
WB Primary TET Recruitment Case: কলকাতা হাইকোর্টে খারিজ হয়ে গেল প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রাথমিকের ৩২ হাজার চাকরি বাতিলের মামলা। চাকরি বহাল রাখল কলকাতা হাইকোর্ট। যারফলে স্বস্তিতে প্রাথমিকের ৩২ হাজার চাকরি প্রার্থী। বুধবার এই মামলার চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করেন কলকাতা হাইকোর্টের দুই বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি ঋতব্রতকুমার মিত্রের ডিভিশন বেঞ্চ। ফলে আগের পুরনো রায় খারিজ হয়ে গেল আদালতে। কারণ, ২০২৩ সালের ১২ মে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ মামলার রায় ঘোষণা করেছিলেন কলকাতা হাই কোর্টের তৎকালীন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। সেই সময় প্যানেলে ভুল নিয়ে মামলা গড়ায় আদালতে।
এসএসসি-এর মতো প্রাথমিকের নিয়োগেও বিস্তর দুর্নীতির অভিযোগে ৩২ হাজার চাকরি বাতিল করেছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের তৎকালীন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করেই ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হয়েছিল রাজ্য ও প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ। দীর্ঘ শুনানির পর অবশেষে আজ রায় ঘোষণা করে হাইকোর্ট। কলকাতা হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে এসএসসি-তে ২৬০০০ চাকরি বাতিলের পর নতুন নিয়োগ নিয়েও যখন একের পর এক অভিযোগে মামলা চলছে হাইকোর্টে, সেই আবহে সবদিক থেকেই এই রায় যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ তাতে কোনও সন্দেহ নেই।
২০১৪ সালে প্রাথমিকে টেটের ভিত্তিতে ২০১৬ সালে ৪২ হাজার ৯৪৯ জন শিক্ষক নিয়োগ হয়েছিল রাজ্যে। সেই নিয়োগে বেনিয়মের অভিযোগ তুলে কলকাতা হাইকোর্টে দায়ের হয় মামলা। ৩২ হাজার অপ্রশিক্ষিত প্রার্থীকে নিয়োগ, সঠিক পদ্ধতিতে ইন্টারভিউ এবং অ্যাপ্টিটিউড টেস্ট না নিয়েই চাকরি দেওয়া-সহ একাধিক অনিয়ম হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। দীর্ঘ শুনানির পর ২০২৩ সালের ১২ মে কলকাতা হাইকোর্টের তৎকালীন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় প্রশিক্ষণহীন ৩২ হাজার শিক্ষকের চাকরি বাতিলের নির্দেশ দেন। তবে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় নির্দেশে এও বলেছিলেন, চাকরি বাতিল হলেও ওই শিক্ষকরা স্কুলে যাবেন। তিন মাসের মধ্যে রাজ্যকে নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় যোগ্য এবং উত্তীর্ণ প্রার্থীদের চাকরি বহাল থাকবে।
সিঙ্গেল বেঞ্চের সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হয় প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ এবং কর্মরত শিক্ষকদের একাংশ। তৎকালীন বিচারপতি সুব্রত তালুকদার এবং বিচারপতি সুপ্রতিম ভট্টাচার্য্যর ডিভিশন বেঞ্চ বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সিঙ্গেল বেঞ্চের চাকরি বাতিলের রায়ের উপর অন্তর্বর্তীকালীন স্থগিতাদেশ জারি করে। তবে সিঙ্গেল বেঞ্চের নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করার নির্দেশ বহাল রাখে ডিভিশন বেঞ্চ।
কলকাতা হাইকোর্টের দুই বেঞ্চের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে দারস্থ হয় রাজ্য, পর্ষদ এবং চাকরি হারাদের একাংশ। আবেদনকারী চাকরিহারারা সুপ্রিম কোর্টে জানায়, কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সিঙ্গেল বেঞ্চ সব পক্ষের বক্তব্য শোনেনি। শুনানিতে সব পক্ষকে বলার সুযোগ দেওয়া হয়নি। এরপর সুপ্রিম কোর্ট সব পক্ষের বক্তব্য শুনে কলকাতা হাইকোর্টকে নির্দেশ দিতে বলে।
সুপ্রিম কোর্ট থেকে মামলা ফেরত আসার পর গত ২৮ এপ্রিল থেকে বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি ঋতব্রত কুমার মিত্রর ডিভিশন বেঞ্চে টানা সাড়ে ছ'মাস ধরে চলে এই মামলার দীর্ঘ শুনানি। মামলাকারীদের অভিযোগ, এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে। নিয়োগ প্রক্রিয়ার নিয়ম মানা হয়নি। অন্য দিকে, রাজ্য সরকার এবং প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ আদালতে দাবি করে, নিয়োগে দুর্নীতির কোনও প্রমাণ নেই। কয়েকটি ক্ষেত্রে কিছু অনিয়ম হয়েছে। পরে তা সংশোধনও করে নেওয়া হয়েছে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থেকেই ব্যাপক দুর্নীতির মিথ্যে অভিযোগ করা হচ্ছে। সব পক্ষের বক্তব্য শোনার পর অবশেষে গত ১২ নভেম্বর ডিভিশন বেঞ্চে প্রাথমিকে ৩২ হাজার চাকরি বাতিলের মামলার চূড়ান্ত শুনানি শেষ হয়। আদালত রায়দান স্থগিত রেখেছিল। বুধবার সেই রায় ঘোষণা করল আদালত।
আরও খবরের জন্য চোখ রাখুন এশিয়ানেট নিউজ বাংলার হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে, ক্লিক করুন এখানে।