
পশ্চিমবঙ্গে 'আইনের শাসন' নয়, 'শাসকের আইন' চলেছে। পশ্চিমবঙ্গে ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়ে তাদের প্রতিবেদনে দ্যর্থহীন ভাষায় এই অভিযোগই করল জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের তদন্ত কমিটি। জীবন, স্বাধীনতা, মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপন এবং স্বাস্থ্যের মতো মানবিক এবং মৌলিক অধিকারগুলি লঙ্ঘিত হচ্ছে বঙ্গবাসীর। রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, প্রধান বিরোধী দলের সমর্থকরা প্রতিদিন ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকদের হিংসার শিকার হচ্ছেন। এর ফলে হাজার হাজার মানুষের জীবন-জীবিকা ব্যাহত হয়েছে। নির্যাতিতদের প্রতি রাজ্য সরকার ভয়াবহ উদাসীন। স্থানীয় পুলিশ কেউ কেউ এই হিংসার সঙ্গে জড়িত আর বাকিরা এই হিংসার মোকাবিলায় পুরোপুরি ব্যর্থ।
দীর্ঘ কয়েক মাসের তদন্তের পর জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের তদন্ত কমিটি জানিয়েছে, ভোটের পর থেকে এখনও পর্যন্ত হিংসা ও ভয় দেখানো চলছেই। পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের গুন্ডাদের ভয় পাচ্ছে সাধারণ মানুষ। বাস্তুচ্যুতরা এখনও তাদের ঘরে ফিরতে পারেনি। শুরু করতে পারেনি তাদের স্বাভাবিক জীবন ও জীবিকা। বেশ কয়েকটি যৌন অপরাধের ঘটনা ঘটেছে, কিন্তু ভুক্তভোগীরা মুখ খুলতে ভয়ে পান। রাজ্য প্রশাসনের প্রতি তারা বিশ্বাস হারিয়েছে। রাজ্য প্রশাসনেরও তাদের প্রতি কোনও সহানুভূতি নেই। না কোনও পদস্থ আধিকারিক, না কোনও রাজনৈতিক নেতা - কেউই হিংসার নিন্দা করেনি, জায়গাগুলি পরিদর্শন করেনি, নির্যাতিতদের আশ্বাস দেয়নি বা সমস্যাগুলি দূর করার জন্য কোনও কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি।
আরও পড়ুন - ভোট পরবর্তী হিংসা - গ্রেফতার ৩ শতাংশেরও কম, ডিআইজির পাঠানো রিপোর্টেই বেআব্রু বঙ্গ পুলিশ
আরও পড়ুন - ভোট পরবর্তী হিংসা - সবথেকে বেশি অভিযোগ কোচবিহারে, ৬০ শতাংশ ক্ষেত্রেই FIR করেনি পুলিশ
আরও পড়ুন - ভোট পরবর্তী হিংসায় তছনছ চোপড়া, পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে এল কেন্দ্রীয় মানবাধিকার কমিশন
এর পিছনে রাজনীতিক-আমলা-অপরাধী'র -এক অত্যন্ত ক্ষতিকারক জোট কাজ করছে বলে দাবি করা হয়েছে মানবাধিকার কমিশনেরর রিপোর্টে। তারা বলেছে, আইনের শাসন, রাজনৈতিক বহুত্ববাদ এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরাপদ ভোটদান-এর মতো গণতন্ত্রের স্তম্ভগুলিও এই বঙ্গের রাজনৈতিক হিংসার শিকার হয়েছে।
এই অবস্থায় কমিটি সুপারিশ করেছে, হত্যা, ধর্ষণ ইত্যাদির মতো গুরুতর অপরাধগুলির তদন্তের ভার সিবিআই-কে দেওয়ার জন্য। সেইসঙ্গে এই মামলাগুলির বিচার রাজ্যের বাইরে করা উচিত বলেও পরামর্শ দিয়েছে তারা। অন্যান্য মামলাগুলি আদালতের তদারকিতে বিশেষ তদন্তকারী দল গড়ে করতে হবে। আর মামলাগুলির বিচার করতে হবে ফাস্ট ট্র্যাক আদালতে। সাক্ষীদেরও নিরাপত্তা দিতে হবে। এছাড়া, কমিটি এই প্রতিবেদনে এক্স গ্র্যাটিয়া প্রদান, ক্ষতিপূরণ, পুনরুদ্ধার ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা, কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন, মহিলাদের আলাদা করে সুরক্ষা দেওয়া, দোষী সরকারী কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের মতো ব্যবস্থা নেওয়ারও সুপারিশ করছে।