মেদিনীপুর পৌর এলাকার জল নিকাশি স্বাভাবিক করতে কংসাবতী নদীর এনিকেট গেট খুলে দেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, তিনদিন ধরে লাগাতার বর্ষনের কারনে এই জেলাতে বন্যা পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে।
প্রবল বর্ষণের (Heavy Rain) মধ্যে পশ্চিম মেদিনীপুরে (West Midnapur) বুধবার দুপুর পর্যন্ত ৭ জনের মৃত্যু (Death) হয়েছে বলে জানালেন জেলা শাসক ডাঃ রেশমী কমল। বর্ষণের কারনে বাড়ি ভেঙ্গেছে ৮ হাজারেরও বেশি। নামানো হয়েছে উদ্ধারকারী দল। জেলার দাঁতন ও ঘাটাল এলাকাতে সিভিল ডিফেন্স নামানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা শাসক।
জেলা শাসক জানিয়েছেন তিনদিনের বর্ষণের কারণে মেদিনীপুর ও খড়্গপুর মহকুমাতে সব থেকে বেশি ক্ষতি হয়েছে। বাড়ি ভেঙ্গে নষ্ট হয়েছে। বহুস্থানে বাড়ি চাপা পড়ে মৃত্যু হয়েছে ৫ জনের। অন্যান্য কারনে মৃত্যু হয়েছে আরও ২ জনের ৷ দাঁতন ও নারায়নগড় এলাকাতেও বন্যা পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে। মৃতদের ময়নাতদন্ত প্রক্রিয়া শেষ হলে সরকারি নিয়মে আর্থিক সাহায্য দেওয়া হবে। মানুষকে উদ্ধার করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়েছে। বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলিতে পরিদর্শন করছেন অতিরিক্ত জেলা শাসক ও আধিকারিকেরা। তবে মেদিনীপুর পৌর এলাকার জল নিকাশি স্বাভাবিক করতে কংসাবতী নদীর এনিকেট গেট খুলে দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, তিনদিন ধরে লাগাতার বর্ষনের কারনে এই জেলাতে বন্যা পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে। গত তিনমাসে এই নিয়ে তিনবার বড় বন্যার মুখোমুখি হয়েছে জেলার বাসিন্দারা। ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে জেলা জুড়ে। মাটির দেওয়াল চাপা পড়ে মৃত্যু হয়েছে ৭ জনের। বহু বাড়ি নষ্ট হওয়া ছাড়াও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে চাষের জমিতে।
বুধবার বেলা ১০টা নাগাদ খড়্গপুর আদ্রা রেল লাইনে গোদাপিয়াশাল এলাকাতে ধ্বস নেমে যায়। স্থানীয়দের তত্পরতায় ট্রেন দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হয়। তবে মেরামতির কাজ চলেছে এদিন দিনভর । তবে দিনভর ট্রেন বন্ধ ছিল ওই রুটের আপ লাইনে। ঘাটাল মহকুমাতে শীলবতী নদীর জল বেড়ে পুনরায় বন্যার পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে। একমাস আগেই বন্যা নিয়ন্ত্রনে এসেছিল ওই এলাকাতে।
ঘাটাল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল চত্বরে জল জমে সমস্যা তৈরী হয়েছে। বহুস্থানে চাষের জমি ডুবে গিয়েছে ঘাটালে৷ বন্যার পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে কেশপুর ব্লক জুড়ে। চরম সমস্যা দেখা দিয়েছে মেদিনীপুর পৌরসভা এলাকায়। এই এলাকার ২৫টি ওয়ার্ডেই বন্যা পরিস্থিতি। প্রতিটি ওয়ার্ডে কমবেশি জল দাঁড়িয়ে সমস্যা তৈরি হয়েছে। বকশিবাজার সূর্যনগর এলাকাতে বহু বাড়ির ভেতরে কোমর সমান জল। ৪৫টির বেশি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ধ্বস নামতে শুরু করেছে কংসাবতী পাড়ে থাকা শহরের অংশটিতে।
মেদিনীপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান সৌমেন খান জানিয়েছেন-" শহরের পাশে থাকা কংসাবতী নদীর জল স্তর বেড়ে যাওয়ার কারণে শহরের নিকাশি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এতে পাড় ধসে অনেক বাড়ি নষ্ট হয়েছে। তাই জেলাশাসককে অনুরোধ করে দ্রুত কংসাবতী নদীর ওপরে থাকা অনিকেট গেট খুলে দিতে হয়েছে। যাতে নদীর জল স্তর কমে গেলে মেদিনীপুর শহরে পাড় ধসে বাড়ি নষ্ট হওয়া, ও নিকাশি সমস্যার সমাধান হবে। সেই সাথে জলে ডুবে থাকা এলাকাগুলি থেকে লোকজনকে উদ্ধার করে অন্যত্র সরানো হচ্ছে।"
বুধবার বেলা দশটা নাগাদ মেদিনীপুর সদর ব্লকের ধেড়ুয়াতে পথ অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান গ্রামবাসীরা। তাদের দাবি পঞ্চায়েতের অদূরদর্শিতার কারণে এই বন্যা পরিস্থিতি। আধ ঘণ্টা অবরোধ বিক্ষোভ চলার পর গুড়গুড়িপাল থানার পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়।