দীর্ঘ দুই দশক পরে ভোট দেবেন দুই স্বাধীনতা সংগ্রামীর স্ত্রী, ১২ডি ফ্রমই এনে দিল সুযোগ

বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় দীর্ঘ দুই দশক ভোট দিতে পারেননি

এবার পোস্টাল ব্যালটের সুবিধা থাকায় ভোট দিচ্ছেন হরিশ্চন্দ্রপুরের দুই স্বাধীনতা সংগ্রামীর স্ত্রী

গীতা ভট্টাচার্য ও নমিতা ভট্টাচার্যের স্বামীরা ছিলেন গান্ধীবাদী স্বাধীনতা সংগ্রামী

আবার তাঁরা দুজনেই রবীন্দ্র সহচর দেশিকোত্তম বিধুশেখর শাস্ত্রীর ভাতুষ্পুত্র বধুও বটে

বার্ধক্যজনিত অসুস্থতার কারণে দীর্ঘ দুই দশক ভোট কেন্দ্রমুখী হতে পারেননি। এবারে নির্বাচন কমিশন ৮০ বছরের ঊর্ধ্ব অসুস্থ ভোটারদের জন্য বাড়িতেই পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ করার ব্যবস্থা নেওয়ায় স্বভাবতই খুশি হরিশ্চন্দ্রপুর মধ্য পাড়ার বাসিন্দা গীতা ভট্টাচার্য ও নমিতা ভট্টাচার্য। দুজনেরই বয়স ৯০ এর কোঠায়। দুই বৃদ্ধার স্বামী ছিলেন তৎকালীন গান্ধীবাদী স্বাধীনতা সংগ্রামী। দুজনেই আবার রবীন্দ্র সহচর দেশিকোত্তম বিধুশেখর শাস্ত্রী র ভাতুষ্পুত্র বধু । গোটা ভারতবর্ষে যখন মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর নেতৃত্বে ভারতছাড়ো ও সত্যাগ্রহ আন্দোলন এই ঢেউ আছড়ে পড়েছে। সে সময় হরিশ্চন্দ্রপুরের অনেক সম্ভ্রান্ত বংশের কৃতি সন্তান মহাত্মা গান্ধীর পথ অনুসরণ করেছিলেন। এরই মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেনহরিশ্চন্দ্রপুর এর সু-সন্তান তথা দেশিকোত্তম বিধুশেখর শাস্ত্রীর উত্তরসূরী কালিবাড়ি র বিষ্ণু ব্রত ভট্টাচার্য্য এবং শ্রী সুন্দর ভট্টাচার্য। এরা দুজনেই ছিলেন  বিধুশেখর শাস্ত্রী র ভাইয়ের ছেলে ।এবারের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে এই দুই স্বাধীনতা সংগ্রামির স্ত্রীরা  বাড়িতে বসেই পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দেওয়ার সুযোগ পাবেন। সৌজন্যে নির্বাচন কমিশন।

স্বাধীনতা সংগ্রামী বিষ্ণু ব্রত ভট্টাচার্য এর নমিতা ভট্টাচার্যের বয়স 90 পার করে গিয়েছে। শেষ কবে বুথে গিয়ে ভোট দিয়েছেন মনে নেই। তাও সেটা কুড়ি বছরের বেশি হবে বলেই জানালেন তিনি। একসময় হরিশ্চন্দ্রপুর কিরণবালা বালিকা বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার সময় প্রথম প্রধান শিক্ষিকা ছিলেন। এবারে ভোট দিতে পারবেন বাড়িতে বসেই শুনেই খানিকটা স্মৃতিমেদুর হলেন।তিনি জানালেন সবে মাত্র গ্রাজুয়েশন পাস করে চাকরিতে ঢোকার পরপরই দেশজুড়ে প্রথম সাধারণ নির্বাচন এর প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। সময়টা ১৯৫১ সাল। চাকরির সুবাদেডাক এসেছিল পোলিং অফিসার হওয়ার। মজার কথা হল তখন দেশে 21 বছর না হলে ভোটাধিকার প্রয়োগ করা যেত না। চাকরির বয়স হলেও ভোটের বয়স হয়নি। তবুও নির্বাচন কমিশনের আদেশ মোতাবেক পোলিং অফিসার হয়ে ভোট নিতে গিয়েছিলেন মালদহের বার্লো গার্লস স্কুলে। তারপরে চাকরি জীবনে বহুবার ভোট প্রক্রিয়ার সঙ্গে  যুক্ত থেকেছেন। হরিশ্চন্দ্রপুরএ তিনি বেশ কয়েকবার ভোট দান করেছেন। তারপরে অবসর গ্রহণ করে কলকাতায় তার ভোটদান কেন্দ্র পরিবর্তিত করে নেন। সেখানেও বহুবার ভোট দিয়েছেন। তারপর বার্ধক্যজনিত অসুস্থতার কারণে আর ভোট কেন্দ্রমুখী হতে পারেননি। এর পর বেশ কয়েক বছর হল হরিশ্চন্দ্রপুর এর গ্রামের ভিটেতে ফিরে এসেছেন।নির্বাচন কমিশন এবারে বাড়িতেই ভোট নেওয়ার কথা ঘোষণা করায় খুব খুশি। তিনি জানালেন আবার বহুদিন পর নিজের ভোট দিতে পারব। ব্লক থেকে নির্বাচনী আধিকারিকরা এসে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের সই করিয়ে নিয়ে গিয়েছেন।এটা ভেবে ভালো লাগছে আমাদের মত বয়স্ক ভোটারদের জন্য নির্বাচন কমিশন এই ধরনের অভিনব উদ্যোগ নিয়েছে।

Latest Videos

অন্যদিকে ওই পরিবারের ই আরেক গান্ধীবাদী স্বাধীনতা সংগ্রামী শ্রী সুন্দর ভট্টাচার্য এর স্ত্রী সম্পর্কে নমিতা দেবীর জা গীতা ভট্টাচার্য্য জানালেন খুব ছোট বয়সেই বিয়ে হয়ে এসেছিলাম এই পরিবারে। তারপর হরিশ্চন্দ্রপুর হাইস্কুলে বহুবার ভোট দিতে গিয়েছি।তবে কবে যে শেষ ভোট দিয়েছি তা মনে নেই সঠিকভাবে ।তবে শেষ যে বছর বীরেন্দ্র কুমার মৈত্র হরিশ্চন্দ্রপুর থেকে প্রার্থী হয়েছিলেন সে বছরই আমার এখানে শেষ ভোট দেওয়া। তারপর আর বাড়ি থেকে ভোট দিতে পারেনি। শারীরিক অসুস্থতা ও বার্ধক্য জনিত সমস্যার কারণে ভোট কেন্দ্র মুখি হতে পারেনি। তবে টিভিতে বসে বসে ভোটের খবরা-খবর এখনো দেখি। এবার তো বাংলার মেয়ে মমতা ব্যানার্জি আর নরেন্দ্র মোদির লড়াই। সবই খবর দেখতে পাচ্ছি। প্রতিবারই বাড়িতে ভোট প্রচারে এলাকার রাজনৈতিক দলগুলি আসেন। এখনো পর্যন্ত কেউ আসেনি যদিও। তবে এবার ব্লক প্রশাসন থেকে আধিকারিকরা এসেছিলেন তারা জানালেন বাড়িতে বসেই ভোট দিতে পারব। আমরাও তার জন্য আবেদন করেছি। শুনলাম আমাদের বাড়িতে পাশের ঘরেই ভোট গ্রহণ কেন্দ্র হবে। তার জন্য পোলিং অফিসারসহ আসবেন। নির্বাচন কমিশন আমাদের জন্য এরকম ব্যবস্থা করেছেন বলে ওনাদের ধন্যবাদ জানাই।

এ প্রসঙ্গে এলাকার বুথ লেভেল অফিসার তথা শিক্ষক অমিত কুমার দাস জানালেন আমরা হরিশ্চন্দ্রপুর বিধানসভা এলাকায় বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে সমীক্ষা করে দেখছি 80 বছরের ঊর্ধ্বে যে সমস্ত ভোটার রয়েছেন যারা শারীরিকভাবে অক্ষম তাদেরই এবার বাড়িতে বসে পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ করার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

অন্যদিকে এব্যাপারে হরিশ্চন্দ্রপুর 1 নং ব্লকের সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক অনির্বাণ বসু জানান 46 নম্বর হরিশ্চন্দ্রপুর বিধানসভার হরিশ্চন্দ্রপুর 1 নম্বর ব্লক এলাকার তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েতে আমরা সার্ভে করেছি। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ মোতাবেক শারীরিকভাবে অসুস্থ 80 বছরের উর্ধ্বে বেশ কয়েকজন ভোটারদের এবার বাড়িতে বসেই পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এলাকায় নির্বাচন গ্রহণের  দিনের 5 দিন আগে তাদের ভোট গ্রহণ সম্পন্ন করা হবে। ক্ষেত্রে ওনাদের বাড়িতেই পোলিং স্টেশন তৈরি করা হবে।এবং নির্বাচন কমিশনের গাইডলাইন মেনে ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। তবে এটা ভেবে খুব ভালো লাগছে যে এলাকার দুজন স্বাধীনতা সংগ্রামীর স্ত্রী এই ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করবেন।

Share this article
click me!

Latest Videos

'আমরা স্বাধীন করালাম আর বাংলাদেশ বাবা-মা ভাবছে পাকিস্তানকে', বাংলাদেশকে ধুয়ে দিলেন Locket Chatterjee
সৎ বাবা না পাষণ্ড! কাণ্ড দেখে আঁতকে উঠবেন আপনিও! | South 24 Parganas News Today
'ভারতকে এতটাও Underestimate করা ঠিক না' বাংলাদেশকে চরম হুঁশিয়ারি Mithun Chakraborty-র
রংরুটের জেরে মুখোমুখি যাত্রীবাহী বাস ও ডাম্পার! সংঘর্ষে কেঁপে উঠলো গোটা এলাকা | Nadia News Today
দেব-এর পোস্টারে দুধ ঢাললেন অনুরাগীরা #shorts #khadan #devadhikari