বিপদ থেকে বাঁচতে গিয়ে উল্টে বিপত্তি। হাতির পালকে তাড়াতে গিয়ে দলছুট হাতির শাবক। পাল্টা তার তাড়ায় নাজেহাল অবস্থা হল বনকর্মীদের।
পুজোর আগে থেকেই পশ্চিম মেদিনীপুরের সদর ব্লকে হাজির হয়েছিল দলমা থেকে একটি বড় হাতির পাল ৷ মেদিনীপুর সদর ব্লকের চাঁদড়া রেঞ্জের বনকর্মীদের ঘুম উড়িয়ে এদিক ওদিক দাপিয়ে বেড়িয়েছে পালটি ৷ পুজোর পরে সেই পালটিকে তাড়াতে গিয়ে বিপত্তি একটি শাবককে ঘিরে ৷ পালের সঙ্গে না পালাতে পেরে ঝোপে আটকে পড়েছিল সেটি ৷ তাকে উদ্ধার করতে দিনভর হিমশিম খেতে হল বনকর্মী ও হুলাপার্টিকে ৷ শাবক হাতির তাড়া খেয়ে নাজেহাল হলেন সকলে ৷
পুজোর মুহূর্তেই চাঁদড়া এলাকায় হাতির পালকে কেন্দ্র করে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন গ্রামবাসীরা। কিন্তু পুজোর সময় গ্রামের ভিতরে ঢুকে হাতির পালকে চটাতে চায়নি বনকর্মীরা। কোনও ভাবে আটকে রেখে পুজো শেষ হতেই বৃহস্পতিবার হাতির পালটিকে তাড়ানো শুরু হয় ৷ কিন্তু প্রায় পঞ্চাশটি হাতির পালকে তাড়াতে গিয়ে কালঘাম ছুটে যায় বনকর্মীদের। এদিন সকাল থেকে জনা পঁচিশ হুলাপার্টির কর্মীকে চাঁদড়া রেঞ্জের কর্মীরা পালটিকে তাড়ানো শুরু করে ৷ পরে ঝরিয়া থেকে বাঘঘড়া পর্যন্ত তাড়িয়ে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে পাঠিয়ে দেয় প্রথম ধাপে ৷ তারপরই সমস্যা দেখা দেয় ৷ হাতির পালটির একটি দাঁতাল হাতি দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে ৷ তাকে পাঠাতে বেগ পেতে হয় কর্মীদের ৷
বনকর্মীরা বুঝতে পারে কোনও সমস্যা হয়েছে ৷ তাড়ানোর স্থানে এসে বুঝতে পারে একটি শাবক চিৎকার করছে ৷ তাকে উদ্ধার করে পালের দিকে পাঠানোর চেষ্টা করে বনকর্মীরা ৷ দুটি হাতি তাড়ানোর ঐরাবত গাড়ি ও অন্যান্য পদ্ধতি অবলম্বন করে শাবকটিকে আটকে ধরার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হতে হয় বনকর্মীদের ৷ মা ছাড়া শাবকটি হিংস্র হয়ে বনকর্মী ও হুলাপার্টির কর্মীদের দিনভর তাড়িয়ে গিয়েছে ৷ পরে শাবক তাড়াতে গিয়ে পড়ে জখমও হন বেশ কয়েকজন। হুলার আগুনকেও ভয় পায়নি ওই শাবক ৷ বেলা এগারোটা থেকে বিকেল চারটে পর্যন্ত ঝরিয়ার জঙ্গলে বনকর্মীদের এভাবেই হয়রান হতে হয় ৷ শেষ পর্যন্ত বনকর্মীরা সিদ্ধান্ত নেন, শাবকটিকে ধরে ঝাড়গ্রামে পার্কে পাঠানো হবে ৷ কিন্তু হাজারো চেষ্টা করেও তা সম্ভব হয়নি ৷ বন দফতরের এক কর্মী সুশান্ত মাহাতো বলেন,আমরা সকলেই চেষ্টা করেছি বিভিন্ন ভাবে ৷ শাবকটি হিংস্র হয়ে সকলকে আক্রমণ করে গিয়েছে ৷ সন্ধা পর্যন্ত আমরা চেষ্টা করব ৷ শাবকটিকে না ফেরাতে পারলে শাবকটি মারা পড়তে পারে ৷ শাবকটির মা হাতিটিও হিংস্র হয়ে যেতে পারে ৷
এদিকে,এই বিষয়টি জানতে পেরে আতঙ্কিত গ্রামবাসীরাও ৷ ঝরিয়া ,শির্ষী,বাঘঘরা গ্রামের লোকজন আতঙ্কে রয়েছেন। কারণ তাঁরা জানেন, শাবকহারা মা গ্রামে আক্রমণ করতে পারে ৷ ইতিমধ্যে এই এলাকাতে হাতির আক্রমণে বহু বাড়ি, স্কুল নষ্ট হয়েছে। মারাও পড়েছেন বেশ কয়েকজন ৷ তাই চিন্তার প্রহর গুনছে গোটা গ্রাম।