এ যেন চিং চিং ফাক-এর দশা। একের পর এক তৃণমূল নেতার বাড়িতে তল্লাশি, আর সেই তল্লাশিতে বের হচ্ছে রাশি রাশি নগদ অর্থ। এবার হালিশহর পুরসভার চেয়ারম্যানের বাড়ি থেকেও মিলল এমন অর্থ।
চিটফান্ডকাণ্ডে এবার গ্রেফতার হালিশহর পুরসভার চেয়ারম্যান রাজু সাহানি। চিটফান্ড কেলেঙ্কারিতে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁর বাড়ি থেকে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ৮০ লক্ষ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। মিলেছে একটি দেশি রিভলবারও। জানা গিয়েছে, চিটফান্ড সংস্থাকে প্রোটেশন দেওয়ার জন্য তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ডে নিয়মিত অর্থ জমা পড়ত। রাজু সাহানির বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া অর্থও চিটফান্ডের প্রোটেকশন মানি বলে সন্দেহ করছে সিবিআই।
বর্ধমানের একটি চিটফান্ড সংস্থা যা সন্মার্গ কো-অপারেটিভ নামে পরিচিত তাদেরকে নাকি প্রোটেকশন দেওয়ার জন্য চুক্তি করেছিলেন রাজু সাহানি। এমনই অভিযোগ সিবিআই পেয়েছে। আর বর্ধমান সন্মার্গ কো-অপারেটিভ চিটফান্ডের তদন্তে নেমেই রাজু সাহানির নাম পায় সিবিআই। তদন্তে নাকি জানা গিয়েছে যে নিয়মিত ওই চিটফান্ড সংস্থার থেকে অর্থ রাজু সাহানির একটি অ্যাকাউন্টে টাকা আসত। এদিন রাজু সাহানির বাড়িতে তল্লাশি চালানোর সময় যে অর্থ উদ্ধার হয়েছে তা এই প্রোটেকশন মানির অংশ কি না তা জানার চেষ্টা করছে সিবিআই। যদিও, রাজু সাহানি এই নিয়ে কোনও তথ্য জানায়নি। তদন্তে আরও জানা গিয়েছে যে রাজু সাহানির একটি বিদেশি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের খোঁজও মিলেছে। এই অ্যাকাউন্টেও প্রচুর অর্থ জমা থাকার সম্ভাবনা বলে সিবিআই সূত্রে খবর।
হালিশহরের দোর্দণ্ডপ্রতাপ তৃণমূল নেতা এবং কাউন্সিলার ছিলেন লক্ষী সাহানি। তাঁরই ছেলে রাজু। এখন রাজনৈতিক প্রভাব-প্রতিপত্তিতে বাবাকেও ছাড়িয়ে যাওয়ার উপক্রম রাজুর। হালিশহরেই রাজু সাহানির একটি বিশাল রিসর্ট রয়েছে। এর নাম হাইনেস্ট রিসর্ট। এই রির্সটের লাগোয়া রাজুর বাড়ি। শুক্রবার সকালে এই রিসর্ট লাগোয়া বাড়িতেই হাজির হয় সিবিআই-এর দল। শুরু হয় তল্লাশি এবং রাজুকে জেরা। তল্লাশি করতে করতেই উদ্ধার হয় নগদ অর্থ এবং বহু গুরুত্বপূর্ণ নথি। সন্ধ্যার দিকে রাজুকে নিজার প্যালেসে সিবিআই দফতরে নিয়ে আসা হয়। রাজুর হাত দিয়ে অন্য কোনও প্রভাবশালীর হাতে অর্থ পৌঁছাতো কি না তা খতিয়ে দেখছে সিবিআই।
একের পর এক ঘটনায় বারবার সামনে আসছে তৃণমূল নেতা ও কর্মীদের নাম। যেভাবে তাঁদের ঘর থেকে অর্থ উদ্ধার হচ্ছে ও নামে-বেনামে সম্পত্তি মিলছে তাতে বিরোধীরা প্রবল আক্রমণ করছে। তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র শান্তনু সেন জানিয়েছেন, আইন আইনের পথেই কাজ করবে। কেউ যদি ব্যক্তিগতভাবে কোনও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে থাকে তাতে দল কিছু করবে না। তবে, যেভাবে একের পর এক তৃণমূল নেতা-কর্মীদের ধরা হচ্ছে তাতে তো কেন্দ্রীয় সংস্থার তদন্ত নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে। পুরো বিষয়ের উপরেই নজর রাখা হয়েছে বলেও জানান তিনি। সেই সঙ্গে তিনি এও বলেন যে চিটফান্ডে অধীর, সুজন ও শুভেন্দুদের হাতে অর্থ তুলে দিয়েছিলেন বলে সুদীপ্ত সেন দাবি করেছেন। কিন্ত তা নিয়ে কোনও তদন্ত হয়নি। তৃণমূলকে তীব্র আক্রমণ শানিয়েছেন সুজন চক্রবর্তী, একটি সংবাদমাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে বলেছেন, পুরোটাই চোরে ভর্তি হয়ে গিয়েছে, এমন ঘটনা তো ঘটবে তা জানাই আছে। বিজেপি-র তরফেও বলা হয়েছে, এতো আগেই তারা দাবি করেছিলেন যে দুর্নীতিবাজ তৃণমূলকে ছাড়া হবে না, আরও এক রাঘব বোয়াল ধরা পড়ল, এতে আর নতুন কি, এখন দেখার রয়েছে আর কারা কারা এতে ধরা পড়ে।
আরও পড়ুন--
চার দিনের স্বস্তি অভিষেকের - সোমবার পর্যন্ত কড়া পদক্ষেপ নয়, EDকে বলল সুপ্রিম কোর্ট
'দেশের সবথেকে বড় পাপ্পু অমিত শাহ', ED-র জেরার শেষে তোপ অভিষেকের
মানিক ভট্টাচার্যের আর্জি খারিজ, হাইকোর্টে দিতেই হবে পরিবারের সকল সদস্যের সম্পত্তির খতিয়ান