তাপস দাস, প্রতিনিধি- ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে রানাঘাট কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কথা ছিল মুকুটমণি অধিকারীর। তিনি রাজ্য সরকারের চিকিৎসক ছিলেন। নিয়ম অনুসারে, সরকারি পদে থেকে নির্বাচনে লড়া যায় না। মুকুটমণি অধিকারী পদত্যাগ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেনি রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। ফলে ভোটে দাঁড়ানো হয়নি মুকুটমণির। এ বছর ফেব্রুয়ারি মাসে সেসব ঝামেলা চুকিয়ে রানাঘাট দক্ষিণ কেন্দ্র থেকে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন এই চিকিৎসক।
আরও পড়ুন- কলকাতার রাজপথে হলুদ শাড়িতে জয়া বচ্চন, ঠেললেন মমতার হুইল চেয়ার
২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটে বিপুল ভোটে জিতেছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের বর্ণালী দে। বলা হয়, রাজ্য জুড়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন ভোটের যে নজির শাসক দল দেখিয়েছিল সেবার, বর্ণালী তারই এক প্রতিফলন। এ ব্যাপারে এলাকায় উদ্যোগী হিসেবে উঠে আসে বর্ণালীর স্বামী, দাপুটে তৃণমূল নেতা আনন্দ দে-র নাম।
২০১১ সালের ভোটে এখানেও হেরে গিয়েছিল সিপিআইএম। হেরেছিলেন অলোক দাস। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী বদল করে সিপিএম। রানাঘাট দক্ষিণ কেন্দ্রের টিকিট দেওয়া হয় রমা বিশ্বাসকে। দলের ভোট ৬.৩৮ শতাংশ বাড়িয়ে নিয়ে ২৭ হাজারেরও বেশি ভোটে জেতেন রমা।
এই তিনজনই এবার রানাঘাট দক্ষিণ কেন্দ্রের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী। এই কেন্দ্রের পত্তন হয়েছে ২০১১ সালে, ডিলিমিটেশন কমিশনের সুপারিশে। কুপার্স ক্যাম্পের মত শরণার্থী এলাকা রয়েছে এখানে, এই কেন্দ্রে অতি গুরুত্বপূর্ণ মতুয়া ভোটও। বিজেপি মনে করছে, মতুয়া ভোট আর শরণার্থী ভোট, দুইই তাদের দিকে যাবে। তৃণমূল কংগ্রেস লকডাউনের ত্রাণ বিলির ব্যাপারে দল ও সরকারের ভূমিকার উপর ভরসা করছে এখানে। ২০১৬ সালের এই কেন্দ্রে জয়ী রমা বিশ্বাস ছিলেন রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী। এবারও তাঁকেই প্রার্থী করেছে সংযুক্ত মোর্চা।
আরও পড়ুন- সংগঠন থেকে প্রচার, আরএসএস-ই গড়ে দিয়েছে বিজেপির জয়ের ভিত
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে রানাঘাট দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রে থেকে অনেকটাই এগিয়েছিলেন বিজেপি প্রার্থী জগন্নাথ সরকার। তিনি পেয়েছিলেন ১ লক্ষ ২৪ হাজার ৬০৭ ভোট। তৃণমূল কংগ্রেসের রুপালি বিশ্বাস ৮০ হাজারেরও কম ভোট পেয়েছিলেন। রানাঘাট লোকসভা আসন থেকে জিতেও যায় বিজেপি। অনেকেই মনে করেন, সিপিএম থেকে বিজেপিতে গিয়েছিল বেশ কিছু ভোট। বিশেষ করে উদ্বাস্তু ভোটের বড় অংশ। এবার সে ভোট বিজেপি ছেড়ে যাবে, এমন আশঙ্কা পদ্মশিবিরে নেই।
জোড়া ফুল শিবিরে বরং আশঙ্কা রয়েছে, পঞ্চায়েত ভোটের সময়ের হিসেব নিকেশ মেটানো হতে পারে ইভিএমে। আর রয়েছে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বও। আনন্দ দে, বর্তমান প্রার্থীর স্বামী আর ২০১৬-র ভোটে পরাজিত আবীররঞ্জন বিশ্বাসের মধ্যে দ্বন্দ্ব অতিক্রম করা দলের কাছে চ্যালেঞ্জ।