'ভাইপোকে কোথা থেকে কোথায় তুলে এনেছেন', মমতার বিরুদ্ধে পরিবারতন্ত্রের অভিযোগ কতটা সত্যি

সোমবার, বর্ধমানের সভা থেকে ফোর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মুখে শোনা গেল 'ভাইপো'র কথা। এদিনের সভায় তিনি বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সব দায়িত্ব অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে তুলে দিতে তৈরি ছিলেন। কিন্তু তাঁর এই খেলা জনতা বুঝে গিয়েছে। এই জন্যই তাঁর খেলা ভেস্তে গিয়েছে। তাঁর পুরো দলকেই ময়দান থেকে বেরিয়ে যেতে বলছে বাংলার মানুষ। এরপরই মমতাকে নিশানা করে তিনি বলেন, 'ভাইপোকে কোথা থেকে কোথায় তুলে নিয়ে এসেছেন'। ভাইপো অভিষেককে, ঠিক কোথা থেকে কোথায় তুলে এনেছেন মমতা? আসুন দেখা যাক।

 

তৃণমূল কংগ্রেস দলটি এখনও পরিচালিত হয় দক্ষিণ কলকাতার হরিশ মুখোপাধ্যায় লেন থেকে। মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়ের বাড়ি। কিন্তু, ঠিক এর পিছনের দিকেই, আরও একটি বাড়ি রয়েছে যাকে তৃণমূল কংগ্রেসের দ্বিতীয় শক্তিকেন্দ্র বলে মনে করা হচ্ছে। সেই বাড়ির নাম শান্তিনিকেতন, সেই বাড়ির ভিতরে চলমান সিঁড়িও রয়েছে। মালিক, ডায়মন্ড হারবারের ৩৩ বছর বয়সী তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

তবে চলতি বিধানসভা নির্বাচনে রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কেন্দ্রে তিনি এসেছেন আরও একটি পরিচয়ের দৌলতে। তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইপো। আর এই পরিচয়ের কারণেই মায়ের মৃত্যুর পর থেকে একেবারে একা থাকা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধেও উঠেছে পরিবারতন্ত্রের অভিযোগ। অভিষেকের মাধ্যমেই তাঁর সাদা শাড়িতে লেগেছে কয়লা পাচারের কলঙ্ক।  

Latest Videos

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ, রাজনীতিতে তাঁর উত্থান লিফটে করে, সিঁড়ি ভাঙার পরিশ্রম তাঁকে করতে হয়নি। ২০১১ সালে তিনি দলে যোগ দিয়েছিলেন। ওই বছরই ৩৪ বছরের বাম জমানার ঘটিয়ে মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন মমতা। কাজেই, বিরোধী রাজনীতির পরিশ্রম তাঁকে সত্য়িই করতে হয়নি।

ওই বছরই অভিষেককে নেতা করে যুব তৃণমূল কংগ্রেসের পাশাপাশি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, 'তৃণমূল যুবা' নামে আরও একটি নতুন যুব শাখা চালু করেছিলেন। পরে যুব তৃণমূলের সঙ্গে যুবাকে মিলিয়ে দেওয়া হয়। যুব তৃণমূলের নেতৃত্ব থেকে শুভেন্দু অধিকারীকে সরিয়ে বসানো হয় অভিষেককেই।

এরপর থেকেই দলে তাঁর প্রভাব বাড়তে শুরু করেছিল। দলীয় সব গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে দলের বরিষ্ঠ নেতাদের পাশাপাশি তাঁর ডাক পাওয়াও নৈমিত্তিক বিষয় হয়ে ওঠে। ২০১৪ সালেই মাত্র ২৬ বছর বয়সে অভিষেককে  ডায়মন্ড হারবার লোকসভা আসনে দাঁড় করানো হয় এবং জিতে সাংসদ হন তিনি।

দলীয় সূত্রে খবর, অভিষেকের এই ধূমকেতুর মতো উত্থানে দলের অনেক পদস্থ নেতাই খুশি ছিলেন না। বিশেষ করে সেই সময়ে দলের অলিখিত দু'নম্বর নেতা মুকুল রায় ক্রমশ কোনঠাসা হয়ে পড়ছিলন। শেষে অভিষেকের কারণেই তিনি দল ছাড়তে বাধ্য হন বলে শোনা যায়। অবশ্য তিনি একা নন, শুভেন্দু অধিকারী, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়দের মতো তরুণ নেতাদের মনেও যে মেঘ জমছিল, তার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে পরে।

"

২০১৭ সালের নভেম্বরে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন মুকুল রায়। তৃণমূলের ভোট মেশিনারির দেখাশোনা করতেন তিনিই। মুকুলের  অবর্তমানে ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের দায়িত্ব অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে দিয়েছিলেন তাঁর পিসি। ব্যাপক সন্ত্রাস, বহু জায়গায় বিরোধীদের প্রার্থী দিতে না দেওয়ার অভিযোগের মধ্যে রাজ্য জুড়ে ব্যাপক জয় পেয়েছিল তৃণমূল।

আরও পড়ুন - সিঙ্গুরের ভোটই বোঝাচ্ছে এবারের নির্বাচনে তৃণমূলের বিপদ আছে

আরও পড়ুন - কাকে ভোট দেবেন, কোন 'বন্ধু' মমতার প্রিয়তম - ধন্দে পাহাড়ের তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরা

আরও পড়ুন - মমতা-র উপর অভিমানী 'মীরজাফর'এর পরিবার, তৃণমূল সমর্থক হয়েও দেবে না ভোট

তবে, দলের দুই নম্বর হিসাবে তাঁর আত্মপ্রকাশ ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের পর থেকে। রাজ্যে বিজেপির উত্থানের পর ভোট-কুশলী প্রশান্ত কিশোরকে ঘাসফুল শিবিরে এনেছিলেন অভিষেকই। আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে প্রশান্ত কিশোরের সঙ্গে মিলে তিনিই দলের অন্যতম প্রধান কৌশলবিদের ভূমিকা পালন করছেন। একই সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পর দলের দ্বিতীয় তারকা প্রচারকের ভূমিকাতেও আছেন তিনিই। দলের সব নেতাই দেওয়ালের লিখন পড়ে নিতে পেরেছেন, যুবরাজের রাজ্যাভিষেক শুধু সময়ের অপেক্ষা। তবে, ২ মে ফলাফল বের হওয়ার পর রাজ্য কতটা অটুট থাকবে, সেটাও দেখার।

Share this article
click me!

Latest Videos

Suvendu Adhikari Live: পূর্ব মেদিনীপুরের বাজকুলে জনসভা শুভেন্দুর, দেখুন সরাসরি
Narendra Modi Live: আদিবাসী গর্ব দিবস পালনে মোদী, কী বার্তা, দেখুন সরাসরি
'কলকাতার ম্যাডাম আমাকে হারাতে সংখ্যালঘুদের ভুল বুঝিয়েছে' নাম না করে মমতাকে তোপ শুভেন্দুর
‘জনগণের কষ্টের টাকায় মুখ্যমন্ত্রী উৎসব করবেন!’ মমতাকে ধুয়ে দিলেন সুকান্ত, দেখুন কী বললেন | Sukanta M
Suvendu Adhikari Live: বিরসা মুন্ডার জন্মদিনে মহা মিছিল শুভেন্দুর, দেখুন সরাসরি