ভূতের ভয়ে ফাঁকা হয়েছিল তল্লাট, মা লক্ষ্মীর কৃপায় ফের সাজছে বেনাগ্রাম

  • পশ্চিম বর্ধমানের কুলটির বেনাগ্রাম
  • ভূতের ভয়ে ফাঁকা হয়েছিল গোটা এলাকা
  • বছরে একদিনই লক্ষ্মী পুজোয় গ্রামে ফিরতেন বাসিন্দারা
  • নতুন করে সেজে উঠছে  বেনাগ্রাম

 ১৫ বছর ধরে বসতিহীন বেনাগ্রাম। নিঝুম গ্রামে তবু বন্ধ হয়নি মা লক্ষ্মীর আবাহন। সেই মা লক্ষ্মীই কৃপা করলেন এবার ভূত গ্রামকে। একসময়ে ভূতের ভয়ে ফাঁকা হয়েছিল গোটা গ্রাম। বছরে একদিনই গ্রামে ফিরে লক্ষ্মীপুজো সারতেন বাসিন্দারা। এ হেন জনমানবশূন্য বেনাগ্রামে গ্রামে তৈরি হয়েছে নতুন রাস্তা। পুরানো ঘরগুলিতে বাসিন্দারা না ফিরলেও খামার বাড়ি অঞ্চলে শুরু হয়েছে প্লট বিক্রি। নতুন বেনাগ্রাম যেন সেজে উঠছে ধীরে ধীরে। বসতি গড়ে উঠছে অভিশপ্ত বেনাগ্রামে। রবিবারও বেনাগ্রামে হল মা লক্ষ্মীর আবাহন। এক রাতের জন্য গ্রামের মানুষ ফিরে এসে মহাসমারোহে লক্ষ্মী পুজো সারলেন।  তবে এবার পাকাপাকিভাবে গ্রামে ফিরতে চান সবাই। 

গ্রামের বুক চিরে চলে গিয়েছে ঝকঝকে ঢালাই রাস্তা। তারবিহীন বিদ্যুতের খুঁটিও দেখা যাচ্ছে সার সার। গ্রামে ঢোকার মুখে তৈরি হয়েছে নতুন দোকান। গ্রামের গা ঘেঁষে শুরু হয়েছে প্লটিং। জমি কিনছেন বাইরে থেকে আসা অনেকেই। তৈরি হচ্ছে নতুন ঘরবাড়িও। জনমানব শূন্য হয়ে পড়া বেনাগ্রামের নতুন রূপের দেখা মিলল লক্ষ্মী পুজোর প্রাক্কালে। 

Latest Videos

কুলটির ভূত গ্রাম বলে খ্যাত বেনাগ্রাম আবারও সেজে উঠছে লক্ষ্মী পুজো উপলক্ষে। তবে বছরে আর মাত্র একদিন নয়। পাকপাকি ভাবে অলক্ষ্মীর প্রভাব কাটিয়ে এবার শুরু হবে লক্ষ্মীর বাস। তেমনই ইঙ্গিত মিলল বেনাগ্রামে গিয়ে। উন্নয়নের ছোঁয়া লাগতেই গ্রামের মানুষ ফিরে আসতে শুরু করেছেন তাঁদের ভিটে মাটিতে। শুধু গ্রামের মানুষ নয় বাইরের লোকজনও জমি কিনে সেই বেনাগ্রামেই বসত বাড়ি তৈরি করছেন।

চিত্তররঞ্জন থেকে নিয়ামতপুরের দিকে যাওয়ার রাস্তায় বাঁ দিকে পড়ত জঙ্গলে ঘেরা একটি কাঁচা রাস্তা (এখন তা কংক্রিটের)। সেই পথ ধরে সামান্য এগোলেই এই বেনাগ্রাম। অন্য সময়ে সেখানে ঢুকলে গা ছমছম করাটা রীতিমতো দস্তুর। তবে ছবিটা এমন ছিল না। এক সময়ে প্রায় শ’খানেক পরিবারের বাস ছিল এই গ্রামে। পাশ দিয়েই গিয়েছে রেললাইন।  গ্রাম ছেড়ে যাওয়া কয়েক জনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বছর দশেক আগে রেললাইন লাগোয়া এলাকায় দুষ্কৃতীদের উৎপাত বাড়তে থাকে। বাসিন্দারা জানান, রাতবিরেতে বিভিন্ন বাড়ির দরজায় ইট ছোড়া বা টোকা মারার আওয়াজ শোনা যেত প্রায়দিন। এক দিন গ্রামেরই একটি পুকুর পাড়ে এক মহিলার দেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। গ্রামে নানা উৎপাত দেখা দিলেও কখনও দুষ্কৃতীদের খোঁজ না মেলায় ভূত নিয়ে গুজব ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। একে-একে সব ক’টি পরিবারই গ্রাম ছাড়ে। 

রটে যায় ভূতের ভয়ে ফাঁকা হয়েছে বেনাগ্রামে। এই গ্রামের পরিচয় হয়ে যায় ‘ভূতেরগ্রাম’ হিসেবে। তখন থেকেই খবরের শিরোনামে কুলটির বেনাগ্রাম। তবুও ভয় কাটিয়য়ে কোজাগরী পূর্ণিমার রাতে সবাই ফিরে আসতেন গ্রামের লক্ষ্মী মন্দিরে। 
 
গ্রামের লক্ষ্মী মন্দিরেই এ বছরের লক্ষ্মী পুজোর আয়োজন হয়েছিল। গ্রাম ছাড়া মানুষগুলি একটি দিনের  জন্য ফিরেছেন গ্রামে। কোজাগরী পুজোর রাতে পুজো করে আবার সবাই ফিরে যাবেন অন্যত্র। এদিন বেনাগ্রামে গিয়ে দেখা গেল, পুজো উপলক্ষ্যে গ্রামের রাস্তা পরিস্কার করা হচ্ছে পুরনিগমের পক্ষ থেকে। সুপারভাইজার গৌতম সেনগুপ্ত বলেন, গত দু' বছর ধরে পুজো উপলক্ষ্যে সাফসুতরো করা হয় বেনাগ্রামের রাস্তাঘাট।

এ বছর সুধাকর মাজি ও পীতম্বর মাজির পরিবার পুজোর যাবতীয় দায়দায়িত্বে ছিল। মাজি পরিবারের সদস্যরা বলেন, রাতভর জেনারেটর চালিয়ে বিদ্যুত আসবে। সারারাত পুজো হবে মা লক্ষ্মীর। ভোররাতে পাত পেড়ে প্রসাদ খাওয়া হবে। তাঁদের এই লক্ষ্মীপুজো হল দুর্গা পুজোর মত। সারারাত পুজোর পর আবার সবাই ফিরে যাবেন নিজের নিজের বাসায়। মা লক্ষ্মীর নামে জমি রয়েছে। সেখানে ধান চাষ হয়। সেই ফলনের ধান বিক্রি করেই পুজোর খরচ চলে। তাই গ্রামে তাঁরা না থাকলেও গ্রামে এসে প্রতি বছর লক্ষ্মী পুজো করেন তাঁরা। পুজোর পর এবারও গ্রামের বাইরে নিজেদের বাড়িতে ফিরে গেলেও খুব শিগগিরই ভূতের ভয় কাটিয়ে বেনাগ্রামে ফিরে পাকাপাকি বসবাসের কথা ভাবছেন বাসিন্দারা। 

সেই জনমানবশূন্য বেনা গ্রামে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। গ্রামের পিছনে খামার বাড়ির অংশে প্লটিং করছে প্রমোটাররা। গ্রামের মানুষ এখনও ফিরে না এলেও বাইরের মানুষজন সেই জমি কিনছেন। জমির দাম এখন অগ্নিমূল্য। বেনাগ্রামের কাঠা প্রতি দাম এখন ৩ লক্ষ টাকা করে। বাইরের লোকের হাত ধরেই গড়ে উঠছে বসতি। আর তাতেই ভরসা পাচ্ছেন গ্রামবাসীরা।

Share this article
click me!

Latest Videos

Naihati-তে কার পাল্লা ভারী? ফল ঘোষণার আগে উত্তেজনা তুঙ্গে গোটা এলাকায় | Naihati By Election Results
'কয়লার ৭৫ ভাগ তৃণমূলের (TMC) পকেটে যায়' বিস্ফোরক অভিযোগ শুভেন্দুর (Suvendu Adhikari)
Bear Rescue Operation | বরফের মধ্যে ভাল্লুকের প্রান বাঁচাল ভারতীয় সেনা, দেখুন দুঃসাহসিক ভিডিও
Live: মথুরাপুরে সদস্যতা অভিযান অগ্নিমিত্রা পালের, দেখুন সরাসরি
হঠাৎ করে TMC নেতারা পুলিশের বিরুদ্ধে কেন? কী উদ্দেশ্যে? প্রশ্ন অগ্নিমিত্রার | Agnimitra Paul