বিশ্বের করোনা আক্রান্ত দেশের তালিকায় এখনও এক নম্বরে রয়েছে আমেরিকা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আক্রান্তের সংখ্যা ১৬ লক্ষ ছাড়িয়ে গিয়েছে। মৃতের সংখ্যা এক লক্ষ ছুঁতে চলেছে। এই অবস্থাতেও হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইনের প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভালবাসা একটুও কমেনি। এমনকি তিনি নিজেও নিয়মিত হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন সেবন করছেন বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। কিন্তু করোনার প্রতিষেধক হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প যে ওধুষ খাওয়ার কথা বলছেন, তা প্রকৃতপক্ষে কোভিড-১৯ রোগীদের মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়িয় দিচ্ছে। যুক্তরাজ্য ভিত্তিক প্রসিদ্ধ মেডিক্যাল জার্নাল 'দ্য ল্যানসেট'-এর এক গবেষণা প্রতিবেদনে এমনটাই দাবি করা হয়েছে।
হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের এক সহযোগী করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে মার্কিন প্রেসিডেন্টের নিয়মিত করোনা পরীক্ষা হচ্ছে। তবে এখনও পর্যন্ত তার পরীক্ষায় ফল নেগেটিভ এসেছে বলে দাবি করেছেন স্বয়ং মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তাঁর মধ্যে করোনার কোনোও উপসর্গ নেই। কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি করোনার প্রতিষেধক হিসেবে নিয়মিত হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন ওধুষ খাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প। কারণ, তিনি মনে করেন, এই ওষুধ ভালো। এই ওষুধ সম্পর্কে অনেক ভালো কথা শুনেছেন তিনি। হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইনের সঙ্গে জিঙ্কও খাওয়ার কথা জানান ট্রাম্প।
কিন্তু ইউনিভার্সিটি হসপিটাল জুরিখের সর্বশেষ একটি গবেষণা বলছে, হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন ব্যবহারে করোনার রোগীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে দেখা গেছে। মেডিকেল জার্নাল ‘দ্য ল্যানসেট’-এ প্রকাশিত ওই গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন এবং ক্লোরোকুইন দিয়ে করোনা চিকিৎসার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায় বিপজ্জনক হার্ট অ্যারিথিমিয়া রোগের সৃষ্টি হতে পারে, এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে।
হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন মূলত ম্যালেরিয়ার ওষুধ। ম্যালেরিয়ার চিকিৎসায় হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন ওষুধ নিরাপদ। কিন্তু করোনার চিকিৎসায় এই ওধুধের কার্যকারিতা এখন পর্যন্ত প্রমাণিত হয়নি। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, করোনায় এই ওষুধ খেলে হৃদযন্ত্রে সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। ল্যানসেট-এর গবেষণামূলক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, করোনা রোগীদের চিকিৎসায় ম্যালেরিয়ার ওষুধ হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন ব্যবহারের কোনো উপকারিতা নেই।ল্যানসেট-এর গবেষণাটি ৯৬ হাজার করোনা রোগীর ওপর করা হয়। তাঁদের মধ্যে প্রায় ১৫ হাজার রোগীকে হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন বা একই জাতীয় ওষুধ দেওয়া হয়েছিল।
গবেষণায় দেখা যায়, তুলনামূলকভাবে হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন গ্রহণকারী করোনা রোগীদের হাসপাতালে মৃত্যুর আশঙ্কা ও হৃদযন্ত্রে সমস্যার অভিযোগ বেশি। হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন গ্রহণকারী করোনা রোগীদের মধ্যে মৃত্যুর হার ১৮ শতাংশ। ক্লোরোকুইন গ্রহণকারী করোনা রোগীদের মধ্যে মৃত্যুর হার ১৬.৪ শতাংশ। আর নিয়ন্ত্রিত গ্রুপে মৃত্যুর হার ৯ শতাংশ। এই অবস্থায় গবেষকেরা সতর্ক করেছেন, ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল ছাড়া কোনোভাবেই হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন ওষুধ করোনার চিকিৎসায় ব্যবহার করা উচিত হবে না।