রাজ্যে নেই আইনের শাসন, রাজনৈতিক হিংসায় ছারখার হচ্ছে বাংলা। এই সুরেই রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ের কাছে একাধিকবার দরবার করেছেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সেই সুর দিল্লি পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছেন রাজ্যপাল নিজে। বাংলার পরিস্থিতি নিয়ে দরবার করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডার কাছে।
বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের এই চিন্তাভাবনাই যেন উঠে এল ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটির রিপোর্টে। এদিন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর কাছে রিপোর্ট জমা দেন বিচারপতি প্রমোদ কোহলি, কেরালার প্রাক্তন মুখ্য সচিব আনন্দ বোস, ঝাড়খন্ডের প্রাক্তন ডিজিপি নির্মল কৌর, আইসিএসআইয়ের প্রাক্তন সভাপতি নিসার আহমেদ, কর্ণাটকের প্রাক্তন অতিরিক্ত মুখ্যসচিব এম মদন গোপাল । কী কী সুপারিশ করা হয়েছে এই রিপোর্টে
১১টি সুপারিশ কমিটির
১. রাজ্য স্বাভাবিক পরিস্থিতি ও স্থিতাবস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য সম্মিলিত ও সমন্বিত প্রচেষ্টা শুরু করা প্রয়োজন।
২. অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ওয়ার্ড, গ্রাম, মহল্লা, ব্লক, নগর, জেলা, রাজ্য স্তরে শান্তি ও পুনর্মিলন কমিটিগুলি গঠন করতে হবে এবং সমাজের সমস্ত বিভাগের প্রতিনিধিদের সেই ব্যবস্থায় কাজ করতে হবে। এই প্রক্রিয়াটি অবশ্যই সুপরিকল্পিত, সমন্বিত ও বাস্তবায়িত হতে হবে।
৩. ভয় এবং নিরাপত্তাহীনতার কারণে যারা তাদের বাড়িঘর ছেড়েছে তাদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করার জন্য চেষ্টা করতে হবে। তাদের জীবনের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হবে। ক্ষতিগ্রস্থদের পাশে দাঁড়াতে হবে।
৪. ভোট পরবর্তী হিংসার জন্য যে সব পরিবার নিজেদের স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি হারিয়েছে, তাঁদের দ্রুত ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে। কারা সেই ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন, তার নথি রাখতে হবে। চেকের মাধ্যমে বা অনলাইন ট্রান্সফারের মাধ্যমে আর্থিক সহায়তা প্রদান করতে হবে।
৫. রাজ্য সরকারকে অবিলম্বে একটি বিশেষ ত্রাণ প্যাকেজ ঘোষণা করতে হবে যাতে পুনর্বাসনের উল্লেখ থাকে। এর মাধ্য ভোট পরবর্তী হিংসায় ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তিদের সুরক্ষা দেওয়া যাবে।
৬. যেসব সরকারি আধিকারিকরা দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েও ভোটপরবর্তী হিংসা ঠেকাতে ব্যর্থ, তাদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা প্রয়োজন। এদের বিরুদ্ধে আইনী তদন্ত শুরু করার পরামর্শ। উচ্চ আদালত বা সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিদের মাধ্যমে এই তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করা জরুরি।
৭.অল ইন্ডিয়া সার্ভিস অফিসারদের ক্যাডার কন্ট্রোল অথরিটি হিসাবে ভারত সরকারকে এই বিষয়গুলি সুস্পষ্টভাবে সমাধান করা উচিত, সমস্ত কার্যকর আইনী সম্ভাবনাগুলি পর্যবেক্ষণ করে দেখা উচিত ও কেন্দ্রের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে এর সমাধান করা উচিত।
৮. এই ধরণের ঘটনার প্রেক্ষিতে পুলিশের আরও সক্রিয় হওয়া প্রয়োজন। দ্রুত হিংসাত্মক ঘটনাগুলি নথিবদ্ধ করেছে, ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের কাছ থেকে অভিযোগ নেওয়া প্রয়োজন
৯. পশ্চিমবঙ্গ বাংলাদেশ এবং অন্যান্য দেশের সাথে সীমানা ভাগ করে। এতে আন্তঃসীমানা সন্ত্রাসের ঝুঁকি থাকে। জঙ্গি কার্যকলাপ বৃদ্ধিরও আশঙ্কা থেকে যায়। এজন্য এনআইএ তদন্ত প্রয়োজন। বিগত কয়েক দশক ধরে বিশেষত সীমান্তবর্তী জেলাগুলিতে যেভাবে জনসংখ্যার পরিবর্তন হয়েছে, তাতে এই এলাকাগুলিতে বেআইনী ক্রিয়াকলাপের পরিমাণ বেড়েছে।
১০. দেশের শীর্ষ আদালত সুপ্রিম কোর্টের সামনে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটির রিপোর্টের সাথে MHA, NCSC, NCW, NHRC, NCPCR-এর রিপোর্টগুলিও রাখা উচিত। সুপ্রিম কোর্ট সম্ভবত অবিলম্বে একটি বিশেষ তদন্ত দল (এসআইটি) গঠনের কথা বিবেচনা করতে পারে। সুষ্ঠু তদন্ত ও প্রাথমিক বিচারের জন্য কোনও স্থায়ী বিচারক বা সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারকের মাধ্যমে নিরপেক্ষ ও পেশাদার পদ্ধতিতে কাজ করার কথা নিশ্চিত করতে পারে সুপ্রিম কোর্ট। বিকল্প হিসাবে, ভারত সরকার কোনও স্থায়ী বা অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি বা সুপ্রিম কোর্ট বা হাইকোর্টের একজন বিচারকের নেতৃত্বে একটি জুডিশিয়াল কমিশন গঠন করতে পারে।
১১. একটি নিদিষ্ট সময়সীমার মধ্যে সমস্ত ক্ষতিগ্রস্তের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে তালুক ও জেলা পর্যায়ে বিশেষ আদালত স্থাপন করা যেতে পারে। ক্ষতিগ্রস্থদের অবশ্যই নিখরচায় আইনি সহায়তা প্রদান করতে হবে যাতে তাদের উপর আর্থিক বোঝা না পড়ে। এই মামলাগুলির সমস্ত অভিযুক্তকে তত্ক্ষণাত্ গ্রেপ্তার করতে হবে, যাতে কেউ সাক্ষ্য প্রমাণের অভাবে খালাস না হয়ে যায়, সাক্ষীদের ভয় দেখাতে না পারে।