আপাতত তিন দিনের ইডি হেফাতজের নির্দেশ কুন্তল ঘোষের। তৃণমূল নেতা জানিয়েছেন তাঁর গ্রেফতারির সঙ্গে দলের কোনও সম্পর্ক নেই।
এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরটের আইনজীবীর আবেদন খারিজ করে দিয়ে ব্যাঙ্কশাল আদালত নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় তৃণমূল নেতা কুন্তল ঘোষকে ৩ দিনের ইডি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে। যদিও কুন্তলের আইনজীবী তাঁকে ইডি হেফাজতে না পাঠানোর আবেদন জানিয়েছিলেন। যাইহোক এদিন শুনানির পর আদালত থেকে বার হওয়ার সময় কুন্তুল ঘোষ, দুই হাত জোড় করে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় তাঁর নাম জড়ানো আর গ্রেফতারির সঙ্গে যেন কোনও ভাবেই তাঁর দলকে য়ুক্ত না করা হয়। তিনি আদালত থেকে বার হওয়ার সময় আরও বলেছিলেন তাপস মণ্ডল তাঁর ছেলেকেও অপরহণের হুমকি দিয়েছিল।
ইডির আইনজীবী জানিয়েছেন, ধৃতের কাছ থেকে একটি ডায়েরি উদ্ধার হয়েছে। সেই ডায়েরির প্রসঙ্গ তুলে ইডির আইনজীবী বলেন,'শুধু প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ নয়, গ্রুপ সি ও গ্রুপ ডি নিয়োগেও দুর্নীতি হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।' ব্যাঙ্কশাল আদালতে ইডির আইনজীবী বলেন, পুরো সিস্টেমই দুর্নীতিতে ভরে গিয়েছে। তিনি আরও বলেন প্রথমে মনে হয়েছিল দুর্নীতি ভারত মহাসাগরের মত বড়। কিন্তু তদন্তে নেমে ইডির কর্মকর্তারা মনে করছেন, এটা প্রশান্ত মহাসাগরের মত বড়। তাতে মাঝে মাঝে নাটকীয় মোড় নিচ্ছে। তদন্তের জন্য কুন্তলকে ১৪ যাতে ১৪ দিনের ইডি হেফাজত দেওয়া হয় তারও দাবি জানিয়েছেন তিনি।
তবে কুন্তলের আইনজীবী সেলিম রহমন ইডির আইনজীবীর দাবি উড়িয়ে দিয়ে বলেন, এই দুর্নীতির ব্যাপ্তি পুকুরের মত নয়। কুন্তলের কাছ থেকে কোনও টাকা উদ্ধার হয়নি বলেও জাবি করেন তিনি। কুন্তলকে ইডির হেফাজতে নেওয়ার তীব্র বিরোধিতা করেন তিনি। বলেন, 'কুন্তলকে যে কোনও কঠিন শর্ত দেওয়া হতে পারে। কিন্তু তাকে যেন ইডি-র হেফাজতে পাঠান না হয়।' প্রয়োজনে কুন্তল নিজের ফোন খোলা রাখবেন আর বাড়িতে নজরবন্দি থাকতে পারেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।
হুগলি ছাড়াও ধৃত কুন্তলের জেলাতেও আরও একাধিক বিএড কলেজ বলে অনুমান করছেন তদন্তকারীরা। আর সেই জন্যই তাঁকে হেফাজতে নিয়ে জেরা করতে চায়। বিএড কলেজের মানিকানার সূত্র ধরেই কুন্তলের সঙ্গে পরিচয় হয় মানিক ভট্টাচার্য ঘনিষ্ট তাপস মণ্ডলের সঙ্গে। তাপসই কুন্তলের সন্ধান তদন্তকারীদের দিয়েছে বলে সূত্রের খবর। যদিও সিবিআই এখনও পর্যন্ত এই বিষয়ে কিছু জানায়নি। শনিবার সকালে কলকাতার চিনারপার্কের একটি আবাসন থেকে কুন্তলকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।
এলাকায় প্রভাবশালী হিসেবে পরিচিত ছিল কুন্তল। হুগলির বলাগড় গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দা। স্থানীয় কোনও মানুষ সমস্যায় পড়লেই ত্রাতায় ভূমিকায় অবতীর্ণ হত। ছাত্র অবস্থায় কোনও রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিল না কুন্তল। ২০১১ সালে ধনেখালিতে একটি বিএড কলেজের অংশীদার হিসেবে ব্যবসা শুরু করেন। ২০১৬ সাল থেকেই তাঁর রাজনৈতিক যোগ তৈরি হয়। বলাগড়ে তৃণমূলের একাধিক কর্মসূচিতে তাঁকে দেখা যেত। কলকাতাতেও দলীয় কর্মসূচিতে পরিচিত মুখ ছিলেন তিনি। অন্যদিকে সায়নী ঘোষের সঙ্গেও সুসম্পর্ক ছিল। অন্যদিকে কুন্তলের বাবা একটা সময় সিপিএমএর কর্মী ছিলেন। তিনি শ্রীপুর-বলাগড় পঞ্চায়েতের সিপিএম-এর প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।