বিজেপিতে থাকতে পারছিলেন না তিনি। শরীর খারাপ হয়ে যাচ্ছিল। মনে কষ্ট হলেও মুখে সেকথা বলতে পারছিলেন না। গতকাল সাংবাদিক বৈঠকে মুকুল রায়ের বিজেপি ছেড়ে ফের তৃণমূলে ফেরা প্রসঙ্গে এই কথাগুলোই বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এমনকী, তৃণমূলে ফিরে মুকুলের অনেকটাই স্বস্তি হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি। যদিও মুকুল রায়ের 'ঘর ওয়াপসি'-কে বিশেষ গুরুত্ব দিতে নারাজ বিজেপি নেতৃত্ব।
মুকুল থাকায় নাকি তেমন কোনও লাভই হয়নি বলে দাবি করেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তিনি বলেন, "তিনি থাকায় লাভ তো বিশেষ কিছু হয়নি। ক্ষতি আর কী হবে?"
২০১৭ সালে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন মুকুল। কার্যত তাঁর হাত ধরেই ভাঙন শুরু হয়েছিল ঘাসফুল শিবিরে। একুশের নির্বাচনের আগে অনেকেই তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। কেন্দ্রীয় নেতাদের মুখেও তাঁর প্রশংসা শোনা গিয়েছিল। আর মুকুল বিজেপি ছাড়ার পরই প্রায় ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেলেন দিলীপ ঘোষ। তিনি বলেন, "যদি তৃণমূল ছেড়ে এলে তৃণমূলের ক্ষতি না হয়, তাহলে বিজেপি ছেড়ে গেলে বিজেপির ক্ষতি কেন হবে? দল ছাড়াটা এখন অনেকের অভ্যাসে পরিণত হয়ে গিয়েছে। বিজেপিতে থাকতে হলে ত্যাগ-তপস্যা করতে হবে। যাঁরা ক্ষমতা ভোগ করতে চান, তাঁরা বিজেপিতে থাকতে পারবেন না, আমরাই রাখব না। আমরা তাঁকে জীবনে প্রথমবার নির্বাচন জেতার সুযোগ দিয়েছিলাম। অভিজ্ঞ নেতা, যা করেছেন ভেবেচিন্তেই করেছেন।"
আরও পড়ুন- মুকুলকে কীভাবে পুনর্বাসন দেবে তৃণমূল, তাঁর জন্য কী পরিকল্পনা সাজিয়েছেন মমতা
আসলে মুকুল যে গেরুয়া শিবির ছাড়বেন সেকথা ঘুণাক্ষরেও টের পাননি বিজেপি নেতারা। মুকুল গতকাল বাড়ি থেকে তৃণমূল ভবন যাওয়ার সময় তাঁর কাছে দিল্লি থেকে অনেক ফোন আসে। কিন্তু, তিনি তা ধরেননি।
এরপর মুকুল তৃণমূলে যোগ দেওয়া প্রসঙ্গে রাজ্য বিজেপির সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার বলেন, "পুরনো দলে নতুন ইনিংসের শুরুতে আমরা মুকুলবাবুকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। রাজনৈতিক পটভূমিকায় তাঁর এই পদক্ষেপের বিচার ভবিষ্যতে হবে। তবে তিনি বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি এবং বিধায়ক পদ ছেড়েছেন বা ছেড়ে দেবেন বলে আমাদের আশা।"
আরও পড়ুন- বেসুরো অনুপম হাজরা, বিজেপির 'লবিবাজি' নিয়ে সরব সোশ্যাল মিডিয়ায়
মুকুলের দল ছাড়ার জন্য দলের শীর্ষ নেতাদের লবিবাজিকে দায়ি করেছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় সম্পাদক অনুপম হাজরা। টুইটারে তিনি লেখেন, "নির্বাচন চলাকালীন ২ থেকে ১ জন নেতাকে নিয়ে অতি মাতামাতি করা এবং যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও লবিবাজি করে বাকিদের বসিয়ে রেখে অবজ্ঞা বা অপমান করার করুণ পরিণতি!!! চাটার্ড বিমানের রয়্যাল যাত্রীরাও বেপাত্তা !!! এখনও সময় আছে, বঙ্গ বিজেপির উচিত লবিবাজি বন্ধ করে যোগ্যতা অনুসারে বসে থাকা নেতাদের কাজে লাগানো !!!"
শুক্রবার টুইটারে তথাগত রায় লেখেন, "তৃণমূল থেকে বিজেপিতে আসা যে সব নেতা আবার তৃণমূলে ফিরে গেছেন তাঁদের সম্বন্ধে আমি প্রয়াত সিপিএম নেতা হরেকৃষ্ণ কোঙারের একটি মন্তব্যের পুনরাবৃত্তি করছি। "মল মূত্র ত্যাগ করলে মানুষ দুর্বল হয় না, সবলই হয়।" ১৯৬৪ সালে যখন কম্যুনিস্ট পার্টি ভাঙে তখন সিপিআই নেতাদের সম্বন্ধে এই উক্তি।"
আরও পড়ুন- "মল মূত্র ত্যাগ করলে মানুষ দুর্বল হয় না", টুইটারে তৃণমূলমুখীদের আক্রমণ তথাগতর
মুকুলের হাত ধরে যাঁরা তৃণমূল থেকে বিজেপিতে গিয়েছিলেন, তাঁদেরও অনেকে এ দিন তাঁকে নিশানা করেছেন। যেমন, সাংসদ অর্জুন সিংহ বলেন, "আমরা কৈলাসজিকে বার বার বলেছিলাম, ওঁকে বিশ্বাস করবেন না, উনি খবর পাচার করেন। কিন্তু উনি ওঁকে প্রশ্রয় দিয়েছেন।" বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ কৈলাসের নাম না করে বলেন, "আমাদের দলের কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক প্রশ্রয় দিয়ে মুকুলদাকে মাথায় তুলেছিলেন।"
বালির প্রাক্তন বিধায়ক বৈশালী ডালমিয়া লেখেন, "বাংলার নেতা, বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারীকে অনুরোধ করব, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সমস্ত আবর্জনাকে বিজেপি থেকে দূর করুন।"