
নির্বাচনের আগে তাঁদের গলায় ছিল অন্য়রকম সুর। তৃণমূলে থেকে কাজ করতে পারছেন না, দমবন্ধ হয়ে আসছে। তৃণমূল কংগ্রেস দল পিসি-ভাইপোর লিমিটেড কোম্পানি হয়ে গিয়েছে। নির্বাচনের ফল বের হওয়ার পর সুর বদলে গিয়েছে তাদের। নতুন দলেই শ্বাস নিতে পারছেন না। কেউ কেউ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই বলছেন অক্সিজেন। কেউ খোলাখুলি দলে ফেরারর আবেদন জানাচ্ছেন। আবার কেউ কেউ গোপনে যোগাযোগ রাখছেন তৃণমূল নেতৃত্বর সঙ্গে। শুক্রবার মুকুল রায়-এর প্রত্যাবর্তনের পর প্রশ্ন উঠে গিয়েছে, এই দলত্যাগীদের কতজনকে দলে ফেরাবে তৃণমূল কংগ্রেস?
বস্তুত, এর জবাব এদিন নিজে মুখেই দিয়ে দিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০১৭ সালে তৃণমূল থেকে প্রথম নেতা হিসাবে বিজেপির জাহাজে উঠেছিলেন মুকুল। তার হাত ধরে আরও অনেকেই যোগ দিয়েছিলেন বিজেপিতে। এবার মুকুলের ঘর ওয়াপসির পর একে একে কী তাদের সকলকেই ফিরিয়ে নেবেন মমতা? উত্তরটা হল না। ২০১১ বিধানসভা নির্বাচনে পরিবর্তনের ভোটের পর তৃণমূলের হয়ে কংগ্রেস ও বাম দলের নেতাদের ভাঙিয়ে আনতেন মুকুল রায়। ঝাড়া-বাছার বিষয় ছিল না। দ্বার ছিল অবারিত।
এবার কিন্তু, পরিস্থিতি অনেকটাই আলাদা। আগের থেকে অনেক সতর্ক হয়ে পা ফেলছেন তৃণমূল নেত্রী। তবে, দলত্যাগীদের কারোর কারোর যে ঘরে ফেরা নিশ্চিত, তা এদিন ঠারে ঠারে বুঝিয়ে দিয়েছেন মমতা। তিনি জানিয়েছেন মুকুলের হাত ধরে অনেকে দল ছেড়ে চলে গিয়েছিল। এবার তাঁরা ফিরে আসবেন বলেই আশা করছেন তৃণমূল নেত্রী এবং স্বয়ং মুকুল রায়। তবে মমতা একইসঙ্গে বলেছেন গদ্দার দুই রকম আছে, চরমপন্থী এবং নরমপন্থী।
চরমপন্থী গদ্দার কারা? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, যাঁরা ভোটের আগে দলকে বিপদে ফেলে বিজেপিতে গিয়েছিলেন এবং ভোটের সময় বিজেপির সুবিধা করার জন্য দলের বিরুদ্ধে কুৎসা করেছেন, তাঁরাই হলেন চরমপন্থী গদ্দার। এঁদের আর দলে ফেরানো হবে না বলেই তৃণমূল দল সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছেন নেত্রী।
আরও পড়ুন - প্রত্যাবর্তনের দিন মুকুল রায়কে 'গরু'র সঙ্গে তুলনা, ফের বোমা ফাটালেন বীরভূমের কেষ্ট
আরও পড়ুন - ৩ বছর ৯ মাস পর ফের মুখোমুখি দিদি ও তার পুরোনো সেনাপতি, শুরুতেই কী বললেন মুকুল
আরও পড়ুন - 'বেচারা' থেকে 'ঘর ওয়াপসি' - ফের ঘাসফুলে ফুটল মুকুল, আড়াই মাসে কীভাবে বদলালো ঘটনাক্রম
আর নরমপন্থী গদ্দার হল, যারা কোনও কারণে অভিমান করে বা ভুল বোঝাবুঝিতে দল ছেড়ে গিয়েচেন, কিনতু, ভোটের সময় নেত্রী বা দলের বিরুদ্ধে কোনও কুৎসা করেননি, তারা। এদেরকে দলে ফিরিয়ে নেওয়া হবে। এদের মধ্যে প্রথম নামটা ছিল মুকুল রায়ের। ভোটের সময় নেত্রী বা দলের বিরুদ্ধে একটি কথাও বলেননি মকুল, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে তা আলাদা করে জানিয়েছেন।
তবে, তাঁর বা দলের চোখে ঠিক কারা চরমপন্থী আর কারা নরমপন্থী গদ্দার, তা মমতা পরিষ্কার করেননি। তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অক্সিজেন বলা সোনালী গুহ, কিংবা বাচ্চু হাঁসদাদের ভবিষ্যত এখনও সুতোর উপর ঝুলছে।