
Cal HC On Jobless Teachers: হকের চাকরি ফেরত পেতে অব্যাহত চাকরিহারা শিক্ষকদের আন্দোলন। আর এবার বিকাশ ভবনের সামনে চাকরিহারা শিক্ষকদের প্রতিবাদ, বিক্ষোভ নিয়ে বড় নির্দেশ দিলো কলকাতা হাইকোর্ট (Calcutta High Court News)। আদালত সূত্রে খবর, এবার থেকে মোট ২০০ জন করে আন্দোলনকারী রোটেশনাল পদ্ধতিতে অবস্থান-বিক্ষোভ করতে পারবেন। শুক্রবার এ কথা জানিয়েছে আদালত।
শুধু তাই নয়, কোথায় অবস্থানে বসবেন চাকরিহারা শিক্ষকরা, সেটাও স্পষ্ট করে এদিন জানিয়ে দিয়েছে আদালত। পাশাপাশি আন্দোলনকারীদের মধ্যে থেকে ১০ জনের ফোন নম্বর পুলিশের কাছে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে আদালতের তরফে। যে সব চাকরিহারা শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। তবে এদিন বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ জানান, তাঁদের বিরুদ্ধে তদন্ত চললেও এখনই কোনও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া যাবে না।
এদিন হাইকোর্ট সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, সেন্ট্রাল পার্কের সুইমিং পুলের দিকে অর্থাৎ, বিকাশ ভবনের উল্টোদিকে শিক্ষক-শিক্ষিকারা অবস্থান করতে পারবেন। এছাড়াও, আন্দোলনকারীদের জন্য রাজ্যকে একটা অস্থায়ী কাঠামো তৈরি করতে হবে। আন্দোলনকারীদের জন্য পুরসভার জল আর বায়ো টয়লেটের ব্যবস্থা করে দিতে হবে বলে জানিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট।
১৫ মে-র অশান্তি নিয়ে ওয়েস্ট বেঙ্গল বোর্ড অফ সেকেন্ডারি এডুকেশনের অভিযোগ নিয়েও কোনও পদক্ষেপ করতে পারবে না বলেও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, বিকাশ ভবনের সামনে আন্দোলনরত চাকরিহারাদের একাংশকে চিহ্নিত করে শো-কজ করেছিল মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। সাত দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়। শিক্ষা দফতরের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়ার পরেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে পর্ষদের তরফে। এইসবের মধ্যে বিকাশ ভবনের সামনে অবস্থান-বিক্ষোভ নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিল রাজ্য। রাজ্যের বক্তব্য ছিল, বিকাশ ভবনের সামনে বিক্ষোভের ঘটনায় ২২ জন পুলিশকর্মী আহত হয়েছেন। বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েন ১৯ জন সাধারণ মানুষ। ওই এলাকায় তো শুধু বিকাশ ভবন নয়, অনেক সরকারি দফতর রয়েছে। সেই সব অফিসের কর্মীদের চরম অসুবিধার মধ্যে পড়তে হয়েছে।
অন্যদিকে, চাকরিহারাদের আন্দোলনকে প্রতিহত করার জন্য নানা ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে বলে জানানো হয়। লাঠিচার্জের কারণে একাধিক শিক্ষক আহত হয়েছেন। পুলিশের বিরুদ্ধে অতিসক্রিয়তার অভিযোগ তুলে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন শিক্ষকদের একাংশ। সেই মামলাতেই শুক্রবার এই নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট।
প্রসঙ্গত, পুলিশের বিরুদ্ধে অতিসক্রিয়তার অভিযোগ তুলে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন বিকাশ ভবনের সামনে আন্দোলনকারী চাকরিহারা শিক্ষকদের একাংশ। সোমবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ মামলা দায়েরের অনুমতি দিয়েছিলেন। এদিন সেই মামলার শুনানিতে এই নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
সূত্রের খবর, গত ১৭ দিন ধরে বিকাশ ভবনের সামনে সসম্মানে চাকরিতে বহালের দাবি জানিয়ে আন্দোলন করছেন এসএসসি-তে চাকরি হারানো যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকারা। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিকাশ ভবনের সামনে চাকরি হারানো যোগ্য শিক্ষকরা বিকাশ ভবনের গেট ভেঙে ভেতরে ঢুকে অবস্থান-বিক্ষোভ করেন। এর ফলে দীর্ঘক্ষণ আটকে থাকেন বিকাশ ভবনে বিভিন্ন সরকারি দফতরের কর্মীরা। তাদের বার করতে গেলে পুলিশের সঙ্গে রীতিমতো খন্ড যুদ্ধ শুরু হয় আন্দোলনকারী শিক্ষকদের। দুই পক্ষের একাধিক গুরুতরভাবে আহত হন। এই ঘটনায় বিধাননগর থানা ১৭ জন আন্দোলনকারী শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে। এমনকি তাদের জিজ্ঞাসাবাদ এর জন্য ডেকে পাঠানো হয়।
সোমবার ছ’জন আন্দোলনকারীকে হাজিরা দিতে বলা হয় থানায়। আবার কাউকে বুধবার থানায় হাজির দিতে বলা হয়েছে। সরকারি সম্পত্তি নষ্ট, ভাঙচুর, সরকারি কর্মীদের কাজে বাধাদান-সহ একাধিক অভিযোগ আনা হয়েছে আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে। তাঁদের নোটিস পাঠিয়ে জানানো হয়েছে, এই অভিযোগের ভিত্তিতে আন্দোলনকারীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। থানায় উপস্থিত না হলে বিএনএস-এর ৩৫(৬) ধারায় তাঁদের গ্রেফতার করা হতে পারে বলেও জানিয়েছে পুলিশ।
বিক্ষোভকারী শিক্ষকদের একাংশের অভিযোগ, বিকাশ ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচিতে তাঁদের মারধর করেছে শাসকদলের সমর্থকেরা। তাঁদের বক্তব্য, শাসকদলের সমর্থকদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ না করে পুলিশ উল্টে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অতিসক্রিয় হয়ে ওছে। গত বৃহস্পতিবার এর ঘটনায় আন্দোলনকারী দুই শিক্ষক নেতা ইন্দ্রজিৎ মণ্ডল এবং সুদীপ কোনারকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হচ্ছে। তাঁদের অভিযুক্ত করে নোটিস পাঠিয়েছে পুলিশ। থানায় তলবও করা হয়েছে কয়েক জন আন্দোলনকারী শিক্ষককে। তাই পুলিশের বিরুদ্ধে অতি সক্রিয়তার অভিযোগ তুলে তারা আদালতের দ্বারস্থ হন। শুক্রবার সেই মামলার শুনানিতে বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ স্পষ্ট জানিয়ে দেন যে, চাকরিহারা শিক্ষকদের বিক্ষোভ নিয়ে এখনই কোনও কঠোর পদক্ষেপ নয়।
আরও খবরের জন্য চোখ রাখুন এশিয়ানেট নিউজ বাংলার হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে, ক্লিক করুন এখানে।