আর কোনওভাবেই দুর্নীতিকে প্রশ্রয় নয়। লোকসভা নির্বাচন থেকে শিক্ষা নিয়ে দলীয় কাউন্সিলরদের এই বার্তাই দিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গরিব মানুষের থেকে কোনও টাকা নিয়ে থাকলে তাও ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। একই সঙ্গে তিনি আবারও দলীয় কাউন্সলিরদের জানিয়ে দিলেন, যাঁরা বিজেপি-তে যাওয়ার তাঁরা যেন এখনই চলে যান। শুধু তাই নয়, দুর্নীতি আটকাতে এবার টিকিট বন্টন পদ্ধতিতেও বদল আনার সিদ্ধান্ত নিলেন তৃণমূল নেত্রী।
বিজেপি-র সমালোচনা করলেও দলের কিছু কাউন্সিলরের ভূমিকাতেই যে তিনি খুশি নন, তা এ দিন প্রকাশ্য সভাতেই জানিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। ২০২০- তে রাজ্যে পুরসভা নির্বাচন। তার আগে এ দিন নজরুল মঞ্চে দলীয় কাউন্সিলরদের উদ্দেশে মমতা বলেন, 'কাউন্সিলরদের কাজ মানুষের সঙ্গে থেকে কাজ করা। ভাল কাজ না করলে সুনাম নষ্ট হয়।'
মমতার অভিযোগ অনেক কাউন্সিলরই এলাকায় জল আছে কি না, আবর্জনা পরিষ্কার হচ্ছে কি না, সেই খবরও বহু কাউন্সিলর রাখছেন না বলেও এ দিন অভিযোগ করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, 'আর পাঁচটা পেশার মতো রাজনীতিটাও মহত পেশা। যাঁরা ভাল কাজ করেন, তাঁরা জীবনে কোনওদিন হারেন না।'
দলত্যাগী নেতাদের দিকে ইঙ্গিত করে মমতার অভিযোগ, সরকারি প্রকল্পের টাকা হাতিয়ে অনেকেই বিজেপি-তে যাচ্ছেন। দলের মধ্যে বাকি যাঁরা রয়েছেন, তাঁরা কেউ দুর্নীতি করলেও যে তিনি বরদাস্ত করবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর সাফ কথা, সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে কেউ যদি টাকা নিয়েও থাকেন, অবিলম্বে তা ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। যাঁরা টাকা নিয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধেও তদন্ত করার জন্য পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
দলে ভাঙন নিয়ে যে তিনি ভাবিত নন, এ দিনও তা স্পষ্ট করেছেন তৃণমূল নেত্রী। উল্টে তাঁর আর্জি, যাঁরা দল ছাড়তে চান, তাঁরা এখনই ছাড়ুন। তিনি বলেন, 'তৃণমূল দুর্বল দল নয়। ১৫- ২০ জন কাউন্সিলর চলে গেলে আমার কিছু যায় আসে না। আমি নতুনদের টিকিট দেব। তবে যাঁরা চলে যাবেন তাঁরা পায়ে ধরে ফেরত আসতে চাইলেও যেন দলে নেওয়া না হয়।' তবে দলের পুরনো কর্মী বা নেতারা ফিরতে চাইলে তাঁদের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে বলেও জানিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী।
নির্বাচনে টিকিট দেওয়া নিয়েও যে দলের জেলা স্তরের নেতারা দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন, তাও এ দিন কার্যত স্বীকার করে নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর অভিযোগ, পুরসভা, পঞ্চায়েতে টিকিট পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে প্রার্থীদের থেকে মোটা টাকা নিচ্ছেন জেলার কোনও কোনও নেতা। আগামী পুর নির্বাচনে তাই আর জেলার নেতাদের সুপারিশে কোনও টিকিট দেওয়া হবে না বলেও দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সিকে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। যোগ্যতার বিচারে পুরনো কাউন্সিলরদের পাশাপাশি নতুনদের টিকিট দেওয়ার পক্ষেও সুপারিশ করেছেন তিনি।