হুইলচেয়ারে এক মাস পার মমতার, এই ইমেজ কি সত্যিই সাহায্য করছে মুখ্যমন্ত্রীর ভোটবাক্সকে

  • হুইলচেয়ারে এক মাস পার করে ফেললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
  • গত ১০ মার্চ নন্দীগ্রামের বিরুলিয়া বাজারের কাছে দুর্ঘটনায় পায়ে চোট পান মমতা
  • নববর্ষের দুপুরে কলকাতার রাস্তায় হুইলচেয়ার টানতে দেখা গিয়েছে অভিনেত্রী জয়া বচ্চনকে
  • হুইলচেয়ারে বন্দি এই ইমেজ কি সত্যিই সাহায্য করছে মমতার ভোটবাক্সকে

শামিকা মাইতি:  হুইলচেয়ারে এক মাস পার করে ফেললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এখনও পা সারল না তাঁর।গত ১০ মার্চ নন্দীগ্রামের বিরুলিয়া বাজারের কাছে এক দুর্ঘটনায় পায়ে চোট পান মমতা। সঙ্গে সঙ্গে গ্রিন করিডর করে কলকাতায় নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। কয়েক দিন হাসপাতালে থাকার পর তিনি হুইলচেয়ারে বাড়ি ফেরেন। এরপর ওই হুইলচেয়ারে বসেই মমতা জেলাসফরে বেরিয়ে পড়েন। সেই নিয়ে গেরুয়া-সহ বিরোধী শিবিরগুলি থেকে নানা কটাক্ষ উড়ে এলেও হুইলচেয়ার ছাড়েননি মমতা। এমনকী নববর্ষের দুপুরে কলকাতার রাস্তায় তাঁর হুইলচেয়ার টানতে দেখা গিয়েছে সমাজবাদী পার্টির নেত্রী তথা অভিনেত্রী জয়া বচ্চনকে। 

আরও পড়ুন-পঞ্চমদফার আগে BJP-র কার্যালয়ে আগুন, ফের কাঠগড়ায় তৃণমূল...

Latest Videos

কিন্তু  হুইলচেয়ারে বন্দি এই ইমেজ কি সত্যিই সাহায্য করছে মমতার ভোটবাক্সকে? 

রাজনীতির কারবারিদের মতে, সব কিছুর ভাল-মন্দ দিক থাকে। হুইলচেয়ার-রাজনীতিরও দু’দিকই আছে। মন্দ দিকেরও সবচেয়ে খারাপটা হল, মমতার দাপুটে লড়াকু ইমেজকে চাপা ফেলে দিয়েছে হুইলচেয়ারের অসহায়ত্বের ছবি। সব রাজনৈতিক নেতারই জনসংযোগের নিজস্ব স্টাইল থাকে। মমতা মঞ্চে এদিক-ওদিক করে কথা বলেন, ছুটে বেড়ান, গ্রামে লোকের বাড়িতে ঢুকে পড়েন হুটহাট। এখন হুইলচেয়ারে বসে এসব করতে পারছেন না মমতা। যদিও জ্বালাময়ী বক্তৃতা দিয়ে,  মঞ্চ থেকে বল ছুড়ে এই খামতি ঢাকার চেষ্টা করছেন তিনি। কিন্তু সুর-তাল তাতে জোড়া লাগেনি।

 

 

দ্বিতীয়ত, এই ঘটনার সত্যতা নিয়ে জনমনে সংশয় তৈরি হয়েছে, যা মমতার বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। প্রথমত, এটি দুর্ঘটনা না চক্রান্ত, তা নিজেই বারবার গুলিয়েছেন মমতা। ঘটনার পরে পরেই চক্রান্তের অভিযোগ করেছিলেন তিনি। পরে হাসপাতালের শয্যা থেকে যে ভিডিও শেয়ার করেন, সেখানে  তার উল্লেখ ছিল না। কিছু দিন পরে আবার ভোটপ্রচারে গিয়ে চক্রান্তের কথাই বললেন মমতা এবং এর জন্য দায়ী করলেন একদা সঙ্গী অধুনা প্রতিপক্ষ শুভেন্দু অধিকারীকে। মমতার কথায়, ‘ভোটের সময় তুই আমার পা জখম করিয়েছিস। আমি চেপে গেছি ভদ্রতা করে। আজও আমায় পা ভাঙা নিয়ে হুইলচেয়ারে বসে মিটিং করতে হচ্ছে। তোমার নির্দেশ ছাড়া এ সব হতে পারে না।’ শুভেন্দু পাগলের প্রলাপ বলে এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। আর নরেন্দ্র মোদী চক্রান্তের অভিযোগকে পাল্টা প্রচারের অস্ত্র করেছেন। কাঁথির এক সভায় মোদীর পাল্টা তীর, ‘আপনারা দেখছেন, নন্দীগ্রামের বদনাম করার জন্য একটার পর একটা মিথ্যা কথা বলে চলেছেন দিদি। দিদি, নন্দীগ্রাম আপনাকে অনেক কিছু দিয়েছে। সেই নন্দীগ্রামের মানুষেরই বদনাম করছেন ? নন্দীগ্রামের আত্মাভিমানী মানুষ এর জবাব দেবেন।’ 

 

 

এদিকে, মমতার আঘাত কতটা গুরুতর তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে বারবার। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তথা বহরমপুরের কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরী বলেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হেলিকপ্টারে উঠছেন সোজা পায়ে, গাড়ি উঠছেন সোজা পায়ে, তারপর তিনি আহত হয়ে হুইলচেয়ারে বসছেন। আসলে হুইলচেয়ারে বসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মানুষের সহানুভূতি আদায় করছেন।’ মমতার চিকিৎসার তথ্য প্রকাশ্যে আনার দাবিও জানিয়েছেন অধীর। তাঁর কথায়, ‘আমরা এক্স-রে রিপোর্ট জনসমক্ষে পেশ করার দাবি জানাচ্ছি। যিনি চিকিৎসা করেছেন, তাঁর রিপোর্টও সর্বসমক্ষে পেশ করা হোক। ভোটের আগে পুরোটাই ভাঁওতাবাজি চলছে। উনি ভন্ডামি করছেন।’ এর মধ্যে নন্দীগ্রামের টেঙ্গুয়ায় এক সভায় জাতীয় সঙ্গীত গাইবেন বলে হুইলচেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন মমতা ও কার্যত এক পায়ে দাঁড়িয়ে জাতীয় সঙ্গীত গান। যা নিয়ে তুমুল আলোচনা চলে।  কিছু দিন পরে নন্দীগ্রামে দলীয় কার্যালয়ে বসে  মমতার ভাঙা পা দোলানোর একটি ভিডিও ভাইরাল হয়ে যায়। ভিডিওটিতে টেবিলের তলায় মমতাকে চোটগ্রস্ত বাঁ পা দোলাতে দেখা যাচ্ছে। একটা সময়ে ব্যান্ডেজ করা বাঁ পায়ের উপরে ডান পা তুলে রাখছেন তিনি। ফেসবুকে ভিডিওটি পোস্ট করে রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র প্রণয় রায় বলেন, ‘আমরা প্রথম থেকে বলছিলাম গোটা ঘটনাটা নাটক। এবার দিদিমনি নিজেই সেটা প্রমাণ করে দিলেন। যে পায়ে ব্যাথার জন্য ওকে হুইলচেয়ার নিয়ে ঘুরতে হয় সেই পা উনি দিব্যি নাচাচ্ছেন।’   হুইলচেয়ার নিয়ে ভোটের বাজারে শত-শত মিম বেরিয়ে গিয়েছে। বিরোধী রাজনৈতিক নেতারা কেউ ‘বারমুডা পরা’র পরামর্শ দিচ্ছেন তো কেউ নাটকের দলে নাম লেখাতে বলছেন। মমতা কিন্তু অবিচল। শত সমালোচনাতেও তাঁর জায়গা থেকে বিন্দুমাত্র সরেননি তিনি। তৃণমূলের এক নেতার কথায়, ‘নেগেটিভ পাবলিসিটিকে ছোট করার কিছু নেই। এ-ও প্রচারের অঙ্গ। ভাল হোক বা মন্দ,  দিদিকে নিয়েই তো কথা বলছে লোকে। দিদি সেটাই চান।’

Share this article
click me!

Latest Videos

চমকে উঠবেন! কৃষ্ণনগর পক্সো আদালতের বড় সাজা ঘোষণা | Nadia Latest News
West Bengal-এ জঙ্গিযোগ নিয়ে Mamata Banerjee-কে চরম তুলোধোনা Agnimitra Paul-এর! দেখুন কী বললেন
জঙ্গি গ্রেফতারে কড়া বার্তা মিঠুনের | Mithun Chakraborty #shorts #mithunchakraborty #shortsvideo
শীতের রাতে যমুনার আতঙ্ক! একের পর এক জঙ্গল দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বাঘিনী | Bandwan Tiger News
'তৃণমূলের দুয়ারে সরকার এখন দুয়ারে জঙ্গি', তীব্র আক্রমণ শুভেন্দু অধিকারীর | Suvendu Adhikari