খেলার সঙ্গে পড়াও জরুরি, মহামেডান স্পোর্টিং মাঠে খুদে ফুটবলারদের বার্তা কাফুর
কাতারে বিশ্বকাপ ফুটবল শুরু হওয়ার ঠিক আগে কলকাতায় কাফু। শনিবার বিকেলে মহামেডান স্পোর্টিং মাঠে বল পায়ে নেমে পড়লেন ব্রাজিলে বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক। বয়স তাঁর খেলায় ছাপ ফেলতে পারেনি। এখনও ফিটনেস ধরে রেখেছেন তিনি। গড়ের মাঠ তাঁর পায়ের কাজের সাক্ষী হয়ে থাকল।
শনিবার কলকাতা পুলিশ ফ্রেন্ডশিপ কাপ উদ্বোধনে মহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব মাঠে পৌঁছন ব্রাজিলের বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক কাফু। তাঁকে স্বাগত জানাতে সেজে উঠেছিল সাদা-কালো তাঁবু ও মাঠ। কাফুর সঙ্গে ছিলেন তাঁর স্ত্রী। কলকাতার ফুটবলপ্রেমের কথা শুনেছিলেন কাফু। এই শহরে এসে তিনি এখানকার ব্রাজিল সমর্থকদের উন্মাদনা প্রত্যক্ষ করছেন। কাফু ও তাঁর স্ত্রী কলকাতায় এসে খুশি।
কাফুতে স্বাগত জানাতে মহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের মাঠে হাজির হন রাজ্যের ক্রীড়া ও যুবকল্যাণ মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, ক্রীড়া ও যুবকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী তথা ক্রিকেটার মনোজ তিওয়ারি, টেনিস তারকা লিয়েন্ডার পেজ। ছিলেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল। কাফুকে এদিন সংবর্ধনা জানানো হয়। তাঁর হাতে নানা উপহার তুলে দেওয়া হয়।
কাফুকে স্বাগত জানিয়ে মার্চ পাস্ট করে কলকাতা পুলিশের ৯টি দল
শনিবার কাফুকে স্বাগত জানিয়ে মহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের মাঠে মার্চপাস্ট করে কলকাতা পুলিশের ৯টি ডিভিশনের বিশেষ দল। মঞ্চ থেকে অভিবাদন গ্রহণ করেন কাফু। সেই সময় তাঁর পাশে ছিলেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার ও রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী। কলকাতা পুলিশের কর্মী ও খুদে ফুটবলারদের উদ্দেশ্যে হাত নাড়েন কাফু।
কলকাতা পুলিশের প্রতিনিধিদের হাতে জার্সি তুলে দেন কাফু
কলকাতা পুলিশের ৯টি ডিভিশনের যে দলগুলি এদিন মার্চপাস্ট করে, সেই দলগুলির প্রতিনিধিদের হাতে জার্সি তুলে দেন কাফু। এই কিংবদন্তির হাত থেকে জার্সি উপহার পেয়ে অভিভূত কলকাতা পুলিশের কর্মীরা। তাঁরা মঞ্চেই কাফুর সঙ্গে সেলফি তোলেন। দেদার অটোগ্রাফও বিলোতে দেখা যায় কাফুকে। ভালবাসার অত্যাচারে এতটুকু বিরক্ত হননি এই তারকা।
কাফুর সঙ্গে একই মঞ্চে, স্বপ্নপূরণ হল, বললেন অরূপ বিশ্বাস
এদিন কাফুকে স্বাগত জানান কলকাতার পুলিশ কমিশনার। তিনি কলকাতার ফুটবলপ্রেম, ব্রাজিলের প্রতি কলকাতার মানুষের ভালবাসার কথা উল্লেখ করেন। ক্রীড়ামন্ত্রী বলেন, কাফুর মতো একজন কিংবদন্তির সঙ্গে একই মঞ্চে থাকতে পারবেন, এটা তিনি কোনওদিন ভাবতে পারেননি। তাঁর স্বপ্নপূরণ হল। ২০০২ বিশ্বকাপে কাফুর খেলা তাঁর মনে আছে।
কাফুকে তলোয়ার উপহার দিলেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার
এদিন কাফু ও তাঁর স্ত্রীকে নানা উপহার, স্মারক তুলে দেন ক্রীড়ামন্ত্রী ও কলকাতার পুলিশ কমিশনার। তার মধ্যে একটি উপহার ছিল শৌর্যের প্রতীক তলোয়ার। এই উপহার পেয়ে কাফু খুব খুশি হন। সেই সময় তাঁর পাশেই ছিলেন লিয়েন্ডার পেজ। লিয়েন্ডারের সঙ্গে এই উপহারের বিষয়ে কথাও বলতে দেখা যায় কাফুকে। লিয়েন্ডার তাঁকে কলকাতার মানুষের ভালবাসা, আবেগের বিষয়টি বুঝিয়ে বলেন।
মঞ্চে যতক্ষণ ছিলেন খোশমেজাজেই দেখা যায় কাফুকে। কিন্তু মাঠে নামতেই তিনি অন্য মেজাজে। জাদুবলে তখন কলকাতার ফুটবলপ্রেমীরা ফিরে গিয়েছিলেন দু'দশক আগে। যখন ব্রাজিলের হয়ে মাঠ কাঁপাতেন কাফু। রাইট উইং ধরে তাঁর দৌড়, নিখুঁত ক্রস এখনও ফুটবলপ্রেমীদের মনে আছে। মহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের মাঠ এই ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তির বুটের স্পর্শ পেল। এই মাঠেই বলকে কথা বলালেন কাফু।
৫২ বছর ৬ মাস বয়সেও ফিটনেস বজায় রেখেছেন ব্রাজিলের তারকা
কাফুর জন্ম ১৯৭০ সালের ৭ জুন। তাঁর বয়স এখন প্রায় ৫২ বছর ৬ মাস। কিন্তু এই বয়সেও তাঁর ফিটনেস তাক লাগিয়ে দেওয়ার মতো। মাঠে সারাক্ষণ দৌড়তে দেখা গেল তাঁকে। খেললেন মাঝমাঠে। বেশিরভাগ সময়ই তাঁর দল আক্রমণ করায় রক্ষণ সামাল দিতে হয়নি। নিজে গোল করলেন, অন্যদের দিয়ে গোল করালেন কাফু। তাঁর দল কলকাতা পুলিশ অলস্টারের বিরুদ্ধে জিতল ৪-০ গোলে।
কলকাতার দর্শকদের ব্রাজিলিয়ান ফুটবল দক্ষতার ঝলক দেখালেন কাফু
কলকাতায় খেলে গিয়েছেন দুঙ্গা, বেবেতো, গার্ড মুলার, পল ব্রাইটনার, অলিভার কান। এই শহর দেখেছে দিয়েগো মারাদোনাকেও। এবার গড়ের মাঠ সাক্ষী থাকল কাফুর ফুটবল দক্ষতার। বারবার কাফু বুঝিয়ে দিলেন, বয়স তাঁর খেলায় ছাপ ফেলতে পারেনি। বিপক্ষের ডিফেন্ডারদের ড্রিবল করে মাঠে ছিটকে ফেলে দিলেন কাফু। বক্সের মধ্যে তাঁকে আটকাতে গিয়ে পেনাল্টি দিতে বাধ্য হলেন কলকাতা পুলিশ অলস্টার দলের গোলকিপার। কাফুর খেলা দেখে মুগ্ধ মহামেডান স্পোর্টিং মাঠে উপস্থিত ফুটবলপ্রেমীরা।
মহামেডান স্পোর্টিং মাঠে খুদে ফুটবলারদের সঙ্গে সেলফি কাফুর
এদিন ম্যাচের শেষদিকে নিজেই সাইড লাইনের ধারে গিয়ে খুদে ফুটবলারদের ডেকে নেন কাফু। সঙ্গে সঙ্গে ছুটে যায় একঝাঁক তরুণ ফুটবলার। তারা এই কিংবদন্তিকে ঘিরে ধরে। নিজেই মোবাইল ফোন হাতে নিয়ে তাদের সঙ্গে সেলফি তোলেন কাফু। তিনি দোভাষী এডুর মাধ্যমে বলেন, খেলার সঙ্গে পড়াশোনা করাও সমান জরুরি। কোনও বাচ্চা যেন স্কুলছুট না হয়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।