দুপুর পর্যন্ত তার রং ছিল গেরুয়া। কিন্তু, সন্ধের ঠিক আগেই রং পরিবর্তন করে তা হয়ে গেল নীল-সাদা। 'ঘর ওয়াপসি'-র পরই নিজের টুইটার হ্যান্ডেলের ছবি পরিবর্তন করলেন মুকুল রায়। এখন তাঁর টুইটারের কভার ছবিতে একই ফ্রেমে রয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও ছেলে শুভ্রাংশু রায়।
করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর টুইটারে তেমন একটা সক্রিয় ছিলেন না মুকুল রায়। এমনকী, স্ত্রী কৃষ্ণা রায়ের শারীরিক অবস্থা নিয়েও বেশ খানিকটা চিন্তিত রয়েছেন তিনি। তাঁর টুইটার হ্যান্ডেলের শেষ টুইটে চলচ্চিত্র পরিচালক বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের প্রয়াণে শোকপ্রকাশ করেছিলেন। এর আগে ১৩ মে বিজেপি নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয়কে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন। তার আগে দু-একটা টুইট করেছিলেন। কিন্তু, অত্যন্ত চর্চিত টুইটটি করেছিলেন ৮ মে। লিখেছিলেন, "রাজ্যে গণতন্ত্র ফেরাতে বিজেপি-র সৈনিক হিসেবে আমার লড়াই চলবে। আমি সকলকে কল্পনা আর অনুমান বন্ধ করার অনুরোধ করছি। আমার রাজনৈতিক পথ নিয়ে সংকল্পে অবিচল আমি।"
তার ঠিক এক মাস পরেই তৃণমূলে যোগ দিলেন মুকুল রায়। তৃণমূলের বহুদিনের সৈনিক ছিলেন তিনি। দলের সেকেন্ড ইন কমান্ডও বলা হত তাঁকে। কিন্তু, ২০১৭ সালে দলের প্রতি ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন তিনি। তারপরই দল ছাড়েন। ঘনিষ্ঠমহল সূত্রে জানা গিয়েছিল, অভিষেকের জন্যই নাকি তিনি দল ছেড়েছিলেন। যদিও এ নিয়ে প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্যই করতে দেখা যায়নি তাঁকে।
তারপর সাড়ে তিন বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গিয়েছে। একুশের বিধানসভা নির্বাচনে কৃষ্ণনগর উত্তর থেকে জয়ী হন মুকুল। যদিও তারপর থেকেই তাঁর আচরণে পরিবর্তন হতে শুরু করে। আর তাঁর দল বদলের পরিকল্পনা নিয়ে শুরু হয় জল্পনা।
কৃষ্ণনগর উত্তরে জয়ের পর ৬ মে বিধানসভায় শপথ নিতে গিয়েছিলেন মুকুল। বিধানসভায় প্রবেশ করার পর তৃণমূল পরিষদীয় দলের ঘরে যান তিনি। সেখানে এক সরকারি আধিকারিকের সঙ্গে বেশ কিছু ক্ষণ কথা বলেন। তারপর যান শপথগ্রহণ কক্ষে। প্রোটেম স্পিকার সুব্রত মুখোপাধ্যায় শপথবাক্য পাঠ করানোর পরে অধিবেশন কক্ষে থাকা তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীর সঙ্গেও বেশ কিছুক্ষণ কথা বলতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। এরপর থেকেই তাঁর দলবদল নিয়ে তৈরি হয় জল্পনা। সেই জল্পনাকে আরও উসকে দিয়েছিলেন মুকুল নিজেই।
৭ মে বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের ডাকা বিধায়কদের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন না মুকুল। তারপর দিনই সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে নিজের 'সংকল্প'-এর কথা জানিয়ে টুইট করেন তিনি। তবে সেই সময় নিজের অবস্থান স্পষ্ট করলেও শেষ হয়নি জল্পনা। সম্প্রতি হেস্টিংসে একটি বৈঠক ডেকেছিলেন দিলীপ ঘোষ। সেখানেও গরহাজির ছিলেন মুকুল। স্ত্রীর অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে বৈঠকে যেতে পারবেন না বলে জানিয়েছিলেন। এরপর ১০ জুন রাতে তাঁর তৃণমূলে ফেরার যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যদিও তা ঘুনাক্ষরেও টের পাননি বিজেপি নেতারা। ১১ জুন সকালে মুকুলের তৃণমূল ভবনে আসার খবর দেখে তাঁকে ফোনে যোগাযোগ করেন বিজেপি নেতারা। কিন্তু, কারও ফোনই ধরেননি তিনি। অবশেষে বিকেল সাড়ে ৪টে নাগাদ তৃণমূল সুপ্রিমো নিজেই সাংবাদিক বৈঠক করে 'ঘরের ছেলে' মুকুল রায়কে ঘরে ফেরান। আর এরপরই বদলে যায় মুকুলের টুইটার হ্যান্ডেলের ছবি।