সিবিআইয়ের দাবি, অনুব্রত মণ্ডলের দেহরক্ষী সায়গল হোসেন ছিলেন রাজ্য পুলিশের নিতান্ত নিম্ন পদস্থ এক কর্মী। অথচ তাঁর নামেই সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় ১০০ কোটি টাকা! স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে, একজন জনপ্রতিনিধির দেহরক্ষীই যদি এই অগণিত পরিমাণ সম্পত্তির মালিক হতে পারেন, তাহলে ওই জনপ্রতিনিধির নামে মোট কতটা সম্পত্তি থাকতে পারে?
তৃণমূল কংগ্রেসের বীরভূম জেলার বর্তমান সভাপতি এবং WBSRDA-এর চেয়ারম্যান অনুব্রত ওরফে কেষ্ট মণ্ডল ইতিমধ্যেই সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হয়ে গিয়েছেন। বীরভূমের তাবড় নেতা অনুব্রতকে এর আগে গরু পাচার কাণ্ডে মোট ১০ বার জেরাপর্বে ডেকেছিল সিবিআই। এর মধ্যে তিনি ‘অসুস্থতা’ কাটিয়ে আসতে পেরেছিলেন মাত্র ১ বার। কিন্তু, গ্রেফতারির পর প্রশ্ন হল যে,সমাজের এক জনপ্রতিনিধি হয়ে তিনি নিজের সম্পত্তি ঠিক কতটা বাড়িয়েছিলেন যে কারণে তাঁকে গরু পাচারের মামলায় গ্রেফতার করে নিল সিবিআই?
দীর্ঘ দিনের নাম করা নেতা অনুব্রত মণ্ডল। বীরভূম জেলায় তিনি ছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক। তৃণমূল কংগ্রেসের এই বীরভূম জেলা সভাপতিকে বিকেল পাঁচটা থেকে শুক্রবার সকাল সাতটা পর্যন্ত কড়া নজরদারিতে রেখেছিল নির্বাচন কমিশন। এই বিষয়ে, মঙ্গলবার একজন আধিকারিক বলেছিলেন যে, কেষ্টর বিরুদ্ধে মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক "বেশ কয়েকটি অভিযোগ পেয়েছেন”, যেগুলির কারণে অনুব্রতকে কঠোর তত্ত্বাবধানে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বর্তমানে, অনুব্রত মণ্ডলের বিশাল পরিমাণ সম্পত্তি নিয়ে তল্লাশি শুরু করতেই বিভিন্ন মহলে তৈরি হয়েছে জল্পনা ও ব্যাপক ধোঁয়াশা। বিভিন্ন সংবাদ সংস্থা ও সিবিআই যতটা দাবি করছে বা খোঁজ পাওয়া গেছে, অনুমান করা হচ্ছে যে, আদতে বিষয় সম্পত্তির পরিমাণ থাকতে পারে তার চেয়েও দশ গুণ বেশি। এই প্রসঙ্গে সবচেয়ে আগে নাম আসে সায়গল হোসেনের। এই সায়গলই ছিলেন অনুব্রতর দেহরক্ষী, যাঁকে গরু পাচার কাণ্ডে প্রথম থেকে নজরে রেখেছিল সিবিআই। কিন্তু কেন?
কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআইয়ের দাবি, এই সায়গল ছিলেন রাজ্য পুলিশের নিতান্ত নিম্ন পদস্থ এক কর্মী। অথচ তাঁর নামেই সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় ১০০ কোটি টাকা! তার মধ্যে ৪টি ফ্ল্যাট ও ৫টি বাড়ি, নিউটাউনে রয়েছে ২টি নির্মীয়মাণ বাড়ি। পাশাপাশি বিঘার পর বিঘা জমি রয়েছে তাঁর নামে। সায়গলের গাড়ির সংখ্যাও নাকি তাক লাগিয়ে দেওয়ার মতো। সিবিআইয়ের দাবি, ৩টি ১০ চাকার ট্রেলার, ১০টি গাড়ি রয়েছে সায়গল হোসেনের। ২টি পেট্রোল পাম্প, ক্র্যাশার মেশিনের সঙ্গে রয়েছে শত শত গ্রাম ওজনের সোনা।
যদিও, সায়গলের বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টে পেশ করা চার্জসিটে সিবিআই লিখেছে মোট সাড়ে ৪ কোটি টাকা। এই তথ্যের তীব্র বিরোধিতা করেন সায়গল হোসেনের আইনজীবী। তাঁর পাল্টা প্রশ্ন, সিজার লিস্ট ছাড়া কীভাবে আদালত এমন বক্তব্য গ্রহণ করছে। ফলে, আদালত সিবিআইয়ের কাছ থেকে এই সংক্রান্ত সিজার লিস্ট দাবি করে।
স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে যে, একজন জনপ্রতিনিধির দেহরক্ষীই যদি এই অগণিত পরিমাণ সম্পত্তির মালিক হতে পারেন, তাহলে ওই জনপ্রতিনিধির নামে মোট কতটা সম্পত্তি থাকতে পারে?
সিবিআই সূত্রে খবর, বীরভূম সহ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় প্রায় ৬০টির মতো জমি, বাড়ি, সম্পত্তির হদিশ পাওয়া গেছে। এগুলোর সবগুলিই অনুব্রত মণ্ডল ও তাঁর মেয়ের নামে। দলের একজন জেলা সভাপতির এত অগাধ সম্পত্তি দেখে তাজ্জব সরকারি গোয়েন্দা সংস্থার আধিকারিকরা।
এক সংবাদ সংস্থার দাবি, গত ৮ জুলাই সায়গলকে আসানসোল মহকুমা আদালতে পেশ করার সময়ই অনুব্রত মণ্ডলের ৪৫টি জমির দলিলের কাগজ হাইকোর্টের কাছে জমা দেয় সিবিআই। অন্য আরেকটি সংবাদ সংস্থা দাবি করছে যে, সায়গলকে ১৪ দিনের জেল হেফাজতের পর যেদিন আদালতে পেশ করা হয়, সেদিন অনুব্রতর আরও ১৫টি মতো সম্পত্তির নথি পেশ করে সিবিআই। সেক্ষেত্রে সব মিলিয়ে মোট ৬০ কোটির মতো সম্পত্তির হিসেব মেলে তৃণমূল নেতার।
দিল্লিতে মোদী-মমতা সাক্ষাতের মাঝেই ঘাসফুল শিবিরের বিশিষ্ট নেতার এই বিপুল পরিমাণ টাকার উৎস খুঁজে পেতে শেষমেশ গ্রেফতারিকেই হাতিয়ার করে নিল কেন্দ্রের সংস্থা। বাংলায় গোরু পাচারের বেআইনি কারবারের সঙ্গেই কি কেষ্টর সঙ্গতিহীন সম্পত্তির যোগ? সেই সম্পত্তি মোট কত, তার উত্তর খুঁজতে এখন হন্যে গোয়েন্দারা।
আরও পড়ুন-
'মাফিয়া থেকে ধাপে ধাপে অনুব্রত মন্ডল হাজার কোটির মালিক কীভাবে' -প্রশ্ন তুলছে বিজেপি থেকে সিপিএম
'অনুব্রত মণ্ডল হল মাফিয়া, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৃষ্টি এসব' বললেন শুভেন্দু অধিকারী
ছোট ব্যবসায়ী থেকে দোর্দন্ডপ্রতাপ অনুব্রত- কেমন ছিল বীরভূমের কেষ্টর যাত্রা