বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক মেটাতে সালিশি সভা, ১২টি পরিবারকে একঘরে করার নিদান

  • বীরভূমে সালিশি সভায় নিদান 
  • বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক মেটাতে নিদান 
  • ১২টি পরিবারকে একঘরে করার নিদান 
  • হস্তক্ষেপ করেছে স্থানীয় প্রশাসন 
     

Asianet News Bangla | Published : Jun 24, 2021 1:25 PM IST

বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক মেটাতে মোড়লের নিদানে একঘরে গাঁয়ের ১২ টি পরিবারের ৮০ জন সদস্য। পুকুরের জল ব্যবহার, টিউবওয়েল থেকে জল নেওয়া, গাঁয়ে মেলামেশা করতে দেওয়া হচ্ছে না।  এমনকি ধোপানাপিতও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। মারধরও করা হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। শুনতে হচ্ছে অকথ্য গালিগালাজ। গাঁয়ের মোড়লের নিদানেই এমন পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন ১২ পরিবারের সদস্যরা। বীরভূমের সাঁইথিয়া থানার গোরাইপুর আদিবাসী পাড়ার এমন ঘটনা ঘিরে ফের শোরগোল পড়েছে।

কিন্তু কেন?
এলাকার মানুষা জানিয়েছেন, ঘটনার নেপথ্যে রয়েছে ওই ১২ টি পরিবারের সদস্যদের অনড় মনোভাব। অভিযোগ আদিবাসী সমাজের রীতি মানতে চায়নি। ঔদ্ধত্য দেখিয়েছিল গ্রামের প্রধানমের বিরুদ্ধে গিয়ে। যা ভালোভাবে নেয়নি গ্রামের আদিবাসী সম্প্রদায়। তাই তাদের শায়েস্তা করতেই মোড়ল ও তার দলবল সালিশী সভা বসিয়ে ১২ পরিবারকে সজাম থেকে বিচ্যুত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এবং শুধু তাই নয়, পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক বিরোধীতার ইন্ধনও।

কি ঘটেছিল ?
একঘরে হওয়া ১২ টি পরিবারের সদস্যদের একজন যুবক সোম সোরেন। 'লম্পট' ছেলে বলেই যার পরিচয় দিচ্ছেন গাঁয়ের অধিকাংশ মানুষ। মাস দেড়েক আগে ওই যুবকের সাথে গাঁয়ের এক গৃহবধূর পরকীয়ার সম্পর্ক সামনে আসে। যা নিয়ে অশান্ত হয়ে ওঠে গ্রামটি। বসে সালিশী সভা। জানা গেছে, সেই সভায় জরিমানা হিসেবে প্রচুর পরিমাণে মদ চাওয়া হয় যুবকের কাছ থেকে। যুবক একরোখা মেজাজ নিয়ে তা দিতে অস্বীকার করে। যুবকের আত্মীয় পরিজন মিলে প্রায় ১৮ টি পরিবার পক্ষ নেয় যুবকের। 

সালিশি সভায় গ্রাম ভাগ
সালিশি সভাতেই গ্রামের বাসিন্দারা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। একপক্ষ যুবকের পাশে দাঁড়ায়। অন্যপক্ষ প্রধানকেই সমর্থন করে।  কেন আদিবাসী সমাজের রীতি মেনে মোড়লের দেওয়া নিদান মানবে না গাঁয়ের কয়েকটা পরিবার এই প্রশ্নে ফের সালিশী সভা বসে বুধবার। সেখানে দুই পক্ষের হাতাহাতি পর্যন্ত হয়। তারপরই গাঁয়ের মোড়ল শরত হেমব্রম ১২ টি পরিবারকে একঘরে করার নিদান দেন। শুধু পুকুর বা কলের জল নয়, সরকারি যেকোনো সুবিধা থেকেই ওই ১২ টি পরিবারকে ব্রাত্য রাখারও নিদান দেওয়া হয়েছে। 

একঘরে হওয়ার পরিবারের অভিযোগ
একঘরে হওয়া পরিবারের এক সদস্য মঙ্গল সোরেন বলেন, “আমার কাকার ছেলের পরকীয়া সম্পর্ককে কেন্দ্র করে গ্রামের আঠারোটা পরিবারকে একঘরে করা হয়েছিল। পরে ছটা পরিবারকে মোড়ল নিজেদের দলে নিলেও, আমরা আমাদের নিজেদের সিদ্ধান্তে অটুট ছিলাম মোড়লের নিদান মানব না। তাই সালিশি সভা বসিয়ে আমাদেরকে একঘরে করা হয়েছে। আমরা কোথাও কিছু করতে পারছি না। পুকুরের জল, টিউবওয়েলের জল নিতে পারবো না বলে জানিয়েছে। আমাদের ব্যাপক মারধরও করা  হয়েছে।” বাড়িতে বাচ্চা রয়েছে। বয়স্ক মহিলারা রয়েছে। সবাইকে নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় আছি। ঝামেলা বাড়ার ভয়ে প্রশাসনের কাছেও যেতে পারছি না”।

সালিশি সভার কথা অস্বীকার
 গ্রামের মোড়ল শরত হেমব্রম সালীশ সভার কথা স্বীকার করে বলেন, “আমি গ্রামের মোড়ল। ওরা আমাকে মোড়ল ঠিক করেছে। ওদের কথা যেমন আমাকে শুনতে হবে, সেরকম আমার কথাও ওদেরকে শুনতে হবে। এটাই আমাদের সমাজের রীতি”। গ্রামেরই এক বরিষ্ঠ সদস্য জানিয়েছেন, “আদতে একদিকে গ্রামে মোড়ল ও তার দলবল এবং অপরদিকে ওই ১২ টি পরিবার। গাঁয়ে দুটো পক্ষ হয়ে গিয়েছে। যার ফলস্বরূপ বিবাদ চরমে পৌঁছেছে। 

রাজনীতির রঙ
 খানিকটা রাজনৈতিক ইন্ধনও আছে। কারণ অভিযোগকারী এই মঙ্গল সোরেনই এক সময় গাঁয়ের তৃণমূলের নেতা হিসেবে পরিচিত ছিল। পরে   করে বনিবনা না হওয়ায় সে বিজেপিতে গেছে। অপরদিকে মোড়ল ও তার দলবল এখন তৃণমূলের দিকেই ঘেঁষে আছে। বিবাদের পেছনে এটাও একটা কারন”। ঘটনা প্রসঙ্গে সাঁইথিয়ার বিডিও স্বাতী দত্ত মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, “ঘটনা জানার পরই পুলিশ হস্তক্ষেপ করেছে। উভয় পক্ষকে ডেকে পাঠানো হয়েছে। ব্লক প্রশাসনের তরফ থেকেও চেষ্টা চলছে দ্রুত সমস্যার নিষ্পত্তি ঘটানোর”।

Share this article
click me!