করোনা আবহের জেরে নাট্যশিল্পীরা এবছর নাটক হবে না ধরে নিয়েছেন। তাই কিছুটা হলেও, শিল্পীদের মন খারাপ।
কম করে ২৫০ বছরেরও বেশি পুরোনো (250 Years old) মুর্শিদাবাদের (Murshidabad) কান্দির (Kandi) নাট্যচর্চার ইতিহাস (History of Drama)।
আর এই আড়াইশো বছরের নাট্যচর্চার ইতিহাসে এখন কেবল যেন বিষাদের সুর। অতিমারির থাবায় কেমন যেন পাল্টে গিয়েছে
প্রাচীন নাট্যচর্চার পটভূমি। গ্রামের নাট্যশিল্পীরা ব্যাজার মুখে দিন গুনছেন সুদিন ফেরার আশায়। সকলেই চাইছেন এর আতঙ্ক কাটিয়ে নাট্যচর্চা ফিরুক জোয়ার।যদিও সেই সুদিন ফিরবে কবে সে নিয়ে রীতিমতো সংশয় রয়েছে খোদ নাট্যশিল্পী থেকে নাট্যকর্মীদের মধ্যেই।
প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে মুর্শিদাবাদের সুপ্রাচীন নাট্যচর্চার ধারাবাহিকতা নিয়েও। ফিবছর নিয়ম করে যখন শীতের মুখে
মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন গ্রাম-গঞ্জ থেকে শুরু করে কান্দির এলাকায় শুরু হয়ে যায় নাট্য উৎসব। কান্দি শহরে দুটি বড় ধরনের সারা বাংলা নাট্য উৎসব হয়ে থাকে। কিন্তু করোনা আবহের জেরে ভাটা পড়েছে সেখানে। তাই মহড়া করতেও দেখা যাচ্ছে না নাট্যশিল্পীদের। লেখা হচ্ছে না নতুন নাটকও।
শিল্পীদের দাবি, শর্তসাপেক্ষে প্রশাসন নাটক মঞ্চস্থ করার অনুমতি দিলে আখেরে সমাজের উপকার হবে। কান্দি মহকুমা এলাকার নাটকের দলের ইতিহাস প্রায় ২৫০ বছরের অধিক পুরাতন ইংরেজ শাসিত এই এলাকায় ওই সময় বড়ঞা থানার পাঁচথুপি ও কান্দি শহরে নাট্যদল গড়ে উঠেছিল বলে জানা যায়। এমনকী পাঁচথুপিতে একাধিক নাট্যদল ছিল। স্বাধীনতা পরবর্তীতে এলাকায় প্রচুর নাট্যদল গড়ে উঠে।বর্তমানে এলাকার গ্রামগঞ্জগুলিতেও নাট্যদল তৈরি হয়েছে।
কার্যত প্রতিবছর নাট্যদলগুলি বিভিন্ন ধরনের নাটক মঞ্চস্থ করে থাকে গ্রামের পুজো মণ্ডপে। শীতের মরশুম শুরু হতে নাটকের হিড়িক পড়ে যায়। নবান্ন উৎসব থেকে শুরু হয়। তারপর জগদ্ধাত্রী পুজো, কালীপুজোয় অসংখ্য নাটক দেখা যায়। খড়গ্রাম, বড়ঞা, কান্দি ভরতপুর, সালার থানার এলাকায় প্রচুর নাটক দেখা যায়।
এমনকী কান্দি হ্যালিফক্স মাঠে প্রায় ১৪ বছর ধরে দুটি নাট্য সংস্থা সারা বাংলা নাট্য উৎসব করে থাকে। সেখানে জার্মানি, বাংলাদেশ থেকেও নাট্যদল আসে। কিন্তু করোনা আবহের জেরে নাট্যশিল্পীরা এবছর নাটক হবে না ধরে নিয়েছেন। তাই কিছুটা হলেও, শিল্পীদের মন খারাপ। শিল্পীদের দেখা যাচ্ছে না প্রতি সন্ধ্যায় নাটকের মহড়া করতে। লেখা হচ্ছে না নতুন নাটক। চায়ের দোকানেও নাটকের স্ক্রিপ্ট লেখা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে না।
কান্দির নাট্যশিল্পী পঞ্চানন দাস বলেন, এই আবহের জেরে কীভাবে নাটক হবে? তাই নাটকের মহড়াও হচ্ছে না। প্রায় একই বক্তব্য মহকুমার বিভিন্ন প্রান্তের নাট্যশিল্পীদের। খড়গ্রামের পুনিয়া গ্রামের নাট্যশিল্পী মান্তু মণ্ডল বলেন, দুর্গাপুজোর পর থেকেই আমাদের নাটকের মহড়া শুরু হয়ে যায়। বর্তমানে গ্রামের মেয়েরাও ছেলেদের সঙ্গে অভিনয় করে। কিন্তু এবছর নাটক করা যাবে না ধরে নিয়ে সকলেই মনমরা হয়ে রয়েছেন। যদিও নাট্যশিল্পীদের একাংশের মত, রাজ্য সরকার ও প্রশাসন শর্তসাপেক্ষে নাটক করার অনুমতি দিলে আখেরে সমাজের উপকার হবে।