পুরুলিয়ার ঝালদা থানার তুলিন গ্রামের নিঃসন্তান বৃদ্ধ দম্পতি ধীরেন পাণ্ডে ও কৃষ্ণা পাণ্ডের এক সময় ঘর বাড়ি জমি জমা ছিল অনেক। কিন্তু, ধীরে ধীরে তা সব বেহাত হয়ে যায়। তুলিন গ্রাম ছেড়ে দম্পত্তি পাশের গ্রাম মসিনায় সামান্য কিছু টাকায় ভাড়া বাড়ি নেন।
এক সময় বহু সম্পত্তি (Property) থাকলেও আজ সবই বেহাত হয়েছে। সম্পত্তি হারিয়ে ভাড়া বাড়িতে (Rental house) থাকলেও ভাড়া দিতে না পারতেন না। তাই দীর্ঘদিন ভাড়া না দেওয়ায় বাড়ি মালিকও বের করে দিয়েছে। নিঃসন্তান অসহায় বৃদ্ধ দম্পতি (Old Couple) এখন লোকালয় ছেড়ে চার মাস ধরে ঘর বেঁধেছেন জঙ্গল (Forest) ঘেরা পাহাড়ের চূড়ায় (Top of the Hill)। ভিক্ষা করে চলছে জীবন। পুলিশ (Police) গিয়ে নির্জন পাহাড় থেকে নামানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে। বৃদ্ধ দম্পত্তির দাবি স্বপ্নে দেবতার নির্দেশ পাওয়ায় দেবতার আরাধনায় পাহাড়ের চূড়ায় ঘর বেঁধেছেন তাঁরা। যতই বিপদ আসুক দেবতার নির্দেশ ছাড়া পাহাড়ের চূড়া থেকে নামবেন না। পুরুলিয়ার ঝালদা শহর লাগোয়া শিকরা পাহাড়ের চূড়ায় বৃদ্ধ দম্পত্তির তাঁবু খাটিয়ে আশ্রয় নেওয়াকে কেন্দ্র করে উঠছে নানান প্রশ্ন।
পুরুলিয়ার ঝালদা থানার তুলিন গ্রামের নিঃসন্তান বৃদ্ধ দম্পতি ধীরেন পাণ্ডে ও কৃষ্ণা পাণ্ডের এক সময় ঘর বাড়ি জমি জমা ছিল অনেক। কিন্তু, ধীরে ধীরে তা সব বেহাত হয়ে যায়। তুলিন গ্রাম ছেড়ে দম্পত্তি পাশের গ্রাম মসিনায় সামান্য কিছু টাকায় ভাড়া বাড়ি নেন। ভিক্ষা করে কোনওরকমে দু'বেলার দু'মুঠো খাবার জোগাড় করতেন। মাসের শেষে বাড়ি ভাড়া দিতে ব্যর্থ হচ্ছিলেন। দীর্ঘদিন বাড়ি ভাড়া দিতে না পারায় বাড়ি থেকে বের করে দেন বাড়ি মালিক। বাধ্য সব ছেড়ে বৃদ্ধ দম্পতি ঝালদা শহরের উপকণ্ঠের শিকরা পাহাড়ে উঠে পাহাড়ের চূড়ায় ত্রিপল দিয়ে তাঁবু খাটিয়ে থাকা শুরু করেন।
আরও পড়ুন- 'ময়নাতদন্তের রিপোর্টে পরিবর্তন আনতে বিজেপি কর্মীর দেহ স্থানান্তর', অভিযোগ শুভেন্দুর
অগাস্ট মাসের বর্ষার সময় থেকে জঙ্গল ঘেরা পাহাড়ের চূড়ায় এভাবেই তাঁরা রয়েছেন। মাঝে নিম্নচাপের জেরে প্রচুর বৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু, সে সবই উপেক্ষা করে তাঁরা রয়ে গিয়েছেন। কিছুদিন আগে ঝালদা থানার আই সি সঞ্জীব ঘোষ খবর পেয়ে পুলিশ কর্মী এবং সিভিকদের সঙ্গে নিয়ে দু'জনকে পাহাড় থেকে নামিয়ে নিয়ে আসার চেষ্টা করেন। সেই সময় তাঁবুতে একাই ছিলেন বৃদ্ধা কৃষ্ণা পাণ্ডে। বৃদ্ধাকে সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার জন্য অনেক জোর করেন তিনি। কিন্তু, ব্যর্থ হন আইসি।
আরও পড়ুন- ‘তৃণমূল বাবুলকে ঝুনঝুনি দেবে’, মেয়র প্রার্থী প্রসঙ্গে বললেন দিলীপ
বৃদ্ধা তাঁকে সাফ জানিয়ে দেন যে, ঠাকুরের নির্দেশে তাঁরা সেখানে রয়েছেন। তাই ঠাকুর নির্দেশ দিলে তবেই তাঁরা পাহাড় থেকে নামবেন। এরপর স্বামীর কথা জিজ্ঞাসা করলে জানান, স্বামী এখন নেই। ভিক্ষা করতে নিচে গিয়েছেন। পাহাড় থেকে যাবেন কিনা তা স্বামীর সঙ্গে কথা বলেই সিদ্ধান্ত নেবেন। পুলিশ অফিসাররা দীর্ঘ সময় ধরে কৃষ্ণা পাণ্ডেকে জন্তু-জানোয়ারের আক্রমণ সহ নানান ভয় রয়েছে বলে বোঝানোর চেষ্টা করলেও যেতে চাননি বৃদ্ধা। শেষে পুলিশ অফিসাররা ব্যর্থ হয়ে পাহাড় থেকে নিচে নামেন।
আরও পড়ুন- চারিদিকে গোবর-বিচালি, মজিদ মাস্টারের শাসনের পার্টি অফিস এখন পশুখামার
তবে স্বপ্নাদেশ না অন্য কোনও কারণে পাণ্ডে দম্পতি সব ছেড়ে ওই পাহাড়ের চূড়ায় আশ্রয় নিয়েছেন তা এখনও পরিষ্কার হয়নি। গত দু'দিন ধরে অকাল নিম্নচাপের বৃষ্টিতে যখন জেলাবাসীর নাজেহাল দশা, তখন ওই বৃদ্ধ দম্পতি দিব্যি ছিলেন পাহাড় চূড়াতেই। এই অবস্থায় যে কোনও সময় দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থাকলেও বিষয়টি নিয়ে আর কেউ খোঁজ খবর নেননি।
পুরুলিয়া জেলা পরিষদ সদস্য রাজীব সাহু বলেন, "আমি বিষয়টা জানতামই না। পাণ্ডে দম্পতি কি কারণে পাহাড়ের চূড়ায় আশ্রয় নিয়েছেন খোঁজ নিচ্ছি। প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নিচ্ছি।" প্রশ্ন হচ্ছে গত চার মাস ধরে ঘন জঙ্গল ঘেরা পাহাড়ের চূড়ায় বৃদ্ধ দম্পতি তাঁবু খাটিয়ে অসহায় অবস্থায় থাকলেও প্রশাসন থেকে এখনও পর্যন্ত কেন তাঁদের নামিয়ে নিয়ে যাওয়া হল না। এই ধরনের একাধিক প্রশ্ন এখন ঘুরপাক খাচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের মনে।