
ভারতের বিখ্যাত ব্যাডমিন্টন কোচ এবং প্রাক্তন খেলোয়াড় পুল্লেলা গোপীচাঁদ ভারতীয় ক্রীড়া জগতের একটি তিক্ত সত্য উন্মোচন করেছেন। একটি সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, একজন খেলোয়াড়ের বাবা-মা আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী না হলে তাঁদের পক্ষে খেলাধুলাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করা কঠিন হতে পারে। তার এই মন্তব্য সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে উঠেছে।
পুল্লেলা গোপীচাঁদ এই সাক্ষাৎকারে স্পষ্ট করে বলেছেন যে তাঁর বক্তব্য ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। “আমি যা বলতে চেয়েছিলাম তা পুরোপুরি প্রকাশ করতে পারিনি। একটি সংবাদপত্রে যখন একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়, তখন সম্পাদনা অনেক স্তরে হয়। সেজন্যই কখনও কখনও বিষয়বস্তুর প্রেক্ষাপট বদলে যায়,” বলেছেন গোপীচাঁদ।
৫১ বছর বয়সি এই কোচ বলেছেন, কাউকে নিরুৎসাহিত করা তার উদ্দেশ্য নয়, তবে খেলাধুলায় কেরিয়ার গড়া সহজ নয়। প্রতি বছর হাজার হাজার তরুণ খেলোয়াড় কঠোর পরিশ্রম করেন, কিন্তু তাঁদের মধ্যে মাত্র কয়েকজনই সফল হন। জাতীয় চ্যাম্পিয়ন বা এশিয়ান গেমসের পদক বিজয়ী অনেক খেলোয়াড়েরও চাকরি নেই।
পুল্লেলা গোপীচাঁদ আরও বলেছেন, “আমিও একটা মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে এসেছি, অনেক সংগ্রামী খেলোয়াড়কে দেখেছি যারা সাফল্য পেয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হল, যারা শীর্ষে পৌঁছাতে পারেনি তাদের ভবিষ্যৎ কী হবে?”
খেলাধুলায় কেরিয়ার গড়া সহজ নয় বলে মন্তব্য করেছেন পুল্লেলা গোপীচাঁদ। “প্রতি বছর হাজার হাজার তরুণ-তরুণী তাদের স্বপ্ন পূরণের জন্য সবকিছু উৎসর্গ করে, কিন্তু তাদের মধ্যে মাত্র কয়েকজনই সফল হয়। প্রশ্ন হল, যারা জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ভালো খেলেও সরকারি চাকরি বা অন্যান্য আর্থিক সহায়তা পায় না, তাদের কী হবে?”
খেলোয়াড়রা যাতে কোনও ভয় ছাড়াই খেলাধুলাকে তাদের জীবন হিসেবে বেছে নিতে পারে, সেজন্য তাদের একটি সুরক্ষিত ভবিষ্যৎ দেওয়া উচিত। অন্যথায়, পরবর্তী প্রজন্ম এই খেলা নিয়ে উৎসাহী হবে না, বলেছেন পুল্লেলা গোপীচাঁদ।
ভারতীয় ক্রীড়া সংস্থা কি খেলোয়াড়দের পর্যাপ্ত সহায়তা দিচ্ছে না, এমন প্রশ্নের জবাবে পুল্লেলা গোপীচাঁদ ক্রীড়া প্রশাসনের ত্রুটিগুলি তুলে ধরেন। খেলার কর্মকর্তাদের চিন্তাভাবনা কেবল পরবর্তী অলিম্পিকের মধ্যেই সীমাবদ্ধ, এটাই সমস্যা বলে মনে করেন গোপীচাঁদ। খেলোয়াড়রা যাতে সুরক্ষিত কেরিয়ার পায়, সেজন্য তাদের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করা উচিত।
“৫০ বছর বয়সে একজন প্রাক্তন খেলোয়াড় যদি তার সন্তানদের বলে যে সে একজন অলিম্পিক খেলোয়াড় ছিল, কিন্তু তার কোনও পরিচয় নেই, তাহলে এটা খুবই দুঃখজনক পরিস্থিতি হবে,” বলেন পুল্লেলা গোপীচাঁদ।
২০০১ সালে অল ইংল্যান্ড চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ী পুল্লেলা গোপীচাঁদ সাইনা নেহওয়াল এবং পি.ভি. সিন্ধুর মতো খেলোয়াড়দের অলিম্পিক্সে পদক জেতার জন্য প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। খেলোয়াড়রা যাতে তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে নিরাপত্তাহীনতা বোধ না করে, সেজন্য একটি 'সেফটি নেট' তৈরি করা উচিত, এই তার স্পষ্ট মন্তব্য ভারতীয় ক্রীড়া প্রশাসনের উপর একটি গুরুত্বপূর্ণ সমালোচনা।