কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে সোমবারই তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভোটে নিরাপত্তা দিতে এসে কেন কেন্দ্রীয় বাহিনী গুলি চালাবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। কেন্দ্রীয় বাহিনী আইনভঙ্গ করলে রাজ্যের পুলিশ, প্রশাসনকে ভয় না পেয়ে তাতে বাধা দেওয়ার নির্দেশও দেন মমতা।
মুখ্যমন্ত্রীর এই নির্দেশের চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিককে চিঠি দিলেন রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব অত্রি ভট্টাচার্য। কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে একাধিক নিয়মভঙ্গের অভিযোগ তুলে বেশ কয়েকটি ঘটনার উল্লেখ করা হয়েছে চিঠিতে।
গত রবিবার ষষ্ঠ দফার ভোটগ্রহণের দিন ঘাটাললের কেশপুরে গুলি চালানোর অভিযোগ উঠেছিল বিজেপি প্রার্থী ভারতী ঘোষের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সিআইএসএফ জওয়ানদের বিরুদ্ধে। সেই গুলিতে এক গ্রামবাসী আহত হন বলে অভিযোগ। এর আগে বীরভূমের দুবরাজপুরে বুথে ঢুকে গুলি চালানোর অভিযোগ উঠেছিল বাহিনীর বিরুদ্ধে। হাওড়া-সহ রাজ্যের একাধিক জায়গায় নির্দিষ্ট কারণ ছাড়াই কেন্দ্রীয় বাহিনী লাঠিচার্জ করেছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে চিঠিতে। অন্তত পাঁচটি ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় বাহনিী নিয়মভঙ্গ করেছে বলে অভিযোগ রাজ্যের। শুধু তাই নয়, কেন্দ্রীয় বাহিনী ভোটারদের ভয় দেখাচ্ছে বলেও অভিযোগ করা হয়েছে রাজ্যের তরফে। বুথ থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকলেও কেন্দ্রীয় বাহিনী সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করছে বলেও অভিযোগ করা হয়েছে।
ভোট গ্রহণের দিন গণ্ডগোল রুখতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের নিয়ে কুইক রেসপন্স টিম রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু প্রথম দফার ভোটের পরেই রাজ্যে কুইক রেসপন্স টিমের সঙ্গে রাজ্যের কোনও আধিকারিককে না রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করে কুইক রেসপন্স টিমের সঙ্গে রাজ্যের আধিকারিকদেরও রাখার আবেদন করা হয়েছে নির্বাচন কমিশনের কাছে।
কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন নিয়ে প্রথম থেকেই নিজেদের আপত্তির কথা জানিয়ে এসেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সম্প্রতি কয়েকটি জনসভায় তিনি সংশয় প্রকাশ করে বলেছেন, কেন্দ্রীয় বাহিনীর পোশাক পড়ে আরএসএস-এর সদস্যরা ভোট গ্রহণের দিন গণ্ডগোল পাকাচ্ছে। কেন্দ্রীয় বাহিনীকে বিজেপি নিজেদের স্বার্থসিদ্ধিতে ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ করেছেন মমতা। কেন্দ্রীয় বাহিনী যাতে নির্বাচন কমিশনের বিধিনিষেধ মেনে চলে, সেই হুঁশিয়ারিও দেন তিনি। রাজ্যের তরফে নির্বাচন কমিশনকে যে চিঠি দেওয়া হল, তাতেও কার্যত কেন্দ্রীয় বাহিনীকে নিয়ে মমতার অভিযোগগুলিকেই তুলে ধরা হল। শেষ দফার ভোটের আগে এই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন কোনও পদক্ষেপ করে কি না, সেটাই এখন দেখার।