে যে আইপিএল ট্রফি জেতার সবচেয়ে ভালো সুযোগ আরসিবি-র রয়েছে। শুভকামনা।'
রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু দলে সুযোগ পাওয়ার পর শুরুতে বিরাট কোহলি কোনও প্রভাব ফেলতে পারেননি। কারণ তিনি ৪৫ ম্যাচে ২১.৭৫ গড়ে দু'টি অর্ধশতরান সহ মাত্র ৭১৮ রান করেছিলেন। অনেকে টি-টোয়েন্টি ফর্ম্যাটে তাঁর অভিযোজন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। অনেক সমালোচনা হলেও, আরসিবি তৎকালীন অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ বিজয়ী অধিনায়ককে দলে ধরে রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। আইপিএল ২০১১ নিলামের আগে আরসিবি শুধুমাত্র বিরাটকে দলে ধরে রেখেছিল। রাহুল দ্রাবিড়, অনিল কুম্বলে, জ্যাক ক্যালিসের মতো তারকা খেলোয়াড়দের ছেড়ে দিয়েছিল।
আইপিএল ২০১১-এ বিরাট কোহলির একটি ব্রেক-থ্রু মরসুম ছিল। সেবার তিনি রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর হয়ে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন। ১৬ ম্যাচে ৪৬.৪১ গড় এবং ১২১.০৮ স্ট্রাইক রেটে চারটি অর্ধশতরান-সহ ৫৫৭ রান করেছিলেন বিরাট। তিনি সবচেয়ে ভালো পারফরম্যান্স দেখান ২০১৬ সালে। সেবার ১৬ ম্যাচে ৮১.০৮ গড় এবং ১৫২.০৩ স্ট্রাইক রেটে ৪টি অর্ধশতরান এবং ৭টি শতরান-সহ ৯৭৩ রান করেছিলেন।