দেশে ফিরেই বাবার গলায় অলিম্পিকের পদক পরিয়ে দিলেন শ্রীজেশ। হকি মাঠের দ্য ওয়াল-ের নায়ক কেন তার বাবা, জানেন?
ক্রিকেট মাঠে একসময় রাহুল দ্রাবিড়কে বলা হত 'দ্য ওয়াল'। টোকিও ২০২০ অলিম্পিকে ভারত খুঁজে পেয়েছে তার নতুন 'দেওয়াল'কে, হকি মাঠে। গোলরক্ষক পিআর শ্রীজেশ, শেষ কয়েক মিনিটে গোলের সামনে দেওয়াল না হয়ে উঠলে ব্রোঞ্জ পদক জেতাই হত না ভারতের। সেই হকি মাঠের হিরো দেশে ফিরেই তার ব্রোঞ্জের পদক পরিয়ে দিলেন তার বাবার রবীন্দ্রনের গলায়। যিনি কৃষিজীবী হয়েও, একসময় তরুণ শ্রীজেশকে হকি গোলকিপারের সাজ সরঞ্জাম কিনে দেওয়ার জন্য নিজের একটি গরু বিক্রি করে দিতে দ্বিধা করেননি।
এদিন, কোচি বিমানবন্দরে এসে পৌছান শ্রীজেশ। বিমানবন্দরেই অপেক্ষা করছিলেন তার বাবা-মা এবং স্ত্রী-পুত্র-কন্যা সহ পরিবারের সকলে। বিমান থেকে নামার সময় অলিম্পিক ব্রোঞ্জ পদকটি ভারতীয় হকি দলের গোলরক্ষকের গলাতেই ছিল। কিন্তু, বাবার দেখা পেতেই তিনি পদকটি নিজের গলা থেকে খুলে পুত্রগর্বে গর্বিত বাবার গলায় পরিয়ে দেন। বস্তুত, পদক জয়ের পরই টুইট করে পিআর শ্রীজেশ তার পদক জয় তার আচান বা বাবাকেই উৎসর্গ করেছিলেন। বাবাকেই নিজের জীবনের নায়ক বলে উল্লেখ করে বলেছিলেন, তিনি আজ যা কিছু, সবই বাবার জন্য।
বস্তুত, ছোটবেলায় শ্রীজেশ বেশ কয়েকটি খেলাতেই সম্ভাবনা দেখিয়েছিলেন। ১৯৯০-এর দশকে, জেলা-পর্যায়ের ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় স্প্রিন্টিং এবং ভলিবলে তিনি বিশেষ দক্ষতা দেখিয়েছিলেন। ক্লাস সেভেনে পড়ার সময় খেলাধুলার জোরেই তিনি তিরুঅনন্তপুরমের জিভি রাজা স্পোর্টস স্কুলে পড়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। এই স্কুলে খেলাধুলায় আলাদা করে মনোযোগ দেওয়া হয়। কিশোরটি শ্রীদেশ বিভিন্ন খেলাধুলাতেই হাত পাকানোর চেষ্টা করলেও, হকি গোলরক্ষক হিসাবেই তাকে সবচেয়ে উপযুক্ত বলে মনে করেছিলেন তার শিক্ষকরা। কিন্তু, তার জন্য যে সাজ-সরঞ্জামের প্রয়োজন ছিল, তার দাম ছিল প্রায় ১০,০০০ টাকা।
আরও পড়ুন - Afghanistan - বিশেষ বিমানে দেশ ছাড়ছেন ভারতীয়দের, শহর ঘিরে তীব্র হামলা চালাল তালিবান
আরও পড়ুন - গলায় ক্যারাটের বেল্ট পেঁচিয়ে মা'কে হত্যা করল কিশোরী, চাঞ্চল্যকর ঘটনায় উঠছে গুরুতর প্রশ্ন
আরও পড়ুন - জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকা নিয়ে রয়েছে বিতর্ক, কতটাই বা কার্যকর এই ভ্য়াকসিন - জেনে নিন
তার বাবা রবীন্দ্রন একজন সাধারণ কৃষিজীবী। তার পক্ষে ওই অর্থ সংগ্রহ করা খুবই সমস্যার ছিল। কিন্তু, ছেলের খেলাধূলার কথা ভেবে, একবারও না ভেবে তিনি খুশি মনে তার পাঁচটি গরুর একটি বিক্রি করে দিয়েছিলেন। তাতে এসেছিল ৭,০০০ টাকা। বাকি টাকাটারও ব্যবস্থা করেছিলেন তিনি। তিনি জানিয়েছেন, সীমিত উপায়েই সন্তানদের সর্বোত্তম সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন তিনি। তবে ছেলের খেলা সামনে থেকে দেখার তার বিশেষ সুযোগ হয়নি। ২০০২-২০০৩ সালে েকবার জুনিয়র ন্যাশনাল ক্যাম্পের জন্য শ্রীজেশের সঙ্গে দিল্লি গিয়েছিলেন তিনি, ব্যাস। তবে, শেষ কয়েকদিন ধরে তাদের বাড়ি জুড়ে শুধুই ছিল অলিম্পিক হকি।
শ্রীজেশের বাবা আরও জানিয়েছেন, ছোট থেকেই খেলাধূলার পাশাপাশি পড়াশোনাতেও ভাল ছিলেন তিনি। স্কুলে নম্বরও ভাল পেতেন। আর সেই পড়ার প্রতি ভাল লাগাটা এখনও র.য়ে গিয়েছে। তার বাবার জানিয়েছেন, কোভিড-১৯ লকডাউনের সময় হকি অনুশীলনও বন্ধ ছিল। ফলে শ্রীজেশ ও তার সতীর্থদের কিছু করার ছিল না। সেই সময় যেন বইয়ের প্রতি শ্রীজেশের ভালবাসা আরও বেড়েছে। যখন তার সতীর্থ এবং রুমমেটরা মোবাইল গেমস খেলে সময় কাটাতো, শ্রীজেশ বসে যেত কোনও একটি বই নিয়ে। হকি এবং বই, এর বাইরে তার আর কোন আগ্রহই নেই!