
Kolkata Jagannath Temple: জগন্নাথ মানেই তাঁর দুপাশে বলরাম ও সুভদ্রা। জগন্নাথ ও রথযাত্রার সঙ্গে সম্পৃক্ত মাসির বাড়িও। অথচ কলকাতার গ্রেড ওয়ান হেরিটেজ জগন্নাথ কোনওদিন মাসির বাড়িই যাননি। এমনকি জগন্নাথ এই হেরিটেজ মম্দিরে একা! সঙ্গে থাকেন না বলরাম-সুভদ্রাও। ১২৫ বছরের এই ঐতিহ্যকে এখানে একাই বহন করে চলেছেন প্রায় সাড়ে তিন ফুটের জগন্নাথ। দুদিন পরেই দীঘায় জগন্নাথ মন্দির উদ্বোধন নিয়ে যখন রাজসূয় যজ্ঞের আয়োজন তখন মধ্য কলকাতার এই মন্দিরে হেরিটেজ আঁকড়ে থাকবেন ‘একাকী জগন্নাথ’।
কলকাতা মেডিকেল কলেজের সামনেই গোবিন্দ সেন লেনের এই ঐতিহ্য সেই ১৯০০ সাল থেকে। চুনিমণি দাসীর হাত ধরে বৌবাজারের এই হেরিটেজ জগন্নাথ মন্দিরের পথ চলা শুরু। পুরীর জগন্নাথদেব যে নিমকাঠ দিয়ে তৈরি হয়েছে তারই অবশিষ্ট অংশ দিয়ে এই জগন্নাথদেব তৈরি। যে জগন্নাথ তার পেটের মধ্যে শালগ্রাম শিলা ধারণ করে রয়েছেন। প্রায় সাড়ে তিন ফুট উচ্চতার জগন্নাথ সম্ভবত কলকাতা শহরের সবচেয়ে বড় জগন্নাথ বিগ্রহ বলে জানিয়েছেন সেবাইতরা। যেহেতু এই জগন্নাথের কোনও মাসির বাড়ি নেই তাই রথযাত্রার আটদিন ধরে এই সেবাইত পরিবারের বিভিন্ন আত্মীয়দের বাড়িতেই ভোগ খেতে যেতেন জগন্নাথ। তবে দিনকাল বদলের সঙ্গে পরিস্থিতিও বদলেছে। এখন আর জগন্নাথ এবাড়ি সেবাড়ি ঘুরে ভোগ খেতে যান না। মন্দির প্রাঙ্গনে ধুমধাম করে জগন্নাথের রথযাত্রা হয়। আর আত্মীয়রাই এখন ভগবানের কাছে ছুটে আসেন তাকে ভোগ খাওয়াতে।
বর্তমান সেবাইত তপন কুমার দে জানিয়েছেন , তার বাবা তুলসীদাস দে প্রায় ৩৫ বছর ধরে এই জগন্নাথ দেবের সেবা করেছেন। তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে রথ যাত্রাই হোক বা দোলযাত্রা, অঙ্গরাগ হোক বা রাসযাত্রা, জগন্নাথের কোন উৎসবেই আর কাউকে নিমন্ত্রণের কোনও প্রয়োজন নেই। ভক্ত আর ভগবানের মেলবন্ধনে পরিপূর্ণ হয়ে উঠুক এই মন্দির প্রাঙ্গণ। যেমন কথা তেমনই কাজ। কিন্তু আজও উৎসবের দিনগুলিতে বিনা নিমন্ত্রণেই বহু মানুষের ভিড় হয় এই হেরিটেজ জগন্নাথ মন্দির প্রাঙ্গনে। যতক্ষণ মানুষ থাকেন ততক্ষণ চলে ভোগ বিতরণ। তপন কুমার দে জানান ” কোনও স্বপ্নাদেশ তারা পাননি বটে কিন্তু মর্মে মর্মে উপলব্ধি করেন যে জগন্নাথদেব রয়েছেন। চরম আর্থিক সংকট সত্বেও কিভাবে জগন্নাথের নিত্যপুজো, নিত্য অন্নভোগ থেকে রথযাত্রা বা অন্যান্য উৎসব পালন করা হবে তা নিয়ে যখন তারা দিশেহারা তখন নিজের পুজো থেকে ভোগ নিজেই ঠিক জোগাড় করে নেন জগন্নাথ। তপনবাবুর কথায় “কোথা থেকে যে সব জোগাড় হয়ে যায়, টাকার যোগান হয়ে যায় তা বুঝতেই পারি না। শুধু এটুকু বুঝতে পারি তিনি আছেন, জগন্নাথ আমাদের সঙ্গেই আছেন।”
বর্তমানে দুই ভাই তপন কুমার দে ও রাজকুমার দে সেবাইত হিসেবে এই জগন্নাথ মন্দিরের রক্ষণাবেক্ষণ ও দেখভাল করেন। দুজনেই জানিয়েছেন, ১৯৫৬ সালের যে ট্রাস্টি বোর্ড এই মন্দিরের জন্য তৈরি হয়েছিল তাদের রেখে যাওয়া গচ্ছিত সম্পত্তি ছাড়া এই মন্দিরের নিজস্ব আর্থিক যোগান কিছুই নেই। তাই ফিবছর এই দুই ভাইয়ের পকেট থেকেই আয়োজনের যাবতীয় খরচ বহন করতে হয়। যা ক্রমে সাধ্যের বাইরে যেতে বসেছে। কলকাতা পুরসভা গ্রেড ওয়ান হেরিটেজ তকমা দিয়েছে এই মন্দিরকে। কিন্তু মন্দির চালানো বা পরিচালন ব্যয় যেভাবে বাড়ছে সে তুলনায় কোন আর্থিক সাহায্য মেলে না বলে আক্ষেপ দুই ভাইয়ের। “জগন্নাথদেব নিজের খরচ নিজেই জোগাড় করে নেন” বলে জানান দুজনেই।
বর্তমানে রাজ্যে দিঘার জগন্নাথ মন্দির নিয়ে উন্মাদনা তুঙ্গে স্বাভাবিকভাবেই কলকাতার এই হেরিটেজ জগন্নাথ মন্দিরেও সেবাইত থেকে ভক্তদের এই নতুন জগন্নাথ মন্দির নিয়ে আগ্রহ রয়েছে। সর্বোপরি ঘরের জগন্নাথ ছেড়ে কোথাও যেতে পারেন না এই সেবাইত পরিবার। এমনকি দিঘা ঘুরতেও যাননি তপন বাবু ও রাজকুমার বাবুরা। তবে জগন্নাথের টানে এবার দীঘা যেতে চান তপন কুমার দে। পুরীর জগন্নাথ ধামের আদলে দীঘায় জগন্নাথ মন্দির, বলা ভালো তাদের ইষ্ট দেবতার ‘নতুন বাড়ি’। তাই জগন্নাথের ‘নতুন বাড়ি’ দেখতে এবার ঘরের ঠাকুরকে মন্দিরে রেখেই দিঘায় যেতে চান কলকাতার এই হেরিটেজ জগন্নাথ মন্দিরের সেবাইত পরিবার।
আরও খবরের জন্য চোখ রাখুন এশিয়ানেট নিউজ বাংলার হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে, ক্লিক করুন এখানে।