স্বাধীনতার পরে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি তৃণমূল আমলে, ভোটপ্রচারে প্রধান হাতিয়ার বিজেপির

Published : Apr 02, 2021, 08:00 PM IST
স্বাধীনতার পরে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি তৃণমূল আমলে, ভোটপ্রচারে প্রধান হাতিয়ার বিজেপির

সংক্ষিপ্ত

নির্বাচনী প্রচারে রীতিমত ঝড় তুলেছে বিজেপি শাসকের বিরুদ্ধে একাধিক ইস্যু করেছে পদ্ম শিবির তার মধ্যে অ্যতম হল তৃণমূল আমলে একাধিক দুর্নীতি যা মানুষের কাছে প্রচারে তুলে ধরছেন বিজেপি নেতারা  

শমিকা মাইতিঃ ভোট-বাজারে দুর্নীতি প্রশ্নে তৃণমূলকে সাঁড়াশি আক্রমণে নেমেছেন বিজেপি নেতৃত্ব। স্বাধীনতার পরে বাংলার বুকে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি তৃণমূল সরকারের আমলে হযেছে বলে বিজেপির দাবি। সারদা-রোজভ্যালির টাকা লুঠ থেকে শুরু করে স্কুলে শিক্ষক নিয়োগের নামে লক্ষ লক্ষ টাকা হজম, এমনকী গরিবদের রেশনের চালও চুরি করেছে তৃণমূলের লোকেরা। চুরির টাকায় তৃণমূলের ছোট বড় নেতাদের সব আঙুল ফুলে কলাগাছ। ক্ষমতায় এসে বিজেপি সবার আগে এই দুর্নীতিগুলোর তদন্ত করবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দলের সর্বভারতীয় নেতা অমিত শাহ। শুক্রবার উত্তরবঙ্গের শীতলকুচির জনসভায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেন, ‘এখানে ঘর বানানোর জন্যও কাটমানি দিতে হয়। ২ মে-র পর এই কাটমানি আর সিন্ডিকেট রাজ বন্ধ করব আমরা।’  

বাম সরকারকে সরিয়ে ক্ষমতায় আসার প্রথম পর্বেই সারদা রোজভ্যালি-সহ বিভিন্ন অর্থলগ্নি সংস্থার তছরুপে অভিযুক্ত হয় তৃণমূল। শুধুমাত্র সারদা থেকেই আড়াই হাজার কোটি টাকার কেলেঙ্কারি ধরা পড়েছিল সেই সময়। সারদাকর্তা সুদীপ্ত সেনের অভিযোগের নিশানায় মূলত ছিলেন শাসকদল তৃণমূলের সাংসদ-বিধায়কেরা। এখনও এই মামলার তদন্ত শেষ করতে পারেনি সিবিআই। তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সিবিআইকে ব্যবহার করছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার।’ মমতার সেই দাবি উড়িয়ে বর্ষীয়ান সাংবাদিক তথা বিজেপির প্রাক্তন মন্ত্রী এম জে আকবর বলেন, ‘চিট ফান্ড নিয়ে তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছিল ইউপিএ সরকারের দ্বিতীয় জমানায়। মমতা যদি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কথা বলেন, তাহলে সোনিয়া গান্ধীকে তাঁর আক্রমণ করা উচিত।’ আকবেরর মতে, ‘গত ৭৫ বছরে এত দুর্নীতিগ্রস্ত সরকার দেখেনি বাংলা, তৃণমূলের আমলে যা দেখছে।’

 বস্তুত, পশ্চিমবঙ্গে তোলাবাজি আর সিন্ডিকেট-রাজের দাপটে কোনও কাজ করাই দায়। ইন্দিরা আবাস যোজনার টাকা ব্যাঙ্কে ঢুকতে না ঢুকতে চাঁদার আবদার নিয়ে ঘরে চলে আসেন পঞ্চায়েতের প্রতিনিধিরা। বার্ধক্য ভাতার টাকা থেকে সরিয়ে রাখতে হয় কাটমানি। এমনকী সরকারি প্রকল্পে শৌচাগার বানানোর টাকা নিয়েও নয়ছয় হয়েছে যথেচ্ছ। বিশেষ করে গত বছর আমফান-দুর্নীতির স্মৃতি এখনও তাজা। সুপার সাইক্লোন আমফানের দাপটে কলকাতা, দুই ২৪ পরগনা, দুই মেদিনীপুর, হুগলি, হাওয়া, নদিয়া এবং পূর্ব বর্ধমানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়ে, ঘরবাড়ি ভাঙে। আর এরপরেই ত্রাণের টাকা নিয়ে শুরু হয় লুটোপুটি।  তৃণমূলের পঞ্চায়েত প্রতিনিধিরা নিজে বা পরিবারের লোকেদের নাম ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকায় ঢুকিয়ে ত্রাণের টাকা আত্মসাত করেছেন বলে অভিযোগ। প্রায় এক বছর কাটতে চললেও আমফানে ক্ষতিগ্রস্তদের অনেকেই বাড়ি তৈরির টাকা এখনও পাননি। 

শাসকদলের মদতেই নদীর বুক থেকে অবৈধ ভাবে বালি তোলা হয় বলে অভিযোগ। এদিকে, বিধানসভা ভোটের প্রাক্কালে পশ্চিমবঙ্গে কয়লা আর গরু চুরি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে সিবিআই, ইডি। ইসিএল-এর খনিতে বেআইনি ভাবে কয়লা খনন আর  তা পাচার করার চক্রে মূল অভিযুক্ত অনুপ মাঝি ওরফে লালার সঙ্গে বেশ কিছু তৃণমূল নেতার যোগ খুঁজে পেয়েছে সিবিআই। গরু পাচার কাণ্ডে অভিযুক্ত এনামুল হক, যুব তৃণমূলের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক বিনয় মিশ্রের নাম জড়িয়েছে কয়লা পাচার কাণ্ডে। সিবিআই জানিয়েছে, কয়লা পাচারের টাকা কী ভাবে বিদেশে গিযেছে, তার তদন্ত করার জন্য বিনয় ও তাঁর সঙ্গীসাথীদের তল্লাশি-জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।   বিজেপি-র অভিযোগ, কয়লা পাচার কাণ্ডের মাথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইপো অভিষেক। বাংলায় ভোটের দামামা বাজার আগে থেকেই বিজেপি-র নিশানায় ছিলেন অভিষেক। তাঁর বিরুদ্ধে তোলাবাজি আর দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে বারবার। বালি, কয়লার পর গরু চুরিতেও নাম জড়িয়েছে তাঁর। কয়লা-কাণ্ডে অভিষেকের স্ত্রী রুজিরার নাম সিবিআইয়ের খাতায় ওঠার পর আক্রমণের ঝাঁঝ আরও বাড়িয়েছে বিজেপি। 

বাংলার সাধারণ মানুষ অবশ্য গরু, কয়লা বালি চুরি নিয়ে ততটা ভাবিত নয়, তৃণমূল আমলে সরকারি চাকরিতে নিয়োগে দুর্নীতি নিয়ে যতটা। বিশেষ করে এসএসসিতে নিয়োগ নিয়ে যথেষ্ট ক্ষোভ রয়েছে জনমনে। সেই ক্ষোভ যে অমূলক নয়,  কন্ট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল অব ইন্ডিয়ার (সিএজি বা ক্যাগ) রিপোর্টে তা প্রমাণিত। ২০১৭-র জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত এসএসসি যে ১২টি পরীক্ষা নিয়েছিল, সেগুলি নিয়ে তদন্ত করে প্রচুর অনিয়ম ধরেছে সিএজি। সিএজি-র দাবি, প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার যে নম্বর চূড়ান্ত তালিকায় প্রকাশ হয়েছে, তার সঙ্গে সিস্টেমে লিখে রাখা নম্বরের মিল নেই। এসএসসি-র এই মেধাতালিকাকে চ্যালেঞ্জ করে বেশ কয়েক হাজার পরীক্ষার্থী হাইকোর্টে মামলা করলে নিয়োগপ্রক্রিয়া থেমে যায়। মামলাগুলি এখনও বিচারাধীন। স্বাভাবিত ভাবেই গত কয়েক বছরে কোনও নিয়োগ হয়নি স্কুলে।  তৃণমূলের বিরুদ্ধে স্বজনপোষণ ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে শিক্ষক-চিকিৎসক নিয়োগেও। হেলথ রিক্রুটমেন্ট বোর্ড গত ১৫ ফেব্রুয়ারি শিক্ষক-চিকিৎসকের পদে মোট ৬৪৭ জন প্রার্থীর তালিকা প্রকাশ করে। অভিযোগ, শাসকদলের বিভিন্ন নেতা-মন্ত্রীর আত্মীয় ও ঘনিষ্ঠ প্রার্থীদের নিয়োগ করা হয়েছে। সম্প্রতি বনকর্মী নিয়োগেও দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। রাজ্যের বিভিন্ন  পুরসভায় কর্মী-আধিকারিক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ ভূরি ভূরি।  লকডাউনের সময় রেশনে দুর্নীতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে নবান্নকে চিঠি দিয়েছিলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। নবান্ন থেকে পাল্টা চিঠিতে রাজ্যপালকে আশ্বস্ত করার পাশাপাশি মেনে নেওয়া হয় রেশন সংক্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগে ইতিমধ্যে ৩২টি মামলা রুজু করেছে পুলিশ। অর্থাৎ দুর্নীতি হয়েছে রেশনে। 

স্বাভাবিক ভাবেই এবারের ভোটে দুর্নীতির প্রশ্নে রেশন থেকে আমফানের প্রসঙ্গ তুলে তৃণমূলকে নিশানা করেছে বিজেপি। গত দশ বছরে বাংলায় এত দুর্নীতি হয়েছে যে ‘করাপশন অলিম্পিক করা যাবে’ বলে মনে করছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাঁর কথায়, ‘এরা বড় খেলোয়াড়। খুব খেলেছে। খেলে খেলে বাংলার গরিবদের লুটেছে। কিচ্ছু ছাড়েনি। আমফানের টাকা লুঠ করেছে। তোলাবাজি, সিন্ডিকেট অনেক খেলা খেলেছে।’ 

PREV
click me!

Recommended Stories

১ বছর পরে ২ দিনের সফরে কোচবিহার যাচ্ছেন মমতা, রইল সোম ও মঙ্গলের ঠাসা কর্মসূচি
Dilip Ghosh: বাংলায় ‘বাবরি মসজিদ’! বিজেপির দিলীপ হুমায়ুনকে দিলেন চরম উপদেশ