মনোনয়নপত্রে মিথ্যাচার করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই অভিযোগ তুলে সরব হলেন শুভেন্দু অধিকারী। পূর্ব মেদিনীপুরের নিমতৌড়িতে শিক্ষক যোগদান মঞ্চে শুভেন্দু অভিযোগ করেন যে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মনোনয়নপত্রে ছয়টি কেসের কোনও উল্লেখ নেই। দেশের আইন সকলের জন্য সমান হওয়া উচিত। তা হলে এক্ষেত্রে কেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওই ছয়টি কেসকে ছাড় দেওয়া হবে। এমন প্রশ্ন তোলেন শুভেন্দু অধিকারী। তিনি বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের নজরে আনছেন বলেও মন্তব্য করেন। এই ছয়টি কেস সম্পর্কে নির্বাচন কমিশন যেন উদ্যোগী হয় এবং বিষয়টি বিবেচনা করে। নিমতৌড়ির ওই সভা থেকে তা কমিশনের কাছে অনুরোধও করেন শুভেন্দু।
আরও পড়ুন- নন্দীগ্রাম আন্দোলনের উত্তরাধিকার কার - মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় না শুভেন্দু অধিকারীর
শুভেন্দুর এই মারাত্মক অভিযোগের পরই সামনে আসে বিজেপি-র পক্ষ থেকে লেখা একটি অভিযোপত্র। যেখানে মমমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামে দায়ের হওয়া ছয়টি কেসের নম্বর এবং ধারা উল্লেখ করা হয়েছে। এই অভিযোগপত্রে এই কেসগুলিকে নিয়ে প্রকাশিত হওয়ার সংবাদের প্রতিবেদনের লিঙ্কও উল্লেখ করেছে বিজেপি। ১৫ মার্চ-এর তারিখে লেখা এই অভিযোগপত্রটি নন্দীগ্রাম বিধানসভা ক্ষেত্রের রিটার্নিং অফিসারকে উদ্ধৃত করে লেখা হয়েছে। সেই সঙ্গে এই অভিযোগপত্রে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রার্থী পদ বাতিলের দাবিও জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুন- অধিকারীদের শক্ত ঘাঁটি কাঁথি দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্র, তৃণমূল কি পারবে সেখানে 'দাঁত' ফোটাতে
অভিযোগপত্রের বিষয়ে পরিস্কার উল্লেখ করা হয়েছে যে ২০২১ পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে মনোনয়নপত্র জমা করেছেন তার বিরুদ্ধে এই চিঠি। এরপরই 'আমি' বলে সম্বোধন করে নির্বাচন কমিশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ৬টি কেসের উল্লেখ করা হয়েছে। এই ছয়টি কেসের মধ্যে
১। প্রথমটি-র কেস নম্বর ২৮৬/২০১৮ আন্ডার সেকশনস ২০বি, ১৫৩এ এবং ১৯৮-এর ভারতীয় দণ্ডবিধির ধারা, যা অসমের গীতা নগর থানায় দায়ের হয়েছিল।
২। কেস নম্বর ৪৬৬/২০১৮ আন্ডার সেকশনস ১২০বি, ১৫৩এ, ২৯৪, ২৯৮ এবং ৫০৬-এর ভারতীয় দণ্ডবিধির ধারা, যা অসমের পান বাজার থানায় দায়ের হয়েছিল।
৩। কেস নম্বর ২৮৮/২০১৮ আন্ডার সেকশনস ১২১, ১৫৩এ-র ভারতীয় দণ্ডবিধির ধারা, যা অসমের জাগিররোড থানায় দায়ের হয়েছিল।
৪। কেস নম্বর ৮৩২/২০১৮ আন্ডার সেকশনস ১২০বি এবং ১৫৩এ-র ভারতীয় দণ্ডবিধির ধারা, যা অসমের উত্তর লাখিমপুর সদর পুলিশ স্টেশনে দায়ের করা হয়েছিল।
৫। কেস নম্বর ১৭৭/২০১৮- আন্ডার সেকশনস- ৩৫৩, ৩২৩ এবং ৩৩৮-এর ভারতীয় দণ্ডবিধির ধারা, যা অসমের উদ্ধারবন্ধ থানায় দায়ের হয়েছিল।
৬। কেস নম্বর আরসি ০১০২০০০৮এ০০২৩/২০০৮ কেসটি দায়ের করেছিল সিবিআই, কলকাতার নিজাম প্যালেসে।
আরও পড়ুন- তবে কি তিনিও যাবেন বিজেপিতে, শোভনদের গেরুয়া শিবির ত্যাগের পরই তৃণমূল ছাড়ালেন দেবশ্রী
- এই অভিযোগ পত্রের সঙ্গে ৩টি প্রকাশিত সংবাদ প্রতিবেদন তুলে দেওয়া হয়েছে। এই প্রতিবেদনগুলি এই কেসের স্বপক্ষে প্রমাণ হিসাবে পেশ করা হয়েছে। অগাস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে অসমে নাগরিক পঞ্জি নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে যে অভিযোগগুলো দায়ের হয়েছিল সেই তথ্য এই প্রতিবেদনগুলিতে রয়েছে। লিখিত এই অভিযোগপত্রে মনোনয়নপত্রে দেওয়া তথ্যের গুরুত্ব বোঝাতে সুপ্রিম কোর্টের একটি রায়েরও উল্লেখ করা হয়েছে। মনোনয়নপত্রের স্বচ্ছতা ও গুরুত্ব নিয়ে কথা বলতে গিয়ে ২০১৯ সালে এক রায়ে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছিল যে এফিডেফিটে-র অর্থই হল একজন নাগরিকের মৌলিক অধিকার রয়েছে প্রার্থীর সম্পর্কে পুঙ্খনাপুঙ্খ তথ্য জানার। সুপ্রিম কোর্টের এই অবস্থান এই অভিযোগপত্রে তুলে ধরা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের সুপ্রিম নির্দেশ এবং জনগণের কাছে নিজের স্বচ্ছতা বজায় রাখতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে ব্যর্থ হয়েছেন তাও এই অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রার্থী পদ বাতিল হওয়া উচিত বলেও দাবি করা হয়েছে এই অভিযোগপত্রে। যদিও, কমিশন এখনও পর্যন্ত এই নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া দেয়নি।