গোটা বিশ্বের সঙ্গে তাল রেখে নেপালেও বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। এখনও পর্যন্ত দেশটিতে ৪০২ দনের শরীরে মিলেছে সংক্রমণ। মারণ ভাইরাসের কবলে পড়ে প্রাণ হারিয়েছেন ২ জন। পরিস্থিতি সামলাতে দেশে লকডাউন ঘোষণা করেছে নেপাল সরকার। এরমধ্যেই ভারত নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করলেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি ওলি। চিন এবং ইতালির থেকেও ভারতের করোনাভাইরাস ভয়ঙ্কর। সংসদে বক্তব্য রাখতে গিয়ে এমন মন্তব্য করে বসেন ওলি। দেশে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার জন্য ভারতকেই কাঠগড়ায় তোলেন নেপালি প্রধানমন্ত্রী।
নেপালে মহামারী ছড়িয়ে পড়ার পরর ওলির এটাই ছিল সংসদে প্রথম ভাষণ। নেপালি প্রধানমন্ত্রী বলেন, "ভারত থেকে যারা অবৈধ ভাবে এদেশে এসেছেন, তাদের থেকেই ছডিয়েছে ভাইরাস, আর এজন্য স্থানীয় কিছু জনপ্রতিনিধি এবং রাজনৈতিক দলের নেতা দায়ি, যারা ঠিকমত পরীক্ষা না করেই এই মানুষগুলিকে দেশে নিয়ে এসেছেন।"
আরও পড়ুন: করোনাই নাকি মূল কারণ, বেবি পাউডারের বিক্রি বন্ধে করে দিল বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড জনসন
এরপরেই ওলি বিতর্কিত মন্তব্যটি করেন। বলেন, "বাইরে লোকের প্রবেশের ফলে দেশে কোভিড-১৯ পরিস্থিতি সঙ্গীন হয়েছে। ভারতীয় ভাইরাসটিকে এখন চিন ও ইতালির তুলনায় মারাত্মক মনে হচ্ছে। যার জন্য মানুষ বেশি সংক্রামিত হচ্ছেন।" ওলির এই ধরণের মন্তব্যে নয়াদিল্লি স্বভাবতই ক্ষুব্ধ।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী ওলির ভারত বিরোধী মন্তব্যের আগেই দেশের নয়া মানচিত্র প্রকাশ করেছে নেপাল। যেখানে ভারতের ভূখণ্ডকে নিজের বলে দাবি করা হয়েছে। যা নিয়ে জোড় বিতর্ক তৈরি হয়েছে।
আরও পড়ুন: এবার ইরানের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলা শুরু করল ভারত, দেশে একদিনে ফের রেকর্ড বৃদ্ধি আক্রান্তের
এবার ভারতের কালাপানি, লিপুলেখ ও লিমপিয়াধুরা অঞ্চলকে নিজেদের মানচিত্রে অন্তর্ভুক্ত করেছে কাঠমাণ্ডু। মন্ত্রিসভার একটি বৈঠকের পর নেপাল সরকারের মুখপাত্র ও অর্থমন্ত্রী যুবরাজ খাটিওয়াদা জানিয়েছেন , অনতিবিলম্বে নতুন এই মানচিত্র কার্যকর হবে। নয়া মানচিত্রের কথা ঘোষণা করেন নেপালের বিদেশমন্ত্রী প্রদীপ গিয়াওয়ালি। তিনি জানান, নয়া মানচিত্রটি শীঘ্রই জনসমক্ষে প্রকাশ করবে ভূমিমন্ত্রক। এদিকে, পরিস্থিতি আরও ঘোরাল করে ভারতের ‘দখলে থাকা’ কালাপানি, লিপুলেখ ও লিমপিয়াধুরা অঞ্চলকে ফেরানোর দাবি জানিয়ে নেপালের সংসদে একটি প্রস্তাব পেশ করেছে সে দেশের ক্ষমতায় থাকা কমিউনিস্ট পার্টি।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, মানস সরোবর পর্যন্ত তীর্থযাত্রা আরও সুগম করতে উত্তরাখণ্ড থেকে লিপুলেখ পাস পর্যন্ত ৮০ কিলোমিটার সড়ক তৈরি করেছে ভারত সরকার, যা নিয়ে ক্ষুব্ধ নেপাল। ওই সড়ক দেশের সার্বভৌমত্বে আঘাত বলে আগেই তোপ দেগেছে কাঠমাণ্ডু। এবার পরিস্থিতি আরও জটিল করে কয়েকদিন আগে ভারত-নেপাল সীমান্তে অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করার কথা জানিয়েছিলেন বিদেশমন্ত্রী প্রদীপ গিয়াওয়ালি। তাঁর দাবি, নেপালের জমিতে সড়ক তৈরি করে ভারত দু’দেশের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তি লঙ্ঘন করছে। ১৮১৬ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ও নেপালের তৎকালীন রাজার মধ্যে স্বাক্ষরিত সুগাউলি চুক্তিতে সাফ বলা হয়েছে মহাকালি নদীর পূর্বের অংশ নেপালের। ১৯৮৮ সালের বৈঠকেও ভারত স্থায়ী সীমান্ত মেনে চলতে রাজি হয়েছিল। এদিকে, পড়শি দেশের দাবি উড়িয়ে দিয়েছে ভারত। সড়কটি ভারতীয় জমিতে তৈরি বলে সাফ জানিয়েছে নয়াদিল্লি।
ভারতের প্রভাব বাড়তে চলেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায়, এক্সিকিউটিভ চেয়ারম্যান হচ্ছেন হর্ষ বর্ধন
৮ই মার্চ উত্তরাখণ্ডের পিথাউরাগড়-লিপুলেখের মধ্যে ওি সড়কের উদ্বোধন করেছিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। তার পর থেকেই বিবাদের শুরু। নেপালের দাবি, ওই ভূখণ্ড তাঁদের। রাস্তা উদ্বোধনের সময় কাঠমাণ্ডুতেতে ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে নিজেদের আপত্তির বিষয়টি উল্লেখ করে একটি কূটনৈতিক নোট দেয় নেপাল সরকার। কিন্তু ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে এক বিবৃতিতে জানিয়ে দেওয়া হয়, ওই ভূখণ্ড কোনওদিনই নেপালের ছিল না। তাই সেখানে রাস্তা নির্মাণের অধিকার ভারতের রয়েছে। এর পর থেকেই নেপালের রাজনীতিতে ভারত বিরোধী স্লোগান উঠতে শুরু করেছে।
নেপাল ও ভারতের মধ্যে ১৬ হাজার কিলোমিটারের বেশি খোলা সীমান্ত রয়েছে। যার মধ্যে বেশ কয়েকটি জায়গার অধিকার নিয়ে দুই দেশের মধ্যে বিরোধ রয়েছে। কালাপানি, লিপুলেখ এবং সুস্তা নিয়ে ভারত ও নেপালের দ্বন্দ্ব রয়েছে। এদিকে গত কয়েকবছর হল চিনের সঙ্গে নেপালের ঘনিষ্ঠতা বেড়েছে। বেজিংয়ের নির্দেশেই নেপাল ভারতের বিরোধিতা শুরু করেছে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা। ভারতের সেনাপ্রধান মনোজ মুকুন্দ নারাভানে সাফ জানিয়েছেন, ভারত ও নেপালের মধ্যে গোলমাল বাধানোর চেষ্টা করছে অন্য এক শক্তি। পরোক্ষে তিনি যে চিনের দিকেই আঙুল তুলছেন তা স্পষ্ট।