
Mamata Banerjee Tata Group Ties After 18 Years : টাটার ন্যানো কারখানার বিরুদ্ধে সিঙ্গুর আন্দোলন থেকে রাজনৈতিক মাইলেজ পাওয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখন সেই টাটার জন্যই রাজ্যের দরজা খুলে দিয়েছেন। সিঙ্গুর আন্দোলন থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিপিআই(এম) শাসনকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে প্রধান বিরোধী নেত্রী থেকে মুখ্যমন্ত্রী পদ পর্যন্ত পৌঁছেছিলেন। প্রায় ১৮ বছর আগে এই আন্দোলনের সময় টাটা মোটরস তাদের ন্যানো গাড়ির কারখানা বাংলা থেকে গুটিয়ে গুজরাটে স্থানান্তর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু এখন বঙ্গ এবং টাটা গ্রুপের সম্পর্কে নতুন অধ্যায়ের সূচনা হতে চলেছে।
২০০৮ সালে বঙ্গে টাটার সঙ্গে কী হয়েছিল?
প্রসঙ্গত, ২০০৬ সালে টাটা গোষ্ঠী বিপুল বিনিয়োগ নিয়ে রাজ্যে এসেছিল। হুগলির সিঙ্গুরে তৈরি হচ্ছিল টাটা ন্যানোর কারখানা। এটি ছিল রতন টাটার স্বপ্নের প্রকল্প। কিন্তু সেই স্বপ্নে বাধ সাধে জমি আন্দোলন। সিঙ্গুরের ৯৯৭ একরের মধ্যে ৪০০ একর জমি কৃষিজমি বলেই দাবি করা হয়। অনিচ্ছুক চাষিদের জমি জোর করে নেওয়া হচ্ছে অভিযোগ তোলা হয়।
তৎকালীন বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বেই সেই জমি আন্দোলন বিরাট আকার ধারণ করেছিল। ৩৪ বছরের বাম আমলের পতন হয়েছিল ওই আন্দোলনের হাত ধরে। শেষে ২০০৮ সালের ৩ অক্টোবর সিঙ্গুর থেকে প্রকল্প সরানোর ঘোষণা করেন টাটা গোষ্ঠীর কর্ণধার রতন টাটা। গুজরাটের সানন্দে খোলে টাটা ন্যানোর কারখানা। বাংলায় কারখানা না খোলা নিয়ে আক্ষেপ ছিল রতন টাটার।
টাটার ন্যানো প্রকল্পের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলাকালীন রতন টাটা বলেছিলেন, “আমার মাথায় বন্দুক ঠেকালেও আমি মাথা সরাব না।’ তবে, এই প্রকল্পের বিদায় বেলায় রতন টাটা সেই উক্তির পরিপ্রেক্ষিতে বলেন, ‘দু’বছর আগে আমি বলেছিলাম, কেউ যদি আমার মাথায় বন্দুক ঠেকায়, তাহলেও আমি মাথা সরাব না। আমি মনে করি ট্রিগারেই চাপটা দিয়েছেন মিস ব্যানার্জি।”
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং টাটার মধ্যে এখন কী বদলেছে?
কিন্তু এখন ২০২৫ সালে টাটা এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে তিক্ততা কেটে যেতে দেখা যাচ্ছে। বুধবার কলকাতায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় টাটা গ্রুপের জন্য রাজ্যের দরজা খুলে দিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী বন্দ্যোপাধ্যায় এবং টাটা সন্সের চেয়ারম্যান এন চন্দ্রশেখরন সাক্ষাৎ করে এই পুরনো বিবাদকে নতুন সহযোগিতায় রূপান্তরিত করার ইঙ্গিত দিয়েছেন।
তৃণমূল কংগ্রেস X (পূর্বে টুইটার)-এ পোস্ট করেছে যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বঙ্গের শিল্প বিকাশ এবং উদীয়মান সুযোগ নিয়ে গঠনমূলক আলোচনার জন্য এন চন্দ্রশেখরনের সঙ্গে কথা বলেছেন।
আলোচনার মূল বিষয় কী ছিল?
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং টাটা সন্সের চেয়ারপারসন এন চন্দ্রশেখরনের মধ্যে আলোচনা বঙ্গে বিনিয়োগের উপর কেন্দ্রীভূত ছিল। সিদ্ধান্ত হয়েছে যে বঙ্গে টাটা গ্রুপের উপস্থিতি আরও বাড়ানো হবে। টাটা গ্রুপ এখানে রাজ্যে বিনিয়োগ, উদ্ভাবন এবং সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বকে বৃদ্ধি করতে সরকারের সঙ্গে কাজ করবে। এছাড়াও টাটার মালিকানাধীন এয়ার ইন্ডিয়া শীঘ্রই কলকাতা থেকে ইউরোপের জন্য সরাসরি বিমান পরিষেবা শুরু করতে পারে।
বঙ্গ গ্লোবাল বিজনেস সামিট থেকে ইঙ্গিত
কয়েক মাস আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিজিবিএস (বঙ্গ গ্লোবাল বিজনেস সামিট)-এ বলেছিলেন যে আমি চন্দ্রশেখরনের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছি এবং তিনি বঙ্গে আসার ব্যাপারে উৎসাহী ছিলেন। আমি তাকে কলকাতা থেকে ইউরোপের জন্য বিমান পরিষেবা শুরু করতে বলেছি, তিনি না করেননি।
এটি কি অর্থনৈতিক সম্পর্কের নতুন সূচনা?
সিঙ্গুর আন্দোলনের কারণে রাজনৈতিক এবং কর্পোরেট সম্পর্কে যে তিক্ততা এসেছিল তা এখন সৌহার্দ্যে পরিণত হতে দেখা যাচ্ছে। এই সাক্ষাৎ প্রমাণ করে যে বঙ্গ সরকার এখন শিল্প বিকাশকে প্রাধান্য দিচ্ছে এবং টাটার মতো গ্রুপ এতে সম্ভাবনা দেখছে।