কলকাতায় তাঁর রোড শোতে জনজোয়ার দেখে অমিত শাহ নিশ্চিত, রাজ্যে পরিবর্তন হচ্ছেই। এমন কী, বাংলায় বিজেপি অন্তত তেইশটি আসন পাবে বলেও দাবি করলেন আত্মবিশ্বাসী অমিত। ব্যঙ্গের সুরে মমতাকে তাঁর পরামর্শ, "এই বয়সে রাগ করবেন না, প্রেসার বাড়বে।"
এ দিন ধর্মতলা থেকে বিবেকানন্দ রোড পর্যন্ত রোড শো করেন অমিত শাহ। হুডখোলা জিপে উঠে পুষ্পবৃষ্টির মধ্যে জনতার উদ্দেশে হাত নাড়েন অমিত। বিপুল রাস্তা জুড়ে জনজোয়ার এবং বিজেপি সমর্থকদের উন্মাদনা দেখে স্পষ্টতই খুশি হন অমিত। তাঁর শরীরী ভাষাতেই সেটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। রোড শোর মাঝখানেই সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরার সামনে তিনি বলে দেন, "তেইশ তারিখ বাংলা থেকে অন্তত তেইশটি আসন পাবেই বিজেপি। এই ভিড় বলে দিচ্ছে যে বাংলায় পরিবর্তন আসন্ন।"
যদিও এ দিন এই রোড শো শুরু হওয়ার আগেও অবশ্য উত্তেজনা ছড়ায়। মিছিলের রুট এবং মঞ্চ বাঁধা নিয়ে পুলিশের সঙ্গে বচসায় জড়ান বিজেপি নেতারা। এ প্রসঙ্গে বিজেপি সভাপতি বলেন, "দিদির যত রকম বিরোধিতা করার করে নিক, ফল ওনার বিপক্ষেই যাবে, বিজেপি বাংলায় জিতবেই।" এ দিন অমিত শাহের সঙ্গে একই গাড়িতে ছিলেন কলকাতা উত্তর কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী রাহুল সিংহ এবং বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। উল্লেখ্য, যে রাস্তা ধরে আজকে বিজেপি সভাপতি রোড শো করেন, তার গোটাটাই কলকাতা উত্তর কেন্দ্রের মধ্যে পড়ে।
মানুষের উন্মাদনা দেখে অমিত শাহ বলেন, "এটা উন্মাদনা না, মমতার বিরুদ্ধে বাংলার মানুষের রাগ প্রকাশ পাচ্ছে। যেভাবে বাংলায় গণতন্ত্রের হত্যা হচ্ছে, বাংলার গরিমা, সংস্কৃতি নষ্ট করেছেন, তাতে মানুষ ভয়ঙ্কর ক্ষুব্ধ।"
কয়েকদিন আগেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একটি জনসভায় বলেছিলেন, তাঁর সঙ্গে যা করা হচ্ছে সময় মতো সবকিছুর বদলা নেবেন তিনি। এই প্রসঙ্গে অমিত শাহ বলেন, "উনি তো ইতিমধ্যেই বদলা নিচ্ছেন। আমাদের ষাটজনের বেশি কর্মী এর মধ্যে খুন হয়েছেন। এর পরে কি আমাদেরও মারবেন? যা করার করে নিন।" যদিও অমিত দাবি করেন, বাংলায় ক্ষমতায় এলে তাঁরা বদলার রাজনীতি করবেন না। বাংলার গরিমা, সংস্কৃতির সঙ্গে মেলে, এমন সরকারই তৈরি করবে বিজেপি। অমিতের কথায়, ষোলটি রাজ্যে আমাদের সরকার হচ্ছে। কোথাও আমরা বিরোধীদের সঙ্গে কোনওরকম প্রতিহিংসামূলক রাজনীতি করিনি।
মমতার উদ্দেশে সবশেষে অমিত বলেন, "মমতাদিদিকে বলব রাগ করবেন না, তাতে রক্তচাপ বাড়বে. এই বয়সে রক্তচাপ বৃদ্ধি ভাল নয়।"
এ দিন অমিত শাহ কলেজ স্ট্রিট দিয়ে যাওয়ার সময় তাঁকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সদস্যরা বিশ্ববিদ্যালয়ের গেট থেকে অমিত শাহকে কালো পতাকা দেখানোর চেষ্টা করা হয়। স্লোগান দেওয়া হয়, "অমিত শাহ চোর হ্যাঁয়।" অমিত শাহকে উদ্দেশ করে গো ব্যাক স্লোগানও দেওয়া হয়। পাল্টা তাঁদের উদ্দেশে স্লোগান দিতে শুরু করেন এবিভিপি সমর্থকরা। টিএমসিপি-র বিক্ষোভ যাতে অমিত শাহের চোখে না পড়ে, তার জন্য বড় বড় ব্যানার নিয়ে এসে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের গেট আড়াল করে দেন এবিভিপি সমর্থকরা। জোরে সাউন্ড বক্স চালিয়ে দেওয়া হয়। বিজেপি-র মিছিল থেকে বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে ইট, জলের বোতল, চটি ছুড়ে মারা হয় বলে অভিযোগ। তীব্র উত্তেজনার পরিবেশ শুরু হলেও কোনওক্রমে দু' পক্ষকে সামাল দেয় বিশাল পুলিশবাহিনী।