স্কুলের পোশাক নীল-সাদা হলে ক্ষুণ্ণ হতে পারে ঐতিহ্য ও ইতিহাস, রাজ্য সরকারকে বিশেষ আবেদন ৩১টি স্কুলের

পোশাকের চিরাচরিত রং বদলে সরকার নির্ধারিত নীল-সাদা রং করতে না চেয়ে স্কুলশিক্ষা দফতরকে চিঠি দিয়ে আর্জি জানিয়েছে কলকাতার ৩১টি স্কুল।

সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অধীনস্থ প্রত্যেক স্কুলের পোশাকের রং নীল সাদা করার নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য সরকার। বহু স্কুল সরকারের নির্দেশ মেনে ছাত্রছাত্রীদের পোশাকের রং বদল করে দিলেও, বহু স্কুলের কর্তৃপক্ষ এই সিদ্ধান্তে সহমত হতে পারেননি একেবারেই।

স্কুলের পোশাকের রং বদল করে স্কুলের সেই ঐতিহ্য ক্ষুণ্ণ করতে নারাজ কলকাতার বেশ কিছু স্কুল কর্তৃপক্ষ, তাঁদের যুক্তি, পোশাকের সঙ্গে মিশে রয়েছে স্কুলের ইতিহাস এবং ঐতিহ্য। কোথাও জড়িয়ে রয়েচে কৃতী পড়ুয়াদের স্মৃতি অথবা কৃতী মানুষদের ছোঁয়া।। সেই কারণে পোশাকের চিরাচরিত রং বদলে সরকার নির্ধারিত নীল-সাদা রং করতে না চেয়ে স্কুলশিক্ষা দফতরকে চিঠি দিয়ে আর্জি জানিয়েছে কলকাতার ৩১টি স্কুল।

Latest Videos

প্রাক প্রাথমিক থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের পোশাক দেয় শিক্ষা দফতর। সেখান থেকেই জানানো হয়েছে, সরকারি ও সরকার পোষিত এবং সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলগুলির প্রাক প্রাথমিক থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রত্যেক পড়ুয়াদের পোশাকের রং হতে হবে নীল-সাদা। সেইমতো বহু স্কুলে ওই পোশাক পাঠাতেও শুরু করেছে শিক্ষা দফতর। কিন্তু এই ঘোষণার পরে বেশ কিছু স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিলেন, এতে তাঁরা অনিচ্ছুক। শিক্ষা দফতরের এক কর্তা বলেন, “কলকাতার মোট ৩১টি স্কুল তাদের পোশাকের রং বদলাতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেছে।”

অনিচ্ছুক স্কুলগুলির তালিকায় রয়েছে পাঠভবন। এই স্কুলের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, তাঁদের পোশাকের লোগোয় রয়েছে সত্যজিৎ রায়ের ছোঁয়া। তাই এই পোশাকের পরিবর্তন করতে নারাজ পাঠভবন কর্তৃপক্ষ। স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা শুভ্রা গুপ্ত বলেন, “আমাদের স্কুলের পোশাকের লোগো তৈরি করে দিয়েছিলেন সত্যজিৎ। পোশাকের রং পরিবর্তন হলে তাঁর তৈরি লোগোটির বদলে বিশ্ববাংলা লোগো লাগাতে হবে। সেটা আমরা চাই না। তাই পোশাকের রং বদলাতে না চেয়ে শিক্ষা দফতরে আবেদন করেছি।”

মিত্র ইনস্টিটিউশনের ভবানীপুর শাখার প্রধান শিক্ষক রাজা দে জানান, ১৯০৫ সালে স্যর আশুতোষ মুখোপাধ্যায় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন স্কুলটি। সাদা জামা-প্যান্ট, বুকপকেটে মনোগ্রাম করে বাংলায় লেখা ‘মিত্র’, সঙ্গে কালো জুতো। পড়ুয়াদের এই পোশাক সেই প্রথম দিন থেকে একই রয়েছে। তিনি আরও বলেন, “এই পোশাক পরেই শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়, শহিদ যতীন দাস, স্বাধীন ভারতের প্রথম এয়ার মার্শাল সুব্রত মুখোপাধ্যায়, গায়ক হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের মতো কৃতীরা স্কুলে এসেছেন। এমনকি রাজ কপূর শৈশবে যে কয়েক বছর কলকাতায় ছিলেন, তখনও আমাদের স্কুলেই পড়েছেন। তিনিও এই পোশাকেই স্কুলে এসেছেন। তাই এই পোশাক স্কুলের ঐতিহ্য। এটা বদলাতে চাই না। আমরাও শিক্ষা দফতরের কাছে আবেদন করেছি।”

স্কটিশ চার্চ কলেজিয়েট স্কুলের প্রধান শিক্ষক বিভাস সান্যালের মতে, শহরের বেশিরভাগ সংখ্যালঘু স্কুলই বহু পুরনো, তাই তাদের পোশাকেরও ঐতিহ্য আছে। বিভাস বলেন, “কলকাতার বিশপ পরিতোষ ক্যানিং শিক্ষা দফতরকে জানিয়ে দিয়েছেন যে, সংখ্যালঘু স্কুলগুলির বেশির ভাগই ঐতিহ্যশালী, পোশাকও এত বছর ধরে একই রয়েছে। সেই পোশাকের রঙে পরিবর্তন চাইছেন না। চার্চ অব নর্থ ইন্ডিয়ার অধীনে থাকা ১৫টি স্কুলও একই আবেদন করেছে।”

শিক্ষা দফতর অবশ্য স্কুলের সিদ্ধান্তের বিপক্ষে কোনও কথা বলেনি। তবে, বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে সরকারি সিদ্ধান্ত বদল করা হবে কিনা, তা নিয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি বলে দফতরের তরফে জানানো হয়েছে।


আরও পড়ুন-
ডিসেম্বরের শহরে ভ্রমণকারীদের জন্য সুখবর, যাতায়াতে সুবিধা আনতে বাসের সংখ্যা বাড়াচ্ছে রাজ্য পরিবহণ দফতর
ব্যবহারকারীদের জন্য বড় বদল আনছে ইউটিউব, মন্তব্য করার আগে তা ক্ষতিকর কিনা, যাচাই করার সুযোগ
বাংলাদেশে শুরু হতে চলেছে মেট্রো রেল পরিষেবা, আর্থিক সঙ্কটে জাঁকজমকে কাটছাঁট হাসিনা সরকারের

Share this article
click me!

Latest Videos

আর ৮ মাস! জুলাই-অগাস্টে রাজ্যে অকাল ভোট হতে চলেছে! জানালেন BJP সাংসদ | BJP News | Samik Bhattacharya
Suvendu Adhikari: 'পুলিশ গরু প্রতি ২০০০ টাকা তোলা তোলে' বিস্ফোরক অভিযোগ শুভেন্দু অধিকারীর
'পুলিশ ও তৃণমূলের গুণ্ডারা সর্বত্র ভোট লুট করেছে' মারাত্মক অভিযোগ সুজন চক্রবর্তীর
অসাধ্য সাধন! যথেষ্ট পরিকাঠামো না থাকার সত্ত্বেও ৮০০ গ্রামের শিশুকে বড় করে তুলল বারাসাত মেডিক্যাল
TMC-কে ভোট দিলেই মিলছে ঠোঙা ভর্তি মুড়ি ও চানাচুর! শোরগোল মেদিনীপুরে | Midnapore | WB By election