ছিনতাই হওয়া মোবাইল ফোন উদ্ধার করার চেষ্টা। আর তা করতে গিয়েই চলন্ত ট্রেন থেকে পড়ে মৃত্যু হল এক তথ্যপ্রযুক্তি কর্মীর। শনিবার রাতে মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনা ঘটেছে হাওড়ার উলুবেড়িয়া স্টেশনে। মৃত যুবকের নাম সৌরভ ঘোষ (২৬)। তিনি জামশেদপুরের বাসিন্দা।
উলুবেড়িয়ার জিআরপি পুলিশ সূত্রে খবর, মৃত যুবক সল্টলেকের তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে কর্মরত ছিলেন। প্রত্যেক শনিবার হাওড়া স্টেশন থেকে সমস্তিপুর এক্সপ্রেস ধরে বাড়ি ফিরতেন তিনি। শনিবারও সেভাবেই বাড়ি ফিরছিলেন সৌরভ। হাওড়া থেকে ছেড়ে ওই এক্সপ্রেস ট্রেনটি রাত দশটা নাগাদ উলুবে়ড়িয়া স্টেশনে বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়ায়। সেসময় সৌরভ নিজের আসনে বসেই মোবাইল ফোনে কথা বলছিলেন। অভিযোগ, ট্রেন ছাড়ার মুহূর্তে এক যুবক সৌরভের হাতের মৌবাইল ফোনটি ছিনিয়ে নিয়ে ট্রেন থেকে নেমে যায়। তার পিছু নেন সৌরভ। ততক্ষণে ট্রেনটি যথেষ্ট গতি নিয়ে নেয়। ছিনতাইবাজকে ধাওয়া করে ট্রেন থেকে নামতে গিয়ে শরীরের ভারসাম্য রাখতে পারেননি সৌরভ। কারণ ততক্ষণে ট্রেনটিও প্ল্যাটফর্ম ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিল। লাইনের উপর পড়ে গিয়ে মাথায় গুরুতর চোট লাগে তাঁর।
অভিযোগ, দীর্ঘক্ষণ রেল লাইনেই পড়েছিলেন ওই যুবক। খবর পেয়ে রাত প্রায় বারোটা নাগাদ সৌরভকে উদ্ধার করে উলুবেড়িয়া জিআরপি থানার পুলিশ। উলুবেড়িয়া হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।
ট্রেন থেকেই সৌরভের পরিচিত এক যুবক ফোনে সৌরভের বাবা- মাকে বিষয়টি জানান। পরে জিআরপি থেকেও পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। এ দিন সকালেই জামশেদপুর থেকে কলকাতায় এসে পৌঁছন সৌরভের বাবা- মা এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা। তাঁদের অভিযোগ, রেলের নিরাপত্তাহীনতার কারণেই এ ভাবে প্রাণ দিতে হল সৌরভকে।
সৌরভের বাবা সঞ্জয় কুমার ঘোষ জানান, 'ছেলের মোবাইল ফোনের খুব শখ ছিল। যে ফোনটি ও ব্যবহার করত, তার দাম প্রায় এক লক্ষ টাকা। ফোনের জন্য জীবনটাই দিয়ে দিল।'
দক্ষিণ পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সঞ্জয় ঘোষ জানিয়েছেন, ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আরপিএফ এবং জিআরপি কীভাবে আরও সমন্বয় রক্ষা করে কাজ করতে পারে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
অভিযোগ, উলুবেড়িয়া স্টেশনে ওই একই জায়গায় মাসখানেক আগে পশ্চিম মেদিনীপুরের এক সরকারি অফিসারের মোবাইল ফোন ছিনতাই করে ট্রেন থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। যদিও সেই ঘটনাতে এখনও কাউকে গ্রেফতার করে পারেনি জিআরপি। তাঁর মধ্যেই অকালে ঝরে গেল তরতাজা একটি প্রাণ।