- Home
- West Bengal
- West Bengal News
- নন্দীগ্রাম আন্দোলনের উত্তরাধিকার কার - মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় না শুভেন্দু অধিকারীর
নন্দীগ্রাম আন্দোলনের উত্তরাধিকার কার - মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় না শুভেন্দু অধিকারীর
নন্দীগ্রাম আন্দোলন। বাংলার রাজনীতির ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। আর আসন্ন বিধানসবা নির্বাচনে সেই নন্দীগ্রামই আবার হটস্পট। মুখোমুখি তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আর তাঁরই ছায়ায় বেড়ে ওঠা দলবদলু নব্য বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী। রবিবার ছিল নন্দীগ্রাম দিবস। আর এই দিনই ১৪ বছরের পুরোনো আন্দোলনকে কেন্দ্র করে উঠেছে এক নতুন তরজা - নন্দীগ্রাম আন্দোলনের উত্তরাধিকার কার - মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় না শুভেন্দু অধিকারীর?
- FB
- TW
- Linkdin
কী ছিল আন্দোলন?
নন্দীগ্রামে ১০০০০ একর এলাকা জুড়ে রাসায়নিক হাব করার প্রস্তাব দিয়েছিল ইন্দোনেশিয়ার সালিম গোষ্ঠী। বাসিন্দাদের সঙ্গে কোনও রকম আলোচনা না করেই স্থানীয় সিপিএম নেতারা সেই জমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু করেছিলেন বলে অভিযোগ। প্রতিরোধ করতে স্থানীয় বাসিন্দারা ও বিরোধী দলের নেতারা মিলে গঠন করেছিলেন ভূমি উচ্ছেদ রক্ষা কমিটি। সেই কমিটি প্রশাসনকে নন্দীগ্রামে ঢুকতে বাধা দিয়েছিল। প্রায় ৬০০০ পুলিশ সদস্য নিয়ে সেই বাধা ভাঙতে গিয়েছিল সিপিএম সরকার। প্রাণ গিয়েছিল অন্তত ১৪ জনের। আরও বহু মানুষ আজও নিখোঁজ বলে অভিযোগ। এরপরই ভূমি রক্ষা কমিটির প্রতিরোধের মুখে সেখান থেকে প্রকল্প সরাতে বাধ্য হয়েছিল সরকার।
তদন্ত কোথায়
এই আন্দোলনের উত্তরাধিকার নিয়েই এখন দ্বন্দ্ব বেঁধেছে। শুভেন্দু অধিকারীর অভিযোগ ২০০৭ সালের সেই গুলিচালনার ঘটনার জন্য দায়ী পুলিশ কর্তাদেরই পদোন্নতি দিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। এমনকী অবসর নেওয়ার পর সেই পুলিশ কর্তাদের কেউ কেউ তৃণমূল দলেও যোগ দিয়েছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিরোধী আসনে থাকাকালীন নন্দীগ্রামে গুলি চালনার ঘটনার দোষী পুলিশ কর্তা ও সিপিএম নেতাদের শাস্তি দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। বাস্তবে, বছর দশেক পরেও সেই ঘটনায় তদন্তে কাউকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে, এমনটা জানা যায়নি।
ভুলে গিয়েছেন নন্দীগ্রাম
শুভেন্দু অধিকারী আরও বলেছেন, ১২ বছর ধরে নন্দীগ্রামকে ভুলে গিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এখন এসেছেন ভোট ভিক্ষা করতে। মমতাকে তিনি সরাসরি নন্দীগ্রামে বহিরাগত বলে আক্রমণ শানিয়েছেন। সত্যি বলতে, ২০০৮ সাল থেকে প্রতি বছরই নন্দীগ্রামে শহিদ বেদীতে শ্রদ্ধা জানাতে দেখা যায় শুভেন্দু অধিকারীকেই। অবশ্য তিনিই তখন ছিলেন দিদির দূত। মমতাকে বরাবর কলকাতাতেই শহিদদের স্মরণ করতে দেখা যায়। এই বছরও নন্দীগ্রাম দিবসের দিন কলকাতাযতেই হুইলচেয়ারে বসে মিছিল করেছেন তিনি। এমনকী আমফানের পরও, তিনি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিধানসভা কেন্দ্র ডায়মণ্ড হারবারে গিয়েছিলেন, নন্দীগ্রামে আসেননি।
মানুষ কি কৃষি চায়
সেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সোশ্যাল মিডিয়ায় জানান, নন্দীগ্রামে যাঁরা প্রাণ দিয়েছিলেন তাঁদের স্মরণে সরকারের পক্ষ থেকে ১৪ মার্চ কৃষক দিবস পালন করা হয় এবং কৃষকরত্ন পুরষ্কার প্রদান করা হয়। কৃষকরা আমাদের গর্ব, এবং আমাদের সরকার তাদের সর্বাত্মক উন্নয়নের জন্য কাজ করছে। কিন্তু সত্য়িই কি নন্দীগ্রামের মানুষ কৃষি চায়?
দায় শুভেন্দু না মমতার
বাস্তব হল, ১৪ বছর পর নন্দীগ্রামের মানুষই বলছেন, এলাকার জমিতে চাষ হয় বছরে একবার। মাসে পারিবারিক রোজগার মেরেকেটে ৬০০০। ঘরের ছেলেদের কাজের সন্ধানে যেতে হচ্ছে বাইরে। তাই তাঁরা এখন শিল্পই চাইছেন। নন্দীগ্রামের আশপাশে হলেও হবে। যাতে ঘরের ছেলেগুলো ঘরেই থাকে। এই নাম কি উন্নয়ন? এর দায় শুভেন্দু অধিকারী এড়াতে পারেন না। তাঁকেই গত ৫ বছর নন্দীগ্রাম দেখভালের দায়িত্ব দিয়েছিলেন মমতা। কিন্তু, সকলেই জানেন, সরকারে হোক বা দলে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় না বললে কোনও গাছের পাতাও নড়ে না। তাই, দায়িত্বও বর্তায় তাঁরই কাঁধে।
বিশ্বাসঘাতক কে
শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সবচেয়ে বড় অভিযোগ বিশ্বাসঘাতকতার। তাঁর নেতৃত্বেই নন্দীগ্রাম আন্দোলন, তিনিই জায়গা করে দিয়েছিলেন শুভেন্দুকে, তাই আজ তিনি নেতা। সেই আন্দোলনের লাভ নিয়ে তিনি বিজেপির ঘরে তুলবেন কেন? প্রশ্নটা সঙ্গত, তবে বাস্তব পরিস্থিতি হল, ১৪ বছর পর, এখন ভূমিরক্ষা কমিটির সদস্যরাই মনে করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাদের ভুল পথে চালনা করেছেন। জোর জুলুম করে জমি নেওয়া অন্যায় হলেও, সিপিএম-এর শিল্প গড়ার ভাবনায় ভুল ছিল না। এখন একই স্বপ্ন দেখাচ্ছে নতুন শক্তি বিজেপিও।
ভাগাভাগির রাজনীতি
মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়, সোশ্য়াল মিডিয়ায় আরও বলেছেন, নন্দীগ্রামের শহিদ পরিবারদের সঙ্গে নিয়ে অবাঙালি শক্তিদের বিরুদ্ধে লড়বেন। একইসঙ্গে বলেছেন, তিনি ভাগাভাগির রাজনীতি করেন না। তাঁর পক্ষে ১০০ শতাংশ মানুষ রয়েছেন। নন্দীগ্রাম আন্দোলনে হিন্দু-মুসলমান কেউ দেখেনি। তাঁর বয়ানে কোনও সমস্যা না থাকলেও মুশকিল হল, একই মঞ্চ থেকে তাঁকে নিজের পদবী বন্দ্যোপাধ্যায়, তিনি ব্রাহ্মণ - বলতে হয়েছে। গত কয়েক মাস ধরে তাঁকে মুসলিম ঘনিষ্ঠতা কমাতে দেখা যাচ্ছে। দ্বিতীয়ত, বাঙালি-অবাঙালি ভেদ কী ভেদাভেদের রাজনীতি নয়? নন্দীগ্রাম আন্দোলনের সময় আক্রান্ত মানুষের পাশে দাঁড়াননি অবাঙালী লালকৃষ্ণ আদবানী, সুষমা স্বরাজ বা মেধা পাটেকর-রা?
আন্দোলনের উত্তরাধিকার কার
তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় না থাকলে নন্দীগ্রাম আন্দোলন হতোই না। সেই আন্দোলনের উত্তরাধিকার নিতে চেয়ে শুভেন্দু নন্দীগ্রামের মানুষকে অপমান করছেন। এটা সত্যিই, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় না থাকলে নন্দীগ্রামের আন্দোলন ওই রূপ নাও নিতে পারত। তবে, এলাকায় পড়ে থেকে কর্মীদের সংগঠিত করার কাজটা সেদিন করেছিলেন শুভেন্দুই। আর ভূমি উচ্ছেদ রক্ষা কমিটিতে কিন্তু যোগ দিয়েছিলেন তৃণমূল, কংগ্রেস, আরএসএস এমনকী বামেদের বিক্ষুব্ধ মানুষরাও - তাঁদেরকে ভুলে গেলে চলবে না। আন্দোলন কাজেই এই আন্দোলনের উত্তরাধিকার কার, তা বিচার করার ভার সেখানকার মানুষেরই। অপেক্ষা ২ মে তারিখের।