একুশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিভিন্ন দল থেকে বিজেপিতে যোগদানের যে হিড়িক পড়ে গিয়েছিল তা নিয়ে আগেই আপত্তি জানিয়েছিলেন। ভোটের ফল বেরোনোর পর দিলীপ ঘোষ, কৈলাস বিজয়বর্গীয়দের আক্রমণ করতেও ছাড়েননি। আর এবার যে সব নেতা ফের তৃণমূলে ফিরে যেতে চাইছেন তাঁদের পরোক্ষে মল-মূত্রের সঙ্গে তুলনা করলেন বিজেপি নেতা তথাগত রায়। টুইটারে প্রয়াত সিপিএম নেতা হরেকৃষ্ণ কোঙারের একটি উক্তি তুলে ধরেন তিনি।
শুক্রবার টুইটারে তথাগত লেখেন, "তৃণমূল থেকে বিজেপিতে আসা যে সব নেতা আবার তৃণমূলে ফিরে গেছেন তাঁদের সম্বন্ধে আমি প্রয়াত সিপিএম নেতা হরেকৃষ্ণ কোঙারের একটি মন্তব্যের পুনরাবৃত্তি করছি। "মল মূত্র ত্যাগ করলে মানুষ দুর্বল হয় না, সবলই হয়।" ১৯৬৪ সালে যখন কম্যুনিস্ট পার্টি ভাঙে তখন সিপিআই নেতাদের সম্বন্ধে এই উক্তি।"
রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন তৃণমূলের প্রথমসারির একাধিক নেতা। কিন্তু, ভোটের ফল বের হওয়ার পর ফের তৃণমূলে ফেরার ইচ্ছাপ্রকাশ করছেন তাঁরা। সেই তালিকায় রয়েছেন সোনালি গুহ, দীপেন্দু বিশ্বাস। তৃণমূল সুপ্রিমোকে চিঠি লিখে দলে ফেরার ইচ্ছাপ্রকাশ করেছেন তাঁরা। এমনকী, দল বদলের জন্য ক্ষমাও চেয়ে নিয়েছেন। এছাড়া কয়েকদিন ধরেই কেমন যেন বেসুরো ছিলেন মুকুল রায়। কানাঘুষো শোনা যাচ্ছিল, যে তিনিও নাকি তৃণমূলে ফিরতে চাইছেন। কিন্তু, প্রকাশ্যে তেমন কিছুই বলেননি।
আর মুকুলের ফের ঘাসফুলে ফেরার জল্পনাকে আরও উসকে দেয় তাঁর স্ত্রীকে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দেখতে যাওয়া। চলতি মাসেই মুকুল জায়াকে হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলেন তিনি। বিষয়টি খুবই ভালো লেগেছিল মুকুল পুত্র শুভ্রাংশুর। তবে তার আগে বিজেপির কোনও নেতাকে মুকুলের স্ত্রীর খোঁজ নিতে দেখা না গেলেও তারপরই তড়িঘড়ি 'ড্যামেজ কন্ট্রোল' করতে হাসপাতালে ছুটেছিলেন দিলীপ ঘোষ। যদিও তাঁর ওই সফরকে গুরুত্ব দেননি মুকুল। এমনকী, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সরাসরি ফোন করেন তাঁকে। স্ত্রীর খবর জিজ্ঞাসা করেছিলেন মুকুলকে। তাতেও খুব একটা লাভ হয়নি।
অবশেষে সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে ফিরতে চলেছেন মুকুল রায়। অন্তত তাঁর ঘনিষ্ঠ সূত্রের তেমনই দাবি। সব ঠিক থাকলে শুক্রবারেই সপুত্র তৃণমূল ভবনে যাচ্ছেন মুকুল। সেখানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ তৃণমূলের প্রথম সারির নেতাদের উপস্থিতিতে মুকুল এবং শুভ্রাংশুর রায়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার কথা। কয়েকদিন ধরে বেসুরো রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তবে টুইটারে কারও নাম না করেই সবাইকে আক্রমণ করেছেন তথাগত রায়।
আসলে রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপিতে যখন বিরোধী দলের থেকে একাধিক নেতা-কর্মী যোগ দিচ্ছিলেন তখনই আপত্তি জানিয়েছিলেন তথাগত। এমনকী, ভবানীপুরে প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছাও প্রকাশ করেছিলেন। যদিও দল তাঁকে কোনও গুরুত্ব দেয়নি। তবে ফল বের হওয়ার পর ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন তিনি। দিলীপ ঘোষ, কৈলাস বিজয়বর্গীয়, শিবপ্রকাশ এবং অরবিন্দ মেননকে হারের জন্য দায়ী করেন। একের পর এক টুইটে তাঁদের দিকে আক্রমণ শানান তিনি। যাঁর জন্য তাঁকে দিল্লি থেকে সতর্কও করা হয়।
তবে তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যোগ দেওয়া নেতাদের নিয়ে দলের অন্দরে আগে থেকেই অশান্তি তৈরি হয়েছিল। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দলের পুরোনো কর্মীদের গুরুত্ব না দিয়ে দলবদলুদের গুরুত্ব দেওয়াকে ভালো চোখে নেননি অনেকেই। যার কারণে বিভিন্ন জায়গায় দলের প্রার্থী নিয়ে অসন্তোষ দেখা দিয়েছিল। যদিও তখনকার মতো সবই সামাল দেন বিজেপির প্রথমসারির নেতারা। আর এবার সেই সব নেতাদের ফের তৃণমূলে ফেরার ইচ্ছাপ্রকাশে কটাক্ষ করলেন তথাগত রায়। কার্যত পরোক্ষভাবেই সেই সব নেতাদের 'মল-মূত্র'-এর সঙ্গে তুলনা করলেন তিনি।