প্রায় দেড় দশক আগে জমি আন্দোলনে উত্তাল হওয়া নন্দীগ্রাম নিয়ে এবার মুখ খুললেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। তিনি একটি লিখিত বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রামে জমি রক্ষা আন্দোলনের পিছনে একটি চক্রান্ত ছিল। তিনি আরও লিখেছেন 'কুটিল চক্রান্তের চক্রান্তকারীরা আজ দুভাগে বিভক্ত হয়ে পরস্পরের দিকে কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি করছে।' আর সেই কারণেই রাজ্যের যুবসমাজের কর্মসংস্থানের সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে। সোমবার রাতেই বিবৃতি প্রকাশ করেছেন তিনি।
বুব্দদেব ভট্টাচার্য তাঁর লিখিত বিবৃতিতে সেই সময়ের বামফ্রন্ট তথা সিপিএম-এর স্লোগানের কথাও উল্লেখ করেছেন। তিনি লিখেছেন, সেই সময় থেকেই রাজ্যের সাধারণ মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছিল যে 'কৃষি আমাদের ভিত্তি, আর শিল্প আমাদের ভবিষ্যৎ।' সেই পথ ধরেই তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল। তিনি আরও বলেছেন বর্তমান সরকারের হাতে গত দশ বছর কৃষিতেও রাজ্য পিছিয়ে গেছে বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।তিনি লিখেছেন ' সিঙ্গুর আর নন্দীগ্রামে এখন শ্মশানের নীরবতা। এই রাজ্যে গত এক দশকে কোনও উল্লেখযোগ্য শিল্প আসেনি।' তারপরই তিনি লিখেছেন বাংলার মেধা ও কর্মদক্ষতা - যা আমাদের সম্পদ তা বাংলা ছেড়ে চলে গেছে।
লিখিত বিবৃতিতে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বর্তমান সরকারের সমালোচনা করে লিখেছেন দুর্ণীতি তোলাবাজি ও সিন্ডিকেট রাজ রাজ্যবাসীর জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। মহিলা নিরাপত্তা নেই বলেও উল্লেখ করেছেন। তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে বিজেপিও তীব্র সমালোচনা করে তিনি লিখেছেন সাম্প্রদায়িক সম্প্রিতী যে পশ্চিমবঙ্গের গর্ব ছিল বর্তমানে তা বিপন্ন। রাজ্যে বিভেদের রাজনীতি ও সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ হচ্ছে বলেও তিনি অভিযোগ করেছেন।একই সঙ্গে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য কংগ্রেস, বামফ্রন্ট ও আইএসএফ-এর জোট সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থীদেরও জয়ী করা আহ্বান জানিয়েছেন।
রবিবার থেকেই রাজ্যরাজনীতিতে আলোচনার বিষয় হয়ে ওঠে নন্দীগ্রাম। ২০০৭ সালের ১৪ মার্চ নন্দীগ্রামের জমি আন্দোলনের কথা উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুভেন্দু অধিকারী ও শিশির অধিকারীকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন অধিকারী পরিবারও নন্দীগ্রামে চটি-পরা পুলিশ ঢুকিয়েছিল। পাল্টা অধিকারী পরিবারও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশানা করে বলে যে পুরো প্ল্যানই তৈরি করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সবমিলিয়ে নন্দীগ্রাম ইস্যুতে আবারও উত্তাল হয়ে ওঠে রাজ্যরাজনীতি। তবে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের বিবৃতিতে ২০০৭ সালের ১৪ মার্চ নন্দীগ্রামে পুবিশের গুলিতে ১৪ জনের মৃত্যু বা নভেম্বরে সিপিএমের পুনর্দখল যা 'সূর্যদয়' নামে পরিচিত ছিল তা নিয়ে কোনও লেখা হয়নি।