ভোটের ফল আগে থেকে বলা যায় না
রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে মানুষের চাহিদা ভিন্ন ভিন্ন
তবুও কিছু লক্ষ্মণ দেখে বোঝা যায় মানুষের মন
এবারের ভোটে কার পাল্লা ভারী
শমিকা মাইতিঃ ভোটের ফল আগে থেকে বলা কঠিন। এত বড় একটা রাজ্যে এত কোটি মানুষের চাওয়া-পাওয়ার হিসাব একটা সরলরেখায় আনা যায় না। তবুও কিছু লক্ষ্মণ দেখে রাজনীতির কারবারিরা আন্দাজ করতে পারেন, হাওয়া কোন দিকে ঝুঁকছে। সেগুলি বিচার করে দেখা যাক, এবারের ভোটে কার পাল্লা ভারী- বিজেপি না তৃণমূলের।
•মমতা যে ভাবে নন্দীগ্রামে পড়ে গিয়ে পায়ে চোট পাওয়ার পর হুইলচেয়ারে করে ঘুরছেন, তা সহানুভূতি আদায়ের ছল বলে মনে করছেন রাজ্যবাসীর একাংশ। গতিক সুবিধার নয় বুঝলে রাজনৈতিক নেতারা এমনটা করে থাকেন সাধারণত। দুর্ঘটনার পরেই মমতা বলেছিলেন চক্রান্ত করে তাঁকে ফেলে দেওয়া হয়েছে। পরে ভিডিও বার্তায় অবশ্য সেকথার উল্লেখ ছিল না। সদ্য নন্দীগ্রামে প্রচারে গিয়ে আবার প্রতিপক্ষ শুভেন্দু অধিকারীকে ওই ঘটনার জন্য দায়ী করে মমতা বলেন, ‘ভোটের সময় তুই আমার পা জখম করেছিস। আজও আমায় পা ভাঙা নিয়ে হুইলচেয়ারে বসে মিটিং করতে হচ্ছে। তোমার নির্দেশ ছাড়া এ সব হতে পারে না।’
•ভোটের সময় হিংসাত্মক ঘটনার ব্যাপকতার সঙ্গে শাসকদলের শক্তির একটা সমানুপাতিক সম্পর্ক রয়েছে। অর্থাৎ কোনও এলাকায় শাসকদল খুব বেশি শক্তিশালী হলে এবং নিজের জয় সম্পর্কে নিশ্চিত থাকলে তবেই দুর্বল দলের কর্মী-সমর্থকদের উপরে চড়াও হয়। ২০১৮ সালের পঞ্চাযেত ভোটে বাংলায় যে ভাবে রক্ত ঝরেছিল, তার তুলনায় কিছুই এবারে হয়নি। উল্টে শাসকদলের লোকেরা বিভিন্ন জায়গায় বিজেপি হামলা করছে বলে অভিযোগ করছে এখন।
আরও পড়ুন - 'ভাইপো'র জন্যই কি ডুবছে তৃণমূল, নাকি আসন্ন নির্বাচনে তিনিই 'দিদি'র অক্সিজেন
আরও পড়ুন - বঙ্গ ভোটে পদ্ম হাতে ৯ মুসলমান, বিজেপি কি সত্যিই সংখ্যালঘু-বিরোধী - কী বলছেন প্রার্থীরা
আরও পড়ুন - মমতা, আব্বাস না বিজেপি - কোথায় যাবে মুসলিম ভোট, বাংলার নির্বাচনে এবার সবথেকে বড় ধাঁধা
•যে সব রাজনৈতিক নেতারা মাটিতে নেমে রাজনীতি করেন, তাঁরা অনেক আগেই ধরে ফেলতে পারেন সাধারণ মানুষ কী চাইছে। শুধুমাত্র এই কারণেই, মানুষের পাশে থাকবেন বলে, অনেকসময় কিছু নেতা দল বদলে জনসমর্থন যে দিকে, সে দিকে চলে যান। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের আগে তৃণমূল থেকে দলে-দলে নেতা-কর্মীরা বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। জনাদেশ মেনেই এই দলবদল বলে মনে করছেন রাজনীতির কারবারিরা।
•পুলিশ-প্রশাসন কাদের দিকে ঘেঁষছে, সেটা থেকে অনেকসময় ফল কোন দিকে যেতে পারে বোঝা যায়। বামজমানার শেষের দিকে যে ভাবে পুলিশের একটা বড় অংশ তৃণমূলের দিকে চলে যাওযা দেখে আন্দাজ করা গিয়েছিল শক্তির ভরকেন্দ্র বদলে যেতে পারে। এবার বিজেপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশ প্রশাসনের আধিকারিকদের ব্যবহারে অনেকটা পরিবর্তন চোখে পড়ছে।
•টলিউড থেকে একঝাঁক অভিনেতা-অভিনেত্রী যে ভাবে বিজেপিতে নাম লেখালেন ভোটের আগে, তা এই দলের পক্ষে অনুকূল হাওয়ার কথা মনে করাচ্ছে। বিজেপির ক্ষমতায় আসা নিয়ে সন্দেহ থাকলে এই পালাবদল হত না।
•মমতার তোষণ রাজনীতি হিন্দুদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার পিছনে অনুঘটকের কাজ করছে। এখনও এই রাজ্যে হিন্দুরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। ফলে হিন্দুদের এই জোটবদ্ধ হওয়া শাসকদলের বিপক্ষে যেতে পারে বলে মনে করছেন রাজনীতির কারবারিরা।
•সম্প্রতি জনসভাগুলিতে তণমূলনেত্রী তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অসংলগ্ন কথাবার্তা বলছেন। এমনকী নন্দীগ্রাম-কাণ্ডে পুলিশ ঢোকানোর দায় শুভেন্দু ও শিশিরের উপর চাপিয়েছেন তিনি। শুভেন্দু অধিকারী যার উত্তরে বলেছেন, ‘উনি বুঝতে পেরে গেছেন হেরে যাবেন। সঙ্গে লোকজনও নেই। তাই মাথার ঠিক নেই। যা পারছেন বলছেন।’